দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় বাড়ি-মন্দির ভাঙচুর-লুটপাট

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭-৫-২০২৪ বিকাল ৭:৭

214Views

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাড্যা ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৩নং হোল্ডিংয়ের 'মা দুর্গা নিকেতন' নামের একটি বাড়ি এবং বাড়ির সংলগ্ন মন্দিরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দলিল লেখক সমীর ঘোষের ভাই প্রসেঞ্জিত ঘোষ হাতে গুরুতর জখম এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য আহত হন।
জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে গত ১৫ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও বাঁশ-লাঠি নিয়ে একই এলাকার বাসিন্দা জমির দালাল বিপুল মজুমদারের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে জানা গেছে। বিপুল মজুমদার নিজে সনাতন ধর্মাবলম্বী হলেও ভাঙচুরে তার হাত থেকে বাড়ি সংলগ্ন মন্দিরটিও রক্ষা পায়নি। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ঘটনা চলাকালীন বারবার জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সহায়তা চাইলে প্রথমে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার এবং পরে একজন এসআই মুঠোফোনে আসছি/আসব/ব্যস্ত বলে শুধু কালক্ষেপণ করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, ঘটনার শেষ অব্দি কোন পুলিশ সদস্য রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি। প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একই এলাকার জমির দালাল বিপুল মজুমদার পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাইরের এলাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে ভরত, অনিক ও সজিবের সহযোগিতায় দলিল লেখক সমীর ঘোষের বাড়িতে আকস্মিক হামলা চালায় এবং বাড়ি ও বাড়ি সংলগ্ন মন্দির ভাঙচুর করে। শত্রুতার সূত্রপাত হয় সমীর ঘোষের ক্রয়কৃত একটি জমির সূত্র ধরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিপুল মজুমদারের পিতা হরিপাল মজুমদার ১৯৬২ সালে একটি জমি বিক্রি করেন। পরে ১৯৯৫ সালে খুরশিদ চেয়ারম্যানের ফুপু সেই লোকের কাছ হতে জমিটি ক্রয় করেন। সর্বশেষ খোরশেদ চেয়ারম্যানের ফুপুর কাছ থেকে জায়গাটি ক্রয় করেন দলিল লেখক সমীর ঘোষ। এরপর থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে সমীর ঘোষের ক্রয়কৃত জমিতে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেন বিপুল মজুমদার। এমনকি সমীর ঘোষের নিকট ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বিপুল। তার চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পেতে এবং ক্রয়কৃত জমির মালিকানা প্রাপ্তির আশায় ২০২২ সালে কেরানীগঞ্জ থানায় বিপুল মজুমদারের নামে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করা হয়। বিপুল মজুমদার জমিটিতে আদালত মারফত ইনজেকশন জারি করার আবেদন করলে আদালত সেটি নামঞ্জুর করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এ ঘটনার পর থেকেই সমীর ঘোষের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে বিপুল মজুমদার। আরও জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে সমীর ঘোষ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উত্তক্ত করতে থাকে বিপুল মজুমদার। গত ১৫ মে রাতে  অনিক মজুমদার উচ্চস্বরে স্পিকারে গান বাজিয়ে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে। অনেকক্ষণ পর সহ্য করতে না পেরে সমীর ঘোষ অনিককে সাউন্ড (অস্বাভাবিক শব্দদূষণ) কমানোর জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ করেন এবং কথা না বাড়িয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বিপুল, ভরত, অনিক ও সজিবসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন সমীর ঘোষের  বাড়ি এবং মন্দিরে হামলা করে ভাঙচুর-লুটপাট করে।
এসময় সন্ত্রাসীরা নগদ ২ লাখ টাকা এবং দেড় ভরি স্বর্ণ  লুটপাট করে নিয়ে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার জনসাধারণ তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন এবং অতিসত্বর অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন