জান্নাতুল ফেরদৌস, ওনার অব জান্নাত’স কিচেন
পিঠা ও পিঠার উপকরণ বিষয়ে পড়ুন পিঠা রানী জান্নাতুল ফেরদৌসের কথা
প্রকাশিত: ২০-৮-২০২৩ বিকাল ৫:২০
আদিম আভিজাত্য পূর্ণ একটি খাবারের নাম পিঠা বা পিঠে। চালের গুঁড়া, ময়দা বা অন্যকোন শস্যজাত দানা দিয়ে বানানো হয় এ পিঠা। অঞ্চল ভেদে অনেক বৈচিত্রময় পিঠা দেখা যায়। শীত ও পৌষ পার্বণের সময় বাংলার ঘরে ঘরে এ পিঠা বানানোর ধূম পরে যায়। পিঠা সাধারনত মিষ্টি স্বাদেরই হয় কোন কোন ক্ষেত্রে ঝাল ও হয়ে থাকে।
উৎপত্তিঃ পিঠার উৎপত্তি হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্য বিশেষভাবে পশ্চিম বঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, আসাম ও আমাদের বাংলাদেশে পিঠার প্রচলন অনেক বেশি। পিঠা কে গ্রামীণ ঐতিহ্য বলা হলেও ইদানিং শহুরে জীবনেও পিঠার ছোঁয়া লেগেছে ব্যাপকভাবে।
উপকরণঃ চালের গুঁড়া, ময়দা, গুড়, চিনি, দুধ, কোন কোন ক্ষেত্রে মাংস, ডিম সহ নানারকম শস্যদানা দিয়ে পিঠা বানানো হয়।
পিঠার প্রকারভেদঃ অঞ্চলভেদে পিঠা অনেক রকম হয়। যেমন ঃ নকশী পিঠা, পাটিসাপটা, সতীনমোচর, ভাপা, পুলি, পাককন, ব্যাখ্যা, বালিকা, জামাই ভোলানো পিঠা, সাগুদানা রিং পিঠা, পানতুয়া, লবঙ্গ লতিকা, আসকে পিঠা, হৃদয় হরণ, চুটকি পিঠা,ঝিলিমিলি পিঠা ,মেরাপিঠা , ঝিনুক পিঠা, সেও ঐ পিঠা, তেলের পিঠা, মালপোয়া পিঠা, রস মনজুরি,দুধরাজ,কলা পিঠা, তালের পিঠা, কাঠালের পিঠা,চিতয় পিঠা, ছাচ পিঠা ,ছাইয়া পিঠা, পাতা বেণী পিঠা, ছিটা পিঠা, নারিকেল পিঠা, আনদুসা পিঠা ,দুধ গুকুল, আলুডোবা পিঠা, ছানাপুরা পিঠা, কলশীপুলী,তিলের পিঠা, রেইনবোপিঠা, জানা অজানা আরো অনেক পিঠা। এই পিঠা গুলোর আবার আছে প্রকারভেদ।
বাঙালির লোক ঐতিহ্যে পিঠা পুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পিঠা বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। মুখরোচক খাবার হিসেবে পিঠা বাঙালি সমাজে বিশেষভাবে আদরণীয়। এছাড়াও পিঠা বন্ধু বান্ধব এবং মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে সুদৃঢ় ও মজবুত করে তোলে। আমরা ৯০ শতাংশ পিঠা বানিয়ে থাকি চালের গুঁড়া দিয়ে। কিন্ত, সব রকম ধানের চাল দিয়ে পিঠা হয়না। হলেও মানসম্মত হয়না। আজ সবার সাথে শেয়ার করবো কোন ধরনের ধানের চাল দিয়ে কোন ধরণের পিঠা ভালো হয়। পিঠা আমরা সবাই বানাই কিন্তু, সবারটা একরকম হয়না। মান সম্মত পিঠা বানাতে হলে অবশ্যই মান সম্মত উপকরণ বিশেষ করে চালের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক প্রজাতির ধান আছে আমন, আউস, ইরা, বোরো আরো কত কি। আমন প্রজাতির অনেক রকমের ধান গুলোর মধ্য থেকে পিঠা বানানোর জন্য আমাদের দরকার হয় সোনা দিঘা, হিজল দিঘা, শীলকমল, বেততো, গন্ধ কস্তুরী ও তেততলা। নকশি পিঠা, পাককন পিঠা, ঝিনুক পিঠা এ জাতীয় সব পিঠা বানাতে হলে আমাদের লাগবে সোনা দিঘা, শীল কমল আর তেততলা চালের গুঁড়া। আবার যদি গুণগত মান সম্মত পাটিসাপটা পিঠা বানাতে চান তাহলে গন্ধ কস্তুরীর মতো ভালো চাল আর হয়না। এ চাল অনেক গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। এবার আসি বিবিখানা আর জামাই আদর পিঠাই এ পিঠা গুলো বানাতে লাগবে চিনি গুড়া আর সোনা দিঘা ধানের চাল। ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা ,আর চিতই পিঠা বানাতে লাগবে পরাংগি আর কয়জুরি ধানের চালের গুড়া। এগুলো আউস প্রজাতির ধান। রাজবংশী ও খয়রামটর চালের পিঠাও অনেক ভালো হয়। খয়রামটর চাল দিয়ে খৈ ও ভাজা হয়ে থাকে। আরো অন্যান্য পিঠা বানাতে আমরা সাধারণত পায়জাম, নাজিরশাইল, বেতো ধানের চালের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। কলার চুই পিঠা আর শেঐও পিঠার ক্ষেত্রে মুঘাশাইল ধানের চালের গুঁড়া জুরি মেলা ভার। ইরি ধানের চাল দিয়ে মেরা পিঠা, মশলা পিঠা, তেলের পিঠা ছাড়া আর কোন পিঠাই বানানো যায় না। এজন্যই পিঠা বানানোর সময় সঠিক চাল বাছাই করা খুব জরুরি। আজ এ টুকুই থাক অন্য কোন সময় আবার লিখবো পিঠার অন্য কোনো উপকরণ নিয়ে।
(বিঃদ্রঃ এগুলো সব মা চাচী দের থেকে শিখা ,আগের মুরুব্বীরা এরকমই বলতেন আমি পিঠা বানানোর ক্ষেত্রে এই গুলো মেনে পিঠা বানানোর চেষ্টা করি। )