সাগরপারের মানুষের চোখে নতুন স্বপ্ন
প্রকাশিত: ২-৮-২০২৩ দুপুর ৪:৪৩
আগামী সেপ্টম্বরে চালু হচ্ছে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ। সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে যে সময় লাগবে আর অর্ধেক সময় লাগবে রেলে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে স্বাধীনতার পরে প্রথম ট্রেন যাবে কক্সবাজারে। এ নিয়ে সাগরপারে বইছে খুশির বাতাস। তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। তাদের আশা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে পর্যটন নগরী আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করবে পর্যটন নগরী।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল রান হওয়ার কথা রয়েছে। সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা, ট্রেন চালু হলে সময় লাগবে তার অর্ধেক। একইসঙ্গে কমে আসবে যাতায়াত খরচ। ঢাকা থেকে এসি বাসে যেখানে গড়ে ২ হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে ট্রেনের এসি কামরায় বসে আসতে খরচ হবে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। রেলপথ নির্মাণের ফলে বদলে যাবে কক্সবাজার। এই অঞ্চলসহ দেশের পর্যটনেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত। অর্থনীতির চাকাও ঘুরবে আরও দ্রুত। ঢাকার সঙ্গে ট্রেনের যোগাযোগ ও দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসীও। ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা যোগ হবে ট্রেনযোগে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের জন্য চলছে ব্যাপক কর্মযোগ্য। এ প্রকল্পকে ঘিরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। প্রতিদিন এই নান্দনিক রেলস্টেশন দেখতে বহুলোক ভিড় করছে।ঝিনুকের আদলে তৈরি স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। প্রায় ৫শ পর্যটক স্টেশনের লকারে লাগেজ রাখতে পারবে। প্রতিদিন এ স্টেশন দিয়ে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
জানতে চাইলে দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রানের চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, সড়ক পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগে। ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে তার অর্ধেক সময় লাগবে। আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও কমার্শিয়াল্লি যেতে আরও দুই/তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করবো।
প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। যাত্রীর চাপ দেখে পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেইসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য হবে কক্সবাজার। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি। ঢাকা-চট্রগ্রামে আন্ত:নগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়তো ১২০০ টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, সরকার দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুমদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দুই পর্যায়ে এই প্রকল্প শেষ হবে।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০.৮৩১ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। আর এই অংশেরই ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুমদুম পর্যন্ত ২৮.৭৫২ কিলোমিটার সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এর ফলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সাথে সংযোগ স্থাপন হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওর্য়াক এর আওতায় আনা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে।
নবনির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের সামনে কথা হয় নগরীর বাহারছড়ার বাসিন্দা জসিম মিয়ার সঙ্গে। কক্সবাজারে রেলপথ হচ্ছে যা কখনো ভাবিনি। এটা চালু হলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্যে আলাদা সুযোগ সুবিধা তৈরি করবে। সবাই খুব খুশি। রেলপথ হচ্ছে পর্যটক বেশি আসবে। এজন্যে কক্সবাজারবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা ইসহাক ফকির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুন্দর একটি রেলস্টেশন করে দিচ্ছে। এটা দেখতে প্রতিদিন অনেক লোকজন আসে। এই স্টেশন চালু হলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে। সুন্দর ও নান্দনিক রেলস্টেশন বাংলাদেশে দ্বিতীয় আর একটিও নেই। এই রেলস্টেশন পর্যটক ও কক্সবাজারবাসী সবার জন্যেই সুখবর। আমরা অনেক খুশি ও আনন্দিত।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার জেলাকে ঢেলে সাজানোর যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তারই একটি অংশ কক্সবাজারে নান্দনিক রেলস্টেশন নির্মাণ। কক্সবাজারের জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটার চেয়ে ভালো কোনো রেলস্টেশন নেই।