আমরা মরার জন্য খাই
প্রকাশিত: ১০-৫-২০২৪ দুপুর ২:৪৯
বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি জীবকেই খাবার গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে সহজেই উপলব্ধি করা যায় মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন্যই খায় না। মরার জন্য বা অন্যকে মারার জন্যও খায়। কিন্তু দুুঃখের বিষয় যিনি খান তিনি এই কঠিন সত্যটি জানেন না বা মানেন না। এমন কি বুঝার চেষ্টাও করেন না। আবার কেউ বুঝাতে চাইলেও তিনি মহাজ্ঞানীর মতো অন্যকোন বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে নিজে বিজয়ের হাসি হাসেন।
মরার জন্য বা মারার জন্য খাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশ পাওয়া যাবে শিক্ষিত, ক্ষমতাধর, বা কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম। যারা চাইলে ওইসব কুখাদ্য না খেয়ে কোটি কোটি মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে পারতেন খুব সহজেই।এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে কিভাবে এটা সম্ভব? হ্যাঁ এটাই সম্ভব। আসুন তাহলে আগে জেনে নেই আমরা কি খাই। মানুষ সাধারণত ভাত, মাছ তরিতরকারি, পানি, আলো বাতাস ও ঔষধ গ্রহণ করে থাকে বাঁচার জন্য। কিন্তু আমরা এর বাইরেও অনেক কিছু খাই। এই ধরুন পাহাড়, নদী, সাগর মহাসাগর খাই, বনের গাছ, সরকারি রাস্তা, ফুটপাত, জলাশয়, অন্যের জমি, অন্যের টাকা, ভেজাল খাবার, সুদ, সর্বোপরি ঘুষ খাই।
সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা খাই, সেটা হচ্ছে ঘুষ। একটা মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকার জন্য যে খাবার প্রয়োজন তার চেয়ে কয়েকশ গুন বেশি ঘুষ খায়। আবার তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির ক্ষমতার উপর। যে যত ক্ষমতাবান, তার ঘুষের পরিমানটাও ততবেশি হয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষ তা হাজার গুনও হয়ে যায়। আর সমাজ বা দেশ ধ্বংস বা মানুষ মারার জন্য এই খাবারিটিই সবচেয়ে বেশি দায়ি। এই একটা জিনিষ খাওয়া বন্ধ করতে পারলে অন্যান্য অখাদ্য খাওয়া শুন্যের কোটায় নেমে আসা খুবই সহজ হবে।
”ঘুষ” শব্দটা আছে বলেই কথিত মানুষগুলো অমানুষের মতো নানা অনিয়ম অপকর্মে জড়িয়ে জীবিত বা মৃত মানুষ চিবিয়ে খায়। ময়লা আবর্জনা খায়, সমাজ খায় সর্বোপরি দেশ ও জাতির ভবিষ্যত খায়। ”ঘুষ” শব্দটা আছে বলেই মেধা মূল্যহীন, তেলবাজের কদর সর্বাঙ্গীন। গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলো অযোগ্যদের দখলে। সমাজের ভালো মানুষগুলো অসহায় আর বীরদর্পে চলে দুর্নীতিবাজদের রাজত্ব।
ধরুন কেউ একজন পাহাড় দখল করে নির্বিচারে কাটছে, প্রয়োজনে কাটছে আবার বিলাসিতার জন্য কাটছে। কেউ সরকারি নালা, রাস্তা ঘাট, নদী সাগর দখল করে যথেচ্ছা ব্যবহার করছে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে। এসবের ফলে যে আমরা ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তা কেউ চিন্তা করছে না। এগুলো দেখবালের দায়িত্বে যারা আছেন তারা জেনেও না জানার ভান করে পরিবেশ সাবার করে দিচ্ছে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পৃথিবী। তা এমনি এমনি হয়নি। ঘুষ খাওয়ার প্রচলন আছে বলেই তা হতে পারছে। মাজে মাঝে ২/১ টা অভিযান চালালেও বেশিরভাগ অপরাধী অধরা থেকে যাচ্ছে। বনের গাছ পাচার করে উজার করছে বন। যতটুকু বাঁধা দেয়ার দরকার ততটুকু বাঁধা দেয়া হচ্ছে না। রাস্তায় হাজার হাজর মোটর গাড়ি চলছে, যা কাগজপত্র থাকার দরকার তা নেই, আবার কোনটাতে একেবারেই নেই অথচ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। সরকারি জমি প্রভাবশালীরা দখল করে খাচ্ছে, আইন থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না বা করছে না। একজনের জমি অন্যজনের দখলে এসব নিয়ে হরহামেশাই মারামাির, আইন আদালত চলছে, আদালতের দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বেগ পেতে হচ্ছে।
আজকে দেখেন গরমের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। হিটস্ট্রোকে রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এর তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শীতকালে শীত নেই, অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে আমরা হাফিয়ে উঠেছি রীতিমত। এই অবস্থা আস্তে আস্তে আরো বাড়বে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে রাস্তায় পড়ে মারা যাবে লোকজন, চিকিৎসা করানোরও সময় বা সুযোগ পাবেনা। তাই এই পৃথিবী বাসযোগ্য করতে হলে এখনি অখাদ্য কুখাদ্য খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আপনি যার জন্য সম্পদ আহড়ণ করছেন একদিন দেখবেন আপনার সেই আদরের সন্তান বিনা চিকিৎসায় রাস্তায় লাশ হয়ে পড়ে আছে।
খাদ্যে ভেজাল করা বর্তমানে একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে, প্রতিযোগীতা দিয়ে ভেজাল করছে। যিনি ভেজাল করছে তিনিও ভেজাল খাচ্ছে। এর ফলে মানুষ ক্রমাগত অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক দশকে এদেশে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য ইনস্টিটিউটের একটি জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের শতকরা ৬৩ ভাগ অপুষ্টির জন্য অপার্যপ্ত খাদ্যাভ্যাস ও ভেজাল খাদ্য গ্রহণ দায়ী। ২০০৩ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়, পূর্ববতী দশকের প্রায় ৫০% খাদ্য সামগ্রীই ভেজালপূর্ণ যা ঢাকার জনস্বাস্থ্য বিভাগ (আইপিএইচ) দ্বারা পরিচালিত ছিল। একইভাবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত গৃহীত প্রায় অর্ধেকের বেশি খাদ্যসামগ্রীই ভেজালপূর্ণ। এ সরকারি পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, বিগত ১০ বছরে এদেশে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেজাল খাদ্যে নানাবিধ প্রাণঘাতী প্রভাব রয়েছে। জাতীয় টাস্কফোর্স (এনটিএফএস)-এর মতে, ভেজাল খাদ্যসামগ্রী প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগসহ ডায়রিয়া ও অপুষ্টির জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত, যা শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী। বেশিরভাগ ভেজাল খাদ্য কঠিন ও জটিল রোগের জন্য দায়ী। সম্প্রতি সময়ে এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার শিশু মৃত্যুর এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে যাতে প্রতি ১৯ জন শিশুর অন্তত ১ জন শিশু ৫ বছরের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থ্যা সমূহকে যে কোনো মূল্যে আরো শক্তিশালী ও বেগবান হওয়া আবশ্যক।
ঠিকাদারি কাজে কমিশন বাণিজ্য এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ঘুষের পরিমান নির্ধারিত করা আছে শতাংশ হিসেবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক দফতরে কমিশন বাণিজ্য চলমান। পরিমান সামান্য এদিক সেদিক হলেও কমিশন ছাড়া কাছ করাটা দুঃস্বপ্ন। আর সেই কমিশনের টাকা দিতে গিয়ে ঠিকাদাররা কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পুনরায় সরকারি টাকা খরচ করে তা মেরামত করতে হচ্ছে। এভাবে একটি চক্র সরকারি অর্থ অপচয় করছে দিনের পর দিন।
এতোকিছু করে আমরা কথিত মানুষেরা সাময়িক কিছু কালো অর্থ আয় করতে পারলেও দিনের শেষে না আমরা ভালো করে বাঁচতে পারছি, না পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য এশটি পৃথিবী রেখে যেতে পারছি। এখন দেখা যাক এসব অপরাধের সাথে কারা জড়িত? এসব অপরাধের সাথে কারা জড়িত তা জানার জন্য আপনাকে দার্শনিক হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র চোখ কান খোলা রাখলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। যারা কোন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারি, যাদের কাছে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তিদের গাফিলতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে অপরাধের মাত্র বাড়ছে ক্রমাগত। যারা দমন করার কথা তারা যখন রহস্যজনক কারনে নিরব থাকেন তখনি সমাজে ভালো মানুষ বা ভালো খুঁজে বের করার জন্য অনুবিক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। আবার দায়িত্বশীলরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে অনুবিক্ষন কেন কোন যন্ত্র দিয়েও অপরাধ খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এখন দেখুন এসবের নিয়ন্ত্রক কারা, এরা সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, কিন্তু তাদের শিক্ষা সমাজের কোন ভালো কাজে ব্যবহার হচ্ছে না। আর শিক্ষতরা যদি সমাজকে পরিষ্কার করতে চান তাহলে ২৪ ঘন্টায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। সমাজে একটাও অপরাধ থাকবে না।
ফ্রান্সের বিখ্যাত সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বলেছিলেন," তুমি যদি একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিবো। তিন এটা কেনো বলেছিলেন, তিনি জানতেন একজন প্রকৃত শিক্ষত ব্যক্তি কখনোই কারো খারাপ চাইবেন না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। তিনি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচতন ছিলেন। তিনি বিশ্বা করতেন যে, শিক্ষাই জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। আমরাও এটা বিশ্বাস করি তবে শিক্ষাটা শুধু একাডেমিক নয়। পারবারিকও হোক। অনিয়ম দুর্নীতি নির্মূলে হাতিয়ার হোক শিক্ষা।
আইনকে বলা হয় অন্ধ, কারন আইনের প্রয়োগ যাতে সঠিক হয়, ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে মুখ দেখে আলাদা সহজ বিচার পদ্ধতি বা কারো উপর অবিচার না করাই হচ্ছে এর মুল লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবতার দিকে তাকালে মনে হবে অন্যায় বা অপকর্ম যাতে না দেখে সেজন্যই আইনকে অন্ধ বলা হয়। আমরা যদি একটু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে নজর দেই তাহলে খুব সহজেই চিত্রটি চোখে পড়বে। কিন্তু সাধারণের চোখে পড়লেও তাতে কি এসে যায়। যারা আইনকে পরিচালিত করেন বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন তারা কি বিষয়গুলো দেখেননা? না কি না দেখার ভান ধরে থাকেন ? নাকি তারা আইনকে প্রতিবন্ধী বানাতে চান তা বুঝাই মুশকিল।
যদি প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বপুর্ণ বিষয় পাহাড়ের দিকে নজর দেওয়া যায়, তাহলে সহজেই উপলদ্ধি করা যায় আইন প্রয়োকরীরা কতটা দায়িত্ব পালন করছে। দিনের আলোতে বা রাতের আধাঁরে মহা সমারোহে পাহাড় ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেছে একশেণির প্রভাবশালী মহল। মাঝে মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন অভিযান করলেও সামান্য জরিমানা আদায় করেই ক্ষান্ত হয়ে যান। এতে করে পাহাড় দস্যুরা ওই কাটা পাহাড়ের অংশকে তাদের মালিকানা বলে মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে পাহাড় কাটা রোধে ১০ বছরের জেল দেওয়ার আইন থাকলেও বাংলাদেশে এই আইনে কেউ সাজা ভোগ করেছে এমন নজির নেই।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল আমার এক প্রতিবদনের বক্তব্যে বলেছিলেন, "আইনের ফাঁকে অনেক পাহাড় সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যায় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামন্য জরিমানাতেই অভিযোগের সমাপ্তি ঘটে। এসব পাহাড় দস্যুদের সাথে অনেক সরকারি কর্মকর্তারও যোগসাজস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন পাহাড় কর্তনকারীর সাথে সহায়তাকারীদেরও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনা গেলে পাহাড় কাটা কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরিবেশ আইনে জরিমানা ছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে মামলা করা যায়। পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও এমন শাস্তি কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এখন প্রশ্ন হলো পাহাড় কাটছেন কারা পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় চট্টগ্রামের বড় শিল্পগ্রুপের মালিকেরা পাহাড় ধ্বংস করছে আর পরিবেশ অধিদপ্তর সামান্য জরিমানা করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলা, শহরের দেবপাহাড়, বায়েজীদে ছিন্নমুল, লিংক রোড, লালখানবাজার মতিঝর্ণা, বাটালি পাহাড়, খুলশী, ফয়েস লেক, সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা। আবার সরকারি এসব সম্পদ প্লট করে দখল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এসব অপকর্মের শাস্তি না হওয়ায় দিনকে দিন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে পাহাড় ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেছে।
পাহাড় কাটা বা ধ্বংস করার খেলা আমাদের নতুন কোন বিষয় নয় যুগযুগ ধরেই এটি চলছে। মনে হয় এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আইনে এর বৈধতা আছে তাই মানুষ অল্প ভাড়ায় বাসা নিয়ে সেখানে বসবাসের দিকে ঝুকছে। আর দখলকারীরা ভালমন্দ বিবেচনা না করে কোনমতে একটি ঘর তৈরি করে ভাড়ায় লাগাচ্ছে। এসবে সরকারি দায়িত্বশীলদের কখনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি যতক্ষণনা প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। আবার লাশের মিছিল দেখে কিছুদিন একটু সরব হলেও ধীরে ধীরে তারা আবার ঝিমিয়ে পড়ে।
২০২২ সালের ১৭ জুন দিবাগত রাতে পাহাড় ধসে ৪ জন নিহত হওয়ার পর নড়েচরে বসেছে জেলা প্রশাসন, শুরু করেছে উচ্ছেদ অভিযান কিন্তু এরআগেওতো একই পথে শতশত লোকের প্রানহানি ঘটেছে সেখান থেকে কেন শিক্ষা নেওয়া হয়নি? এর আগে ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবু বাগান, বায়েজিদ বোস্তামি, মতিঝর্ণা পাহাড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় নিহত হন ১২৭ জন।২০১৭ সালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে ১৩২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন চার সেনা সদস্য।
২০১৫ সালে লালখান বাজার ও বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল চাপায় এবং পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ছয় জনের করুণ মৃত্যু ঘটে। ২০১৪ সালের নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে খুলশী থানাধীন ইস্পাহানি মোড় এলাকায় পাহাড় ধসে এক গৃহবধূ মারা যান। একই বছর ২৯ জুলাই নগরীর লালখান বাজার এলাকার ট্যাংকির পাহাড় এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে। ২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর চার স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১১ সালে চট্রগ্রাম নগরীর টাইগারপাসের বড় বাটালি হিল এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপায় একই পরিবারের ৫ জন সহ ১৫ জন মারা যান। ২০০৮ সালের ১৮ আগষ্ট লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার ট্যাঙ্কির পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়।
শুধু তাই নয়, একইভাবে জবর দখলে আছে, নালা, খাল,ফুটপাত, সরকারি বিভন্ন দফতরের হাজার হাজার একর জমি যা উদ্ধারে কার্যকর কোন ব্যবস্থা দেখছিনা। এমনকি বর্তমানে সাগর দখলেও প্রতিযোগিতা চলছে। এসব বিষয়গুলো রক্ষার জন্য আমাদের আরো সচেতন ও আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়া উচিত। তাহলে আমরা বাঁচব ভালোভাবে আর বাঁচবে সবাই।
এসব দুর্ঘটনার পর ঝুঁকিপুর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারিদের তালিকা করেছিল জেলা প্রশাসন। তালিকা অনুযায়ী স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারনে তা এখনো অনেকটা ঝিমিয়ে আছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। এতে ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত হয়, আহত হয় ১১ হাজার ৪০৭ জন। মোট নিহতের ১৭ শতাংশের বেশি শিশু। গত বছর দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা এর আগের (২০২২) বছরের চেয়ে বাড়লেও কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা। অদক্ষ চালক, লক্কর ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় চালানো আইন না মানার প্রবণতা ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর তায়িত্বে অবহেলা বা ঘুষ প্রবণতাই অনেকটা দায়ি বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিশেষে বলব, আমরা যা-ই খাই না কেন, তা যেন হয় বেঁচে থাকার জন্য বাঁচিয়ে রাখার জন্য। সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে আমাদের প্রতিটি খাবারই হবে স্বাস্থ্যসম্মত। আর আইন না মানার প্রবণতা হ্রাস করতে না পারলে প্রতিটি খাবারই হবে বিষ বা অখাদ্য। যা খেয়ে আমরা অনায়াসেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাব নিশ্চিত। দেখেশুনে দেশ ও জাতির স্বার্থে হোক আমাদের কর্মযজ্ঞ।
লেখক: সভাপতি রেলওয়ে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।