অধিকাংশ লোকজনেই পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছে নদী
প্রকাশিত: ১১-১-২০২৪ দুপুর ২:৪৭
বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা,ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কোল ঘেঁষে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদটি এখন নাব্যতা হারিয়ে মরাখালে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদের বুকে জেগে উঠছে চর। অধিকাংশ লোকজনই পায়ে হেঁটে ব্রহ্মপুত্র নদের চর পাড়ি দিচ্ছে। কালাসোনারচর , সাদেকখার চর , গোলনারচর চর সহ বিভিন্ন স্থানে। লোকজন এবার ব্রহ্মপুত্র নদে পলি মাটিতে ইরি-বোরো চাষের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। নদে চর জেগে উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবারের মাছধরা ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। বিশাল নদটিতে চর জেগে পরিণত হয়েচ্ছে ছোট্ট খালে। আর বর্ষা মৌসুমে চরাঞ্চলের এসব গ্রাম থাকছে বন্যার চরম ঝুঁকিতে।
সন্ন্যাসীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদীর উপরেও পড়ছে। তাই গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদী ভাংগনের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা না হলে ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ফজলুপুর ও গজারিয়া ইউনিয়ন এবং পাশ্ববর্তী সদর উপজেলার মোল্লারচর কুন্দলেরপাড়াসহ অনেক গ্রাম বর্ষা মৌসুমে বন্যা কবলিত হওয়ার আশংকা থাকে।
তিনি আরো বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে যাওয়ায় এসব গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি না থাকায় গাছপালা ও কৃষি পণ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। চরাঞ্চল গুলোতে সবজি চাষ, উৎপাদন কমে যাচ্ছে । ব্রহ্মপুত্র নদের সংস্কার না হলে বর্ষা মৌসুমে চরম হুমকির শিকার হতে হয় জেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর মানুষের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা হারিয়ে বেকার হয়ে যাচ্ছে নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবন যুদ্ধ করা নৌকার মাঝি এখন পেশাও পরিবর্তন করছে। কেউ কেউ নৌকা বিক্রি করে ঘোড়া কিনে গাড়ি বানিয়ে শুকনো মৌসুমী বালুচরে যাত্রী পারাপার করেন।
কৃষক খালেক মিয়া বলেন,বাপ চাচাদের আমলে নদী ভাঙ্গনে জমি চলে গেছে গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে জেগে উঠছে চর।এখন কিছু কিছু জমি চর জেগে ওঠায় নদের বুকে সামান্য বোরো ধান, ভুট্টা ও মরিচ আবাদ করি। আর বর্ষা মৌসুমে এই ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় সামান্য পানিতেই ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর বন্যাই আমাদের এলাকার মানুষের জন্য একটি অভিশাপ। প্রতি বছরেই বন্যার কারনে নানান সমস্যার মধ্যে পরতে হয় আমাদের।
নৌকার মাঝিরা ঝনু,মমিন বাতেন জানান, শুকনো নদী, অনেক দুর ঘুরে ঘুরে যাইতে হয় তাই সময় ও তেল খরচ বেশি লগে। নৌকায় পারাপারের যাত্রী নেই। শুকনো মৌসুমী চরাঞ্চলের প্রায় লোকেই ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করে। ইঞ্জিন চালিত প্রায় সব যানবাহন চলাচল দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । তাই খুবই কষ্টে দিনযাপন করছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, “নাব্যতা সংকটে নৌপথের দূরত্ব বেড়েছে। খরচ ও সময়ও বেশি লাগছে। আমরা সময়মতো হাটে পণ্য নিতে পারছি না। ব্যবসায়ীকভাবে খারাপ সময় যাচ্ছে।“নদের নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবো,”।
নৌকার মাঝি কালা চাঁদ মিয়া বলেন, “ বালাসি ঘাট থেকে দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের হাড়োডাঙ্গা চর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের পানি কমে গেছে। ওই এলাকায় নৌকার যাত্রীরা পানিতে নেমে হাতে নৌকা ঠেলে পার না করলে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ফলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, কামারজানি, পাঁচপীর, চর কাপাসিয়া, মোল্লারচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।”
তিনি আরও বলেন ঘাট ইজারাদারদের এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও তারা নাব্যতা সংকট দূর করতে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এই রুটে হাটের দৈনিক প্রায় শতাধিক নৌকা চলাচল করেলেও পানি না থাকায় এলাকায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।