প্রবারণা পূর্ণিমা কুয়াকাটার আকাশে উঠছে রং-বেড়ংয়ের ফানুস

news paper

আবুল হোসেন রাজু , কুয়াকাটা

প্রকাশিত: ৩০-১০-২০২৩ বিকাল ৬:০

149Views

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রাখাইন সম্প্রদায়ের পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। এই উৎসব ঘিরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়া জুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। উৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ বিহার গুলো পরিস্কার করা, নতুন পোশাকসহ
নানা  কেনাকাটা,ঘরবাড়ি সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় রাখাইন পল্লী রাখাইনরা। কুয়াকাটা কলাপাড়া মার্কেটগুলোতে পড়ছে কেনাকাটার ভিড় চারদিকে এখন সাজসজ্জা।রবিবার(২৯ অক্টোবর)সকাল সাতটায় পঞ্চশীল ও অষ্টশীল প্রার্থনা ওবিহারে বিহারে গিয়ে বুদ্ধ প্রতিভিম্ব স্নান , পঞ্চশীল গ্রহন এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ উৎসবকে বাড়ি বাড়ি প্রতিযোগীতা মূলক চলছে রাখাইন নারীদের নানা রকম বাহারি পিঠা, পুলি, পায়েশ তৈরি। স্বাগতম জানাতে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন কুয়াকাটার রাখাইন ক্ষুদ্র  নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে উপকূলে বসবাসরত রাখাইন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। এ গানে আর নাচে পরম্পরকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা সিক্ত হন তারা।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সূত্রে জানা গেছে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে দ্বিতীয় তমো মহা ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এদিনে  সিদ্ধার্থ গৌতম গৃহ ত্যাগ করেন,এবং চুল ছেদন করে আকাশে নিক্ষেপ করেন, চুল আকাশে বাসোন থাকে সেই চুল স্বর্গের রাজা ইন্দ্ররাজ স্বর্গে নিয়ে একটি জাদ্দি নির্মান করে। সেই চুল ধাতু জাদ্দিকে উদ্দেশ্যে ফানুস উৎলন করে থাকে। এই একই দিনে তিন মাস বুদ্ধ তাতিংশ স্বর্গে ধর্ম প্রচার শুরু করে এই পূর্ণিমা তিথীতে পৃথিবীতে শুভ আগমন করে। তাই এই দিনে বৌদ্ধদরা আলোক সজ্জা দিয়ে পূজা করে ।এ কারণে এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কুয়াকাটাসহ এ উপজেলার ২৮টি রাখাইন পাড়ার এ উৎসব একযোগে পালন করা হচ্ছে। তবে ফানুস উৎসব এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয় রাখাইনরা জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা কেরানী পাড়ার উচাচি মাতুব্বর বলেন, গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। ধ্যানশিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে পরিষ্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করা হয়। প্রবারনা পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ বিহারে প্রথমে অষ্টমশীল গ্রহন করে এবং বিভিন্ন পিঠা দান করা হয়েছে। এছাড়া প্রবারনা সম্পর্কে ধর্ম আলোচনা করা হয়। আর রাতে আকাশে একের পর এক ওড়ানো হয়েছে নানা রঙের ফানুস।
 
কুয়াকাটা শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যাক্ষ ইন্দ্রোমোহন ভিক্ষু বলেন, আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণে এ উৎসব পাল করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে রবিবার সকালে পঞ্চলশীল, অষ্টশীল এবং বুদ্ধপূজা হয়েছে। এছাড়া মন্দিরে বুদ্ধের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিটি রাখাইন পাড়ায় প্রবারণা উৎসব পালন করার জন্য ৫০০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। রাখাইনরা যাতে এ উৎসব ভালোভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফেরদাউস খান বলেন, রাখাইনদের এই ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে মহিপুর থানার পক্ষ থেকে সর্বাধিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে কোন
অপ্রতিকার ঘটনা না ঘটে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন