রাজা বিরাটের প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল যার নিরাপত্তার জন্য ছিল সু-উচ্চ প্রাচীর
প্রকাশিত: ৩-২-২০২৪ দুপুর ৩:৮
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজা বিরাটে প্রথমবারের মত প্রত্নত্বাত্তিক খনন কার্য পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত অধিদত্তর। খননের মাঝামাঝি এসে বেরিয়ে আসছে প্রাচীন ও মধ্যে যুগের কিছু অবকাঠামো বলে ধারণা করছেন রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ৮ সদস্যের একটি প্রত্নতাত্বিক দল।
প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা সকালের সময় কে এ কথা বলেন।
বর্তমান খননে ধারণার চেয়ে অধিক বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে বলে জানান নাহিদ সুলতানা। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজ-সজ্জায় ব্যবহৃত হয়), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে বলেন জানায় খননকারী দল।
বর্তমানে ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার এবং প্রস্ত ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪ মিটার, বলছে খননকারী দল।
তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন আমলের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল বৃহৎ আকারে খনন কার্য সম্পূর্ণ না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় বলেন জানান নাহিদ সুলতানা।
তবে জনশ্রুতি থেকে জানা যায় এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল। যার নিরাপত্তার জন্য ছিল সু-উচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে বর্তমান খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গ নগরীর কোন চিহ্ন খুঁজে পান নিন। তবে ধারণা করা হচ্ছে মূল অবকাঠামোর সাথে আরো দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল যা বর্মানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
খাঁজা এম এ কাইয়ুম নামের স্থানীয় গবেষক যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করেছেন তার একটি নোট বুকে লিখে গেছেন বিরাট রাজা সমস্ত ভারত বর্ষে মৎস্য রাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই অঞ্চলে মাছ চাষের জন্য তিনি ৯৯৯ টি পুকুর খান করেন।
'সুধীর চন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরণিক অভিধান ' হতে জানা যায় -" বিরাট রাজা মৎস দেশের রাজা বিরাট রাজ কুবের তুল্য ধনী ছিলেন। তার গো-ধোনের তুলনা ছিল না। পাণ্ডবেরা দ্রৌপদীর সহিত বনবাসকালে দ্বাদশ বছর সমাপ্ত হলে এক বছর অজ্ঞাত বাস কালে বিরাটের রাজ সভায় ছদ্মবেশে ও ছদ্ম নাম অতিবাহিত করেন"।
রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৫-২৬ খিষ্ট্রাব্দে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ১৯০৫ সালের দিকেও এ স্থান জঙ্গলাবৃত ছিল। সামান্য কয়েক বছর পূর্বে সাঁওতালরা এখানে পরিষ্কার করে ঘরবাড়ি তৈরী করেন।
প্রত্নস্থলটি ইতিপূর্বেই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এই স্থানকে গুরুত্ব দিয়ে বৃহত্যাকারে খনন কার্য পরিচালনা করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেই সাথে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলেও জানান এই আঞ্চলিক পরিচালক।