প্রাণ হারানো প্রাণ সায়ের খালের বিষাক্ত পানিতে মশাদের রাজত্ব
প্রকাশিত: ২০-৩-২০২৪ দুপুর ৩:৫
সাতক্ষীরা সদরের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া পানি নিষ্কাসনের একমাত্র মাধ্যম প্রাণ সায়ের খালটি। এখন যৌবন হারিয়ে শহরের সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব হিসেবে বর্তমানে মশা উৎপাদনের কারখানায় রুপ নিয়েছে। অথচ এক সময়ের প্রবাহমান খালটি কয়েক লাখ মানুষের আশীর্বাদ হয়ে নজর কেড়েছিল । তবে সময়ের পরিক্রমায় ও স্থানীয় কিছু অসচেতন মহলের হিংস্রো থাবায় সেই খালটি আজ তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। খালটিতে ফেলা হচ্ছে ইচ্ছা মতো ময়লা-আবর্জনা। ফলে দখল আর দূষণে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে দেশের মানচিত্র থেকে বিলীন হতে চলছ। তাপরও দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পচা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার তাগিদে নাক চেপে কোনরকমে খাল পাড়ের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীদের ।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাণ সায়ের খালের পাশ দিয়ে যেসব স্থায়ী, অস্থায়ী দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সে সব দোকানসহ আশপাশের উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা হরহামেশাই ফেলা হচ্ছে এই খাল বক্ষে । ফলে এসব ময়লা-আবর্জনায় খালের পানি পচে কালো বর্ণের হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাছাড়া প্রাণহীন প্রাণ সায়ের খালটি মশা উৎপাদনের কারখানায় রুপ নেওয়ায় শহর বাসীকে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদী পথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন। তৎকালীন তীব্র খরস্রোতা মরিচ্চাপ নদীর সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য। সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করে সংযোগ করে দেওয়া হয়। যা সাতক্ষীরার সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতা সহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে নদী পথে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খালটি। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণ সায়ের খাল।খাল পাড়ের রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা পথচারী স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক আমিনুর রশিদ( ৭৫) বলেন, প্রতিদিন খালপাড়ের এ সড়ক দিয়ে শতশত মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন এবং গাড়ি করে তাদের গন্তব্যে যান।কিন্তু প্রচন্ড দুর্গন্ধে তাদের নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। খালের আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও বড় বাজারের ব্যবসায়ী সহ ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ময়লা ও আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। এতে সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশ অনেক দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে খালটি এখন ভারসাম্য হারিয়ে জন ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলাশপোল এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান-প্রাণ সায়ের খালকে যারা ভাগাড়ে পরিণত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সেজন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে না। গণমাধ্যমকর্মী মেহেদী হাসান শিমুল জানান, গত কয়েক দশক ধরে এ খালটির অব্যহত দখল-দুষনে বর্তমানে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে।এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে খালটি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাসন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে শহরবাসী বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ার পাশাপাশি সাতক্ষীরা শহরে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। সর্বোপরি সচেতন এলাকাবাসী অবিলম্বে জনস্বার্থ বিদ্যমান প্রাণ সায়ের খালটি রক্ষা করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। দেশের উন্নয়নের কারিগর জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।