ছয় লেন হচ্ছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, নির্মাণ ব্যয় হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত: ২৩-৮-২০২৩ রাত ৯:৫৭
যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রায় ৪৭ কিলোমিটারের এই মহাসড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। যার প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
জানা গেছে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। কেননা এই মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়েজ করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাসেক রোড করিডোরের হাটিকামরুল অংশের সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে মহাসড়কের যশোর অংশ বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার করিডোরের সাথে যুক্ত হয়েছে। ফলে সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা প্রয়োজনীয়তা বোধ করা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। সে প্রত্যাশা পূরণের সময়ও যেন ঘনিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘উইকেয়ার ফেজ-১’-এর আওতায় মহাসড়কটির উন্নয়নে পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব বুধবার (২৩ আগস্ট) অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন হতে পারে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে খুব দ্রুতই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
জানা যায়, এই প্রস্তাবে ডব্লিউপি-১ প্যাকেজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত প্যাকেজটিকে তিনটি লটে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি লট দুই ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপে পূর্ত কাজ এবং দ্বিতীয় ধাপে পূর্ত কাজের ছয় বছর রক্ষণাবেক্ষণ।
মূল প্রকল্প প্রস্তাবে প্রকল্পের পূর্ত কাজের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে।
মহাসড়ক বিভাগ এই প্রকল্পকে তিন লটে ভাগ করে, প্রতি লটের সীমানাও নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে লট-১-এর সীমানা- ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে কালীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত (সাড়ে ১৫ কিলোমিটার)। লট-২- কালীগঞ্জ বাজার থেকে মুরাদগড় বাজার পর্যন্ত (১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার) এবং লট-৩- মুরাদগড় বাজার থেকে যশোর চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত (১৫ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার)।
সূত্রে জানা গেছে, ডব্লিউপি-০১ প্যাকেজের তিনটি লটের পূর্ত কাজ সম্পাদনে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১৪টি দরপত্র জমা পড়ে। প্রাথমিক মূল্যায়নে সবগুলো দরপত্রই বিবেচনায় রাখা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১০টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
যোগ্য বিবেচিত ১০টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি লটের ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয় যৌথভাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘আবদুল মোনেম লিমিটেড’ও চীনা প্রতিষ্ঠান ‘কুয়িংদাও ট্রাফিক কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’।
তবে কাগজপত্র সঠিক না থাকায় এ লটের কাজ পায়নি প্রতিষ্ঠান দুটি। এরপর আরও দুই প্রতিষ্ঠান একই কারণে কাজ হারায়। পরে লট-১-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়। কাজ পেয়েছেন - যৌথভাবে চীনা প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দুই ধাপে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এদের চুক্তিমূল্য হচ্ছে ৮৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
লট-২ ও লট-৩-এর আবেদনের সাথে চাহিদামাফিক সব কাগজপত্র জমা দেয়ায় ঠিকাদার কোম্পানি দুটিকে এ দুই লটের পূর্ত কাজের জন্য মনোনীত করা হয়।
লট-২-এর আওতায় কালীগঞ্জ বাজার থেকে মুরাদগড় বাজার পর্যন্ত (১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার) সড়ক উন্নয়নে দুই ধাপে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০৫ কোটি চার লাখ টাকা এবং লট-৩-এর আওতায় মুরাদগড় বাজার থেকে যশোর চাকড়া মোড় পর্যন্ত (১৫ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার) সড়ক উন্নয়নে দুই ধাপে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, লট-১-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল যৌথভাবে ভারতের কেএমসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মোনাকো লিমিটেড। এদের প্রস্তাবিত দর ছিল ৮৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা; কিন্তু এদের ব্যাংক সার্টিফিকেট ভুল হওয়ায় এটিও অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
সূত্র জানায়, এ কারণে লট-১-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছে। এরা হচ্ছে- যৌথভাবে চীনা প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দুই ধাপে ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ এদের চুক্তিমূল্য হচ্ছে ৮৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে খুব শিগগিরই সড়কের কাজ শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটি সরকারের একটি জনবান্ধব মহাউদ্যোগ। যা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এগোচ্ছে। পদ্মা সেতুর পর এই সড়কটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের জন্য এটিই হবে আরও একটি মাইলফলক কাজ।