ভেঙে গেছে ‘লালন’, ভাঙছে ব্যক্তিগত সম্পর্কও!
প্রকাশিত: ৮-৫-২০২৪ দুপুর ৪:১০
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলগুলোর একটি লালন। ২০০১ সালে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডের দলনেতা ও ড্রামার থেইন হান মং তিতি। সম্প্রতি দীর্ঘ পথচলার ইতি টেনেছেন তিনি। ভোকালিস্ট নিগার সুলতানা সুমির সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিতি।
বলা দরকার- ব্যান্ডের বাইরেও ব্যান্ড লালনের ভোকালিস্ট সুমির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে রয়েছেন তিতি। যে কারণে ব্যান্ড ছাড়ার ঘটনায় তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা উঠছে সংগীতাঙ্গনে। অনেকের মতে- সংসার জীবনে ভালো নেই ব্যান্ডের এই দুই তারকা!
তবে তিতি জানান, ব্যান্ড আর সম্পর্ক দুটি আলাদা বিষয়। তবে কিছুটা প্রভাব যে ব্যক্তিজীবনে পড়েনি, যা অস্বীকার করছেন না তিনি।তিতি কথায়, ‘সুমির জীবনদর্শনের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক অবস্থানের কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি। হয়তো এর প্রভাব পারিবারিক জীবনেও কিছুটা পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ যখন মুক্তি চায়, তখন তাকে মুক্তি দিতে হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, সুমি আমার সঙ্গে ব্যান্ড করতে চায় না। এ বিষয়টা যখনই মনে হয়েছে, তখনই আমি ব্যান্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। সমস্যা যেহেতু আমাকে নিয়ে, তাই আমিই ছেড়ে এসেছি। আসলে কোভিড মহামারির সময়ে আমাদের সংগীতাঙ্গন ও ব্যক্তিজীবনে যে অস্থিরতা নেমে এসেছিল, এটা হয়তো তারই একটা ফল। কেউ স্থির নয়! যদি পারিবারিক জীবনেও কিছু হয়, তবে এখানেও আমি কিছুই বলব না। কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যান্ডের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো একদিনের নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই এমনটা চলছিল। তবে তা প্রকট আকার ধারণ করে গেল পাঁচ-ছয় মাসে। ব্যান্ডের সব ব্যবস্থাপনা তিতির হাতেই হতো। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় শো বুকিংয়ের পর তা বাতিল করতেন সুমি। তার স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়নি ব্যান্ড লালন। এতে শো আয়োজকদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয় তিতির।
শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুমির জীবনদর্শনেও পরিবর্তন দেখেন তিতি। এটি তাকে আরও হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন, ফকির লালন সাঁইয়ের দর্শনে বিশ্বাসী ব্যান্ডটির কাছে অর্থ কখনও বড় হয়ে উঠবে না। তারকাখ্যাতি ও অহমিকা সুমিকে কখনও স্পর্শ করবে না।
তিতির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে ভুল ভেঙেছে- তারকাখ্যাতি, অহংকার, লোভ ঘিরে ধরেছে সুমিকে! ফকির লালনের সঙ্গে লোভ যায় না। আমরা যেহেতু তার জীবনদর্শনে বিশ্বাসী, তাই আমাদের অনেক কিছুই হিসাব করতে হয়। আমাদের জিহ্বায় যদি লোভ জন্মায়, তাহলে আমরা কেন তার গান করছি? দেখেন, সুমি আমাদের জাতীয় সম্পদ। তার মতো গলা খুবই দুষ্প্রাপ্য। তার কাছে সব সময় গাড়ি, বাড়ির অফার আসত। আর যেহেতু সে মিউজিক করে অন্যদের মতো সম্পদের মালিক হতে পারেনি, তাই তার মধ্যে বিষয়গুলো কাজ করছিল। আসলে শেষ কয়েক বছর তার মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো ভর করে। এগুলো কেউ তাকে বুঝিয়েছে কিনা তাও আমার জানা নেই।’
সর্বশেষ গত ৯ মার্চ খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসার্টে অংশ নেয় লালন। সেখানে একা নিজের ব্যবস্থাপনায় শোতে অংশ নেন তিতি। ছিলেন আলাদা হোটেলে। এর আগে, সিলেটের একটি শো শেষে গাড়িতে করে ঢাকায় ফেরার পথে সুমির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বাগবিতণ্ডা হয় তিতির। এ সময় ব্যান্ডের অন্য সদস্যরাও ছিলেন।
তিতি জানান, সুমি তাকে ব্যান্ডের বিভিন্ন বিষয়ে দোষারোপ করেন। এমনকি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তোলেন। একপর্যায়ে নরসিংদীতে গাড়ি থেকে নেমে যান তিতি। সেখান থেকে ভাড়া করা মোটরবাইকে ঢাকায় ফেরেন তিনি। এরপর গেল ১০ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি শো ছিল। সবকিছু চূড়ান্ত থাকার পরও সুমি তার একক সিদ্ধান্তে সেটি বাতিল করেন। মূলত এরপরই ব্যান্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিতি।
লালনের এই দলনেতা ও ড্রামার জানান, সুমি ও তার এই সম্পর্কের জটিলতার কারণে যেন ব্যান্ডের কোনো ক্ষতি না হয়। প্রয়োজনে নতুন একজন ড্রামার নিয়ে হলেও যেন ব্যান্ডটি চলে। সমস্যা যেহেতু তাকে নিয়েই, এজন্য তিনি নিজেই সরে গেছেন।
তবে ব্যান্ডে ভাঙন ও এসব অভিযোগের ব্যাপারে সুমির বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে গ্রামের বাড়ি খুলনাতে মায়ের সঙ্গেই আছেন সুমি।
উল্লেখ্য, সুমি আর তিতির পরিচয় গানের মাধ্যমেই। তারপর তারা একসঙ্গে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল লালন। একপর্যায়ে ভালোলাগা থেকে তাদের সম্পর্ক গড়ায় ভালোবাসায়। বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দুজনে।