জীবনের জন্য পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম

news paper

ডা. মো. রাশীদ মুজাহিদ

প্রকাশিত: ১৭-১১-২০২৩ বিকাল ৫:২২

2001Views

গতিশীল পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা কারনে শারীরিক ও মানসিক চাপ নিয়ে থাকি। কিন্তু পর্যাপ্ত বিশ্রাম, বিরতি ও ঘুম ছাড়া যে শরীর ও মনের প্রশান্তি অর্থহীন তা আজকাল আমরা ভুলেই যাচ্ছি। অলসতা ও অতিরিক্ত ঘুম কারো জন্য বয়ে আনছে নানাবিধ বিপদ।

শারীরিক পরিশ্রম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যেমন সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য তেমনি ঘুম ও বিশ্রামহীন সুস্বাস্থ্যের কথা কল্পনাও করা যায় না।ঘুমের ঘাটতি মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। রাতে ঘুম ভালো না হলে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব,অবসাদ,মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া,ক্ষুধামন্দা বা বদহজম হতে পারে।
ঘুমের সাথে আমাদের স্মৃতি বা মেমোরি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কযুক্ত। আমরা সারাদিন যা দেখি, পড়ি বা শুনি সেগুলো মস্তিষ্কে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত হয়। এতে দীর্ঘ মেয়াদি স্মৃতি তৈরি হয়। এ ছাড়া সমস্ত শরীরের যে কোষগুলো সারাদিনের কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো পুনরুদ্ধার এবং নতুন কোষও তৈরি হয় এই ঘুমের সময়টাতেই।
    
নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকা উচিত। কারন এই ঘুমের মাঝেই কিছু হরমোন নি:সৃত হয় যেগুলোর তারতম্য হলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। কম ঘুম স্ট্রেস হরমোন নি:সরণ বাড়ায় যা স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী।সারা রাত জেগে দিনে ঘুমানোর প্রবণতা অনেকের মাঝেই লক্ষ্য করা যায়। রাতের ঘুম শরীরকে যতোটা সতেজ আর মনকে প্রফুল্ল রাখে; দিনে ঘুমিয়ে সেটা সম্ভব না।সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতেও ঘুমের ভূমিকা রয়েছে। সুন্দর একটি ঘুম পরের দিনের চাপ নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে।ঘুমের স্বল্পতা হৃদরোগ,উচ্চরক্তচাপসহ আরো বিভিন্ন রোগের কারন।

বয়সভেদে ঘুমের তারতম্য থাকে। নবজাতক বা শিশুরা সাধারণত বেশি ঘুমিয়ে থাকে।আবার পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের জন্য ৬-৮ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট।বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ এর থেকে বেশি হতে পারে। দুপুরের পর একটু বিশ্রাম দিনের বাকি সময়টুকু কাজ করার জন্য শক্তি যোগায়।পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করার জন্য ঘুমের সময়টাতে মোবাইল,ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। কম আলো থাকে এমন জায়গায় ঘুমানোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো। ঘড়ির দিকে বারবার তাকানো যাবে না। এক গ্লাস পানিও খেয়ে নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ঘুমের ১-২ ঘন্টা আগে গোসল করে নেয়া যেতে পারে,তবে তা রাতের খাবার খাওয়ার আগে; না হলে হজমে সমস্যা হতে পারে।

এবার বিশ্রাম নিয়ে কিছু বলা যাক-ব্যস্ততার মাঝে একটু হলেও নিজেকে বিশ্রাম দিতেই হবে।অফিসে বা পড়ার টেবিলে বসে কাজের ফাঁকেই চোখ দুটো বন্ধ করুন,লম্বা শ্বাস নিন এবং আস্তে আস্তে ছাড়ুন,একটু পানি খেয়ে নিন, দাঁড়িয়ে যান এবং আস্তে আস্তে হাঁটুন।নতুন কিছু নিয়ে ভাবুন,নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের ও অন্যের ইতিবাচক দিকগুলোতে ফোকাস করুন।নতুন কোন আইডিয়া বের করুন কাজ নিয়ে।

ছুটির দিনে পরিবার বা বন্ধুদের সময় দিতে ভুলবেন না। আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্কের উন্নতি ঘটান,নিয়মিত নামাজ পড়ুন ও প্রার্থনা করুন।ছুটির দিনে অন্যান্য ধর্মীয় কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। এটা আপনাকে আরো আত্মবিশ্বাসী ও মনকে প্রশান্ত করে তুলবে।

 শেষ কথায় যা না বললেই নয় শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিমিত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা এমন এক প্রজন্মকে রেখে যাবো যারা সমাজ,দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার বদলে পিছনে নিয়ে যাবে।


লেখক:
ডা. মো. রাশীদ মুজাহিদ 
এক্সিকিউটিভ(এম.এস.পি.ডি)
দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড 


আরও পড়ুন