রাজনীতিতে ভিসা ইস্যু
প্রকাশিত: ২৪-৯-২০২৩ দুপুর ৪:২২
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শুক্রবার বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন অঙ্গনে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। চায়ের দোকান থেকে টেলিভিশন টকশো- সব জায়গাতেই একই ইস্যু। বিষয়টি গড়িয়েছে রাজনীতিতেও। নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভিসানীতি নিয়ে তিনি চিহ্নিত নন। প্রয়োজনে তিনি পাল্টা ভিসীনীতি প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। অনেকটা উচ্ছ্বাসের সুরে বিএনপির নেতারা সরকারকে দোষারোপ করেছেন। তবে তারা এ ভিসানীতির কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করেন। তবে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভিসানীতিতে তারা শঙ্কিত নন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যদি দেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচাল করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। আমরা দেখতে চাই, দেশের বাইরে থেকেও যেন কোনো চেষ্টা না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই এবং লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সংবিধান লঙ্ঘন করে কেউ যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না। শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।সরকারপ্রধান বলেন, মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণায় বিরোধীদের কথাও বলা হয়েছে। এবার তারা (বিএনপি) জ্বালাও-পোড়াও করতে পারবে না। এতে জনগণের জীবন বাঁচবে।
শেখ হাসিনা বলেন, কে নিষেধাজ্ঞা দিলো আর কে দিলো না, তাতে কিছু যায় আসে না। আমার ছেলেও এখানে আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়ি-ঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের বাংলাদেশতো আছেই।তিনি বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। ভিসানীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই। কারও শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় এসেছি এবং আছি। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা কি ২০০১ সালের অবৈধ নির্বাচন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হ্যাঁ-না ভোটের কথা ভুলে গেছে? নির্বাচন নিয়ে এই সচেতনতা তখন তাদের কোথায় ছিল?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা দেশের বাইরে থেকে যেন না হয়। এটি হলে বাংলাদেশের জনগণই তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবে। তিনি বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগই করেছে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এটি আমারই স্লোগান। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করার ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য ‘অপমানজনক ও লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে গত ২৪ মে। এই ঘোষণার চার মাসের মাথায় শুক্রবার দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও বিরোধী দলের সদস্যও রয়েছেন।
বিরোধী দলের সদস্যদের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধের যে কথা বলেছে, এ নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয় বলে বিএনপি নেতারা বলছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, সরকারের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের জন্যই এটি চিন্তার বিষয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এটি আমাদের দেশের জন্য প্রাপ্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন, এ জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী। এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমাদের দেশের ৫২ বছর বয়স হয়েছে। এই ৫২ বছর বয়সে আমাদের অর্জন আমেরিকার স্যাংশন ও ভিসানীতি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় থাকা অবস্থায় শুক্রবার ভিসানীতির কার্যক্রম চালু করেছে। কেন করেছে? কারণ, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই। ভোটের অধিকার নাই। মানবাধিকার নাই। আর এই কারণে আমেরিকা আগে স্যাংশন দিয়েছিল, এখন ভিসানীতি কার্যক্রম শুরু করেছে। শোনা যাচ্ছে, সরকারি দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এবং সচিব পর্যায়ের অনেকেই এই ভিসানীতির আওতায় পড়েছে। কেন বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি আসবে? এটা কোন আনন্দের সংবাদ না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। আমি এটুকু বলতে পারি যে, এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া। এই নীতি অনুযায়ী যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থেকে বিরত রাখতে সহিংসতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা মতামত প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের উপর পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।
জানা যায়, বাংলাদেশের জন্য গত বুধবার একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ নীতি সম্পর্কে বলেছেন, এর আওতায় যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারাবলে এ নতুন নীতিটি তারা ঘোষণা করল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়ার জন্য যারা কাজ করছেন, তাদের সবার প্রতি সমর্থন জানাতে এ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি নিয়ে কী বলল সেটি মুখ্য নয়। দেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি নাগরিক সাংবিধানিকভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। ভিসানীতি ঘোষণার কারণে জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না। তবে যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, নির্বাচনে আসতে চায় না, যারা নির্বাচন হতে দিতে চায় না তাদের যদি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আকাক্সক্ষা থাকে তবে তাদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি সমস্যা হতে পারে বলে মনে করি।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এটার ব্যাপারে নানা ব্যাখ্যা করছে। আমার মনে হয় এ নীতি যেভাবে ঘোষিত হয়েছে সেখানে একটা কথা স্পষ্ট, তারা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে নির্বাচন এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তারা আশা প্রকাশ করছেন যেন এটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়। এ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বিষয়ে কারও কোনো বিরোধিতা নাই। এটা আমরা সবাই চাই। বিরোধী দলগুলো মনে করছে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে তো তারা কিছু বলে নাই। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে ঘোষিত নীতিতে কোনো মাথাব্যথা নাই। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। কারণ কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা অরোপ হয় নাই। তারা কিছু ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। পরিস্থিতির উদ্ভাবন হলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে। গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের যেহেতু সমর্থন রয়েছে আমরা আশা করি নির্বাচন সুন্দর সঠিকভাবে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ভিতরে যে সমস্ত ইস্যু রয়েছে সেসব বিষয় ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসবে। তারা কী ঘোষণা দিল আমরা কয়েক দিন পর ভুলে যাব। এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করছি না।
রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এটা নিয়ে যে বিরাট নির্বাচনী ইস্যু হবে, তা আমি মনে করছি না। এখানে দুই রাজনৈতিক দলই ম্যাচিউরিটি দেখিয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মেজর (অব.) শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, এ মুহূর্তে মার্কিন ভিসানীতির ব্যাপারে বিশদ বলা সম্ভব নয়। কারণ মাত্র তো তারা তাদের এ নীতি ঘোষণা করেছে। আরও কয়েক দিন যাক, এর কার্যক্রম শুরু হোক, তারপর বলা যাবে বিষয়টা আসলে কী? রাজনীতি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে এর কী প্রভাব পড়বে, না পড়বে। তিনি বলেন, অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট। প্রথমত, এ ভিসানীতির আওতায় সুষ্ঠু ভোটে বাধাদানকারী ব্যক্তিকে কীভাবে চিহ্নিত করা হবে? এর কোনো বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের পদ্ধতি আছে কি না? থাকলে সেটা কী হবে? তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তো সারা দেশে হাজার হাজার ভোট কেন্দ্র থাকবে, সেখানে কে কোন্ কেন্দ্রে কীভাবে বাধা দেবে; আর তা কীভাবে শনাক্ত করা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা কি আছে? অতএব বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে নিশ্চিত করাটাও সম্ভব নয়। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি অন্যায় করলে কিংবা আমি অন্যায় করলে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা কেন সাফার করবে? এটা তো রীতিমতো অন্যায় একটি সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এ পৃথিবীতে এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে কোনো গণতন্ত্রই নেই। সেসব দেশের ক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপগুলো কী ধরনের? এসব বিষয়ে জানতে হবে। তার পরে বোঝা যাবে যে মার্কিন এ ভিসানীতির ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি বা অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাতারাতি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এমন ভাবা কঠিন। কারণ বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনীতিতে পরিবর্তন হয় অভ্যন্তরীণ ফ্যাক্টরের মাধ্যমে। তার মতে, নতুন ভিসানীতির পাঁচ ধরনের তাৎপর্য আছে। প্রথমত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের অবস্থান ছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু এখন নতুন ভিসানীতির মধ্যদিয়ে দেখা যাচ্ছে, তারা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের নির্বাচনের কথা বলছে। এর একটি উদাহরণ হতে পারে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেখানে বিএনপির মতো প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি; কিন্তু জনগণ ভোটে অংশ নিয়েছে। নতুন ভিসানীতির দ্বিতীয় তাৎপর্য হচ্ছে, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে বিশেষভাবে কিছু বলা হয়নি। বরং সরকারে যারাই থাকুক; নির্বাচন যে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে- সেটাই নির্দেশ করা হয়ছে। তৃতীয় তাৎপর্য হলো, নতুন ভিসানীতির মধ্যদিয়ে ঠিক সরাসরি নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আমলা, পুলিশ থেকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দল সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। আমি মনে করি এতে বিএনপির উপরও এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। যেহেতু আমেরিকার ভিসা পলিসিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। চতুর্থ তাৎপর্য, বিনিয়োগের বিষয়ে নেতিবাচক-ইতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। পঞ্চম তাৎপর্য হলো, বাংলাদেশের বিভাজনের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়েই হঠাৎ ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন, বিষয়টি এমন সহজ নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভিসানীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কাকে ভিসা দিবে, না দিবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। শনিবার সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে ইনডোর প্লে-গ্রাউন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয় বরং চাপে আছে বিএনপি। এমন মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ভিসানীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। বরং ভিসানীতি নিয়ে বিএনপির নেতাদেরই চাপ অনুভব করার কথা। এটি তাদের ভাবার কথা। কারণ ভিসানীতি হলো যারা নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা করবে তাদের জন্য। সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করতে চায়। তাই বর্তমান সরকার ভিসানীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না। বরং ভোটে বাধা সৃষ্টির জন্য বিএনপিই এটি নিয়ে চিন্তিত।