হাজার কোটি টাকায় বদলে গেছে শ্রীপুর
প্রকাশিত: ২৭-৭-২০২৩ বিকাল ৫:৩
‘সবুজে শ্যামলে শ্রীপুর, মিষ্টি কাঁঠালে ভরপুর’ প্রবাদটি গাজীপুরের শ্রীপুরের। ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর এখন উন্নয়নে সমৃদ্ধ। এ উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় পাঁচ শতাধিক শিল্প-কারখানা। এখানে সারা দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষসহ দশ লক্ষাধিক লোকের বসতি। আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে চার বছরে এ এলাকায় হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের হাত ধরে এ জনপদ এখন আধুনিক মানবিক এক উপশহর। গত চার বছরে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার প্রকল্প। চলমান রয়েছে ২২৫ কোটি টাকার কাজ।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ নির্মাণ। হাটবাজার উন্নয়ন। ব্রিজ, কালবার্ট নির্মাণ। গৃহহীনরা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বীর নিবাস। স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর। ৪৬৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলায় রয়েছে সাড়ে চারশতাধিক শিল্পকারখানা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৫৬টি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী শ্রীপুরে ৮ লাখ ৫৫ হাজার স্থায়ী বসবাসকারীসহ দশ লক্ষাধিক লোক বাস করে।
গত সাড়ে চার বছরে এলাকার উন্নয়নে ৮৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলমান রয়েছে ২২৫ কোটি টাকার কাজ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি’র অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয় ৩৩০ কোটি ০৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকার প্রকল্প। চলমান রয়েছে ২০৫ কোটি টাকার প্রকল্প। গত চার বছরে ১০১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪৬.৩২ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত; ১৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৯.৬৮ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন; ৪৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ; ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া নির্মিত হয়েছে ২১টি মসজিদ, উন্নয়ন করা হয়েছে ১টি বাজারের। তৈরি করা হয়েছে ৪টি বীর নিবাস, ২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, খনন করা হয়েছে ১টি খাল। বাস্তবায়ন হয়েছে ১টি পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয় ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকার প্রকল্প। উন্নয়ন তহবিলের ২৯ কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার টাকায় তৈরি করা হয় ১ হাজার ৪২৭টি রাস্তা। রাজস্ব তহবিলের ৪০ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় নির্মিত হয় ১০টি রাস্তা। এডিপির তহবিলের ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয় ১৭১টি রাস্তা ।
উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম রকিবুল আহসান জানান, স্থানীয় এমপি প্রতিটি প্রকল্পের কাজ নিজে খোঁজ খবর রাখেন। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়মিত তদারকি করেন। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অধিকাংশের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। গুটি কয়েক প্রকল্পের কাজ চলমান; যা দ্রুত সময়ে শেষ হবে। তিনি মন্ত্রনালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করে নতুন নতুন প্রকল্প এনে উন্নয়ন কাজ অব্যহত রাখছেন। চলতি অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা মেরামত,৭০ কোটি টাকার রাস্তা উন্নয়ন, ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ১০টি ব্রিজ নির্মাণসহ ২২৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় ৯ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার ১২২ টাকায় ৪০৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ২২৫ টাকায় ১ হাজার ১৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয় ১২টি ব্রিজ/কালভার্ট। ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ৮.০৫০ কিমি এইচ বিবি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ২৮০টি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এসব ঘরে ঠাঁই হয়েছে গৃহহীন ২৮০টি পরিবার। ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৬৮টি বীর নিবাস।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৫ জনকে দেয়া হয়েছে বিজিএফ কর্মসূচীর চাল। ৭০টি পরিবারকে দেয়া হয়েছে ১৫৫ বান্ডেল ঢেউ টিন। ২৩ হাজার ৯ শত ৪২ জনকে দেয়া হয়েছে কম্বল। যুব নারী-পুরুষকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ১১ হাজার ১১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয় ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর ৮৭ ভাগ ইতোমধ্যে আদায় হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মুহিতুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, বীর নিবাসসহ প্রতিটি প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদ, মাদরাসা এতিমখানায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিছু প্রকল্প এখনো চলমান আছে। খুব দ্রুত সময়ে এসব প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। এছাড়া কৃষি, মৎস্য ও পশু সম্পদের উন্নয়নে দেওয়া হয়েছে সহায়তা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে প্রকৌশলী ফয়সাল জানান, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ১৫৪টি সাবমারসিবল পাম্প দেওয়া হয়েছে। উপজেলার স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চলছে জনস্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম। তা ছাড়াও উপজেলায় ৮০টি ওয়াস ব্লক, ৩৬টি কমিউনিটি লেট্রিন ও ১২টি পাবলিক টয়লেট করে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, গত সাড়ে চার বছরে ১৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪২ কিলোমিটার মাওনা-শ্রীপুর-গোসিংগা আঞ্চলিক সড়ক, ৬৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯ কিলোমিটার মাওনা-বরমী-গফরগাও আঞ্চলিক সড়ক, ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ কিলোমিটার মাওনা- ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক, ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার মাওনা-শিশুপল্লী আঞ্চলিক সড়ক ও ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫.৩৭ কিলোমিটার শ্রীপুর-বৈরাগীর চালা আঞ্চলিক সড়কসহ ৩১০ কোটি টাকার কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
গাজীপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জানান, গত সাড়ে চার বছরে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর-৩ আসনে ১৬ স্কুল, ৬ টি মাদরাসা ও ৫টি কলেজে দৃষ্টিনন্দন চার তলা ভবন নির্মাণ করেছে। তাছাড়া ৪টি তিন তলা ও ১৭টি স্কুল, ১৩টি মাদরাসায় চারতলা ভিত বিশিষ্ট এক তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. সামছুল আলম প্রধান বলেন, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। ভাবা যায়, বর্তমান সরকার গত সাড়ে চার বছরে শুধু শ্রীপুরেই প্রায় ১১শ কোটি টাকার কাজ করেছে। এটা জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব। তার মতো দক্ষ ও সৎ লিডারশীপ ক্ষমতায় থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের সাথে শ্রীপুরের মাটি মানুষের রয়েছে আত্মীক সম্পর্ক। তিনি শ্রীপুরকে স্মার্ট আধুনিক মানবিক উপশহর গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার নিবিড় পরিচর্যায় গাজীপুর-৩ আসন ক্রমেই আধুনিক উপশহর হয়ে উঠছে।
গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। শ্রীপুরেও তার ছোঁয়া লেগেছে। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে বরমী-সিহশ্রী ব্রিজ, গোসিংগা দরদরিয়া ব্রিজ, শ্রীপুর রেল ক্রসিং-এ ফ্লাই ওভারসহ ত্রীমোহিনী থেকে আমানত শাহ সেতু পর্যন্ত বেড়ি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।