মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন

সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা

news paper

তানভীর সানি

প্রকাশিত: ১০-৯-২০২৩ দুপুর ৩:৭

360Views

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। প্রবাদটি আমরা সকলেই জানি। প্রত্যন্ত একটি গ্রাম থেকে ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হয়েছে মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন। তাঁর সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পটা মোটেই সহজ ছিলো না। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সমাজ ও তাঁর পরিবার।  সব রকম বাধা পেরিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। কতটা কঠিন ছিলো তাঁর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প সেটি তুলে ধরেছে দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিবেদক তানভীর সানি। 

প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সাধারণ মেয়ে ছিলো বাঁধন । আর পাঁচটা সাধারণ কিশোরী মেয়ের মতোই চলছিলো তাঁর জীবন। কিশোরী বয়সেই মনে অনেক স্বপ্ন বুনে রেখেছে। এ দিকে বয়স যখন ১৪ বছর হঠাৎ তাঁর বাবা মারা যায়। পরিবারের ৩ মেয়েকে নিয়ে তাঁর মা অসহায় হয়ে পড়ে। পরিবারের বড় সন্তান হওয়াতে সমাজের নানা মানুষ নানান রকম কথা বলতে থাকে। শুনতে হয়, মেয়ে মানুষ লেখাপড়া করিয়ে কি হবে। ছেলে হলে না হয় লাভ হতো। মেয়ে বড় হওয়াতে গ্রামের মানুষেরা বলতে থাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। শত কান্নার আওয়াজে তাইতো কারো মন গলেনি। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাঁধনের অমতেই তাঁর মা বিয়ে দিয়ে দেয়। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মা হয়ে যায়। বয়স ২০ হবার আগেই দুই সন্তানের জননী হয়। এ দিকে তাঁর স্বামী তখনও ছাত্র, পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে। সাংসারিক খরচ সেই সাথে মানুষিক চাপে শ্বশুর তাঁর স্বামীকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে নিষেদ করে বলে, সংসারে মনোযোগ দিতে। স্বামীর পড়াশোনা বন্ধ হবে ভেবে খুব মন খারাপ হয়। তবে হাল ছেড়ে দেয়নি। সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর মায়ের বাসায় শহরে থেকে পড়াশোনা করবে। স্বামীকে বুঝিয়ে নিয়ে আসে শহরে।

দীর্ঘ ৫ বছর বিরতির পর নিজেও ছোট বোনের সাথে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে যায়। স্বামী, স্ত্রী দুজনে মিলে পড়াশোনা করতে থাকে। পরবর্তীতে মাধ্যমিক পাস করার পর সবাই জানতে পারে তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে। শ্বশুরের আড়ালে শাশুরী মানসিকভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করতো। বাঁধনের অনুপ্রেরণায় তাঁর স্বামী পড়াশোনা শেষ করতে পারলেও চাকরির চেষ্টাতে ছিলো ব্যর্থ। বাঁধনের স্বামী চাকরির জন্য অনেক টাকা সিসি লোন করেছিলো। সেগুলো বেড়ে পাঁচ গুণ হয়ে যায়। এরই মধ্যে হানা দেয় করোনা মহামারি। স্বামী, স্ত্রী দুজনেই ছিলো বেকার। এমতবস্থা আর পারিবারিক জটিলতায় একদিন তাঁর স্বামী ডেকে বলে চলো আত্মহত্যা করি!

যখন হতাশা গ্রস্ত হয়ে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে জর্জরিত, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সংগঠন উইয়ের সহযোগীতায় জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বাঁধন বলেন,  বুঝতে পারি আমার ভেতরে কৃষি খাদ্য পণ্য ও রাজশাহীর নিজেদের বাগানের আম নিয়ে কাজ করার মত গুন রয়েছে। নিজেদের গ্রাম থেকে নিজেদের  জমিতে উৎপাদন করা সব ধরনের ভেজাল মুক্ত কৃষি খাদ্য পণ্য নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারবো এমন আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। এরপর থেকে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত।

বাঁধন বলেন, আশা করি এখন আর আমাকে কারও মেয়ে, কারও বউ অথবা বোন বলে ডাকবে না। আমার নিজের একটা নাম আছে। যে নামে সবাই আমাকে বাঁধন আপু নামে চেনে। আমি চাই একদিন বাঁধন ফুড সারা দেশ সহ সারা বিশ্বে পৌঁছে যাবে। রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন ও বজরাপুর গ্রামে কৃষি খাদ্য পণ্য নিয়ে কাজ করছে সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা। তাঁর উদ্যোগ্যের নাম ‘বাঁধন ফুড’। প্রতিষ্ঠা করেন ২০২০ সালে। প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরণের কৃষি খাদ্য পণ্য পাওয়া যায়। রাজশাহীর আম, খেজুরর গুড়, সব ধরনের রান্নার মসলা, চাল, ডাল, তেল, ঘি, মধু সহ রান্না করা খাবার সরবরাহ করে বাধন ফুড। এছাড়াও বর্তমানে তিনি ১০ বিঘার পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। 

 


আরও পড়ুন