গুজব রুখতে তৎপর আ.লীগ
প্রকাশিত: ২৩-৮-২০২৩ দুপুর ২:৫৮
ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার স্মার্ট বাংদেশের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এই স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনসাধারণের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। এর ফলে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে সহজেই দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখছে মানুষ। চারপাশে কী ঘটছে, কী শুনছে সেগুলো ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট। দেশে বর্তমানে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর ইউটিউবের দর্শকের সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। এই সুযোগ কেউ ভালো কাজে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছেন। আবার কেউ সরকার, আওয়ামী লীগের চরিত্র হরণ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দলটির নেতারা মনে করছেন এসব সরকার বিরোধীদের কাজ। তারা বলছেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফয়দা হাসিল করার চেষ্ঠা করছে বিএনপি জামায়াত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো হয় প্রতিদিন। এসব গুজবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সেলিব্রেটিদের নাম জড়ানো হচ্ছে। কোনো গুজবে সশস্ত্র বাহিনীর মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের নামও জড়ানো হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন, ‘রাতেই প্রধানন্ত্রীর পদত্যাগ, সকালে ১৪৪ ধারা জারি’, ‘আরও ভয়ংকর হরতালের ডাক বিএনপির’, ‘উভয় সংকটে শেখ হাসিনা, যেকোনো মুহূর্তে পতন’, ‘ঢাকা ঘেরাও করেছে নূরবাহিনী’, ‘আন্দোলনে উত্তাল রাজপথ’- এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বলা হয়, ‘রানওয়ে বিমান রেডি’, ‘২৭ জনকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, ‘শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় ২৭ ব্রিগেট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে’, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় র্যাবের অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা’।
এ বিষয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার, গুজব প্রতিরোধে একাধিক সাইবার টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। তিনি বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধীরা সাইবার জগৎকে বেছে নিয়েছে। তাদের প্রতিরোধে এরইমধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দলীয় ইতিবাচক প্রচারের পাশাপাশি বিরোধীদের নেতিবাচক প্রচারণা রুখে দিচ্ছে। এ জন্য নির্বাচনের অনেক আগেই শক্তিশালী সাইবার টিম আমরা গঠনের মধ্যদিয়ে কাজ শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের বাকি প্রায় ৪ মাস। সেই লক্ষে আওয়ামী লীগ প্রতিটি জেলায় ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ এমন ১০০ সদস্যের টিম গঠনে কাজ করছেন।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের অপপ্রচার প্রতিরোধে একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। অতীতে সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার মতো গুজবকেও দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছিল একটি গ্রুপ। এতে দেশে ধর্মপ্রাণ মানুষদের অনভূতিতে প্রভাব ফেরেছিল বিষয়টি। ইতোপূর্বে বহুবার গুজব ছড়ানো হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে। মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে এবং ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। এমনকি সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াও গুজব ছড়াতে পিছপা হননি। জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে এবং কেউ এই সেতুতে উঠবেন না।
এদিকে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের অপপ্রচার-গুজব প্রতিরোধে সক্রিয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সতর্কতা পোস্ট দেয় দলটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে বিএনপির ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। বিএনপির সেই টুইটে মানবাধিকার সংগঠন হিউমান রাইটস ওয়াচের পোর্টালে ১২ জুন ছাপা হওয়া একটি প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করা হয়। ‘ইউএন শুড এনহান্স স্ক্রিনিং অব বাংলাদেশ পিসকিপারস’ শিরোনামে লেখা এই প্রতিবেদনে র্যাবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করেন এর লেখক ব্রুনো স্টানো উগার্তে। প্রতিবেদনটি শেয়ার করতে গিয়ে বিএনপি টুইটে শিরোনাম হিসেবে লিখেছে ‘কিলার্স শুড নট বি পিসকিপার্স’। যার মানে দাঁড়ায়, খুনিদের শান্তিরক্ষী হওয়া উচিত নয়।
বিএনপির ওই টুইটের উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য না নেয়ার জন্য অফিসিয়ালি প্রচারণা শুরু করেছে বিএনপি। তারা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ‘কিলার’ অর্থাৎ খুনি আখ্যায়িত করে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রচার চালিয়েছে। তবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে পোস্টে বলা হয়, আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের গর্ব। ধিক্কার জানাই ভিনদেশি দালাল বিএনপিকে। পোস্টে দাবি করা হয়, কোটি কোটি ডলার খরচ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। আর তাদেরকে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সব বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। আসুন বিএনপিকে বর্জন করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘খবর আছে’, বলছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে মাঠ গরমের রাজনীতিতে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে তোপ দাগলেন বিএনপি নেতারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিরোধীদের অপপ্রচারের একাধিকবার তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামেও এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছেন তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনকে অপপ্রচারের জবাব দিতে বলেছেন বেশ দৃঢ়ভাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কী করছে: আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে গুজব, অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা রুখে দিতেও নিয়মিত কাজ করে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিম। এ টিম গুজব প্রতিরোধের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতিও প্রচারে কাজ করে। অনলাইন এই কার্যক্রম সমন্বয় করার জন্য ২২ সদস্যের মনিটরিং উপ-কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি। এই কমিটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ-কমিটির উদ্যোগে দলের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সহযোগিতায় নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মশালাও করছে।