চট্টগ্রামে অপরাধ দমনে রোবাষ্ট পেট্রোলিং
প্রকাশিত: ১২-৭-২০২৩ দুপুর ৪:১
চট্টগ্রামে অপরাধ দমনে ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব সেভেন নতুন পথে পা বাড়িয়েছে। অপরাধ দমনের টার্গেটে বিভিন্ন কৌশলে টিম গঠনের মধদিয়ে রোবাষ্ট প্রেট্রোলিং চালু করেছে। এই রোবাষ্ট পেট্রোলিংকে আরো বেশি কার্যকর করতে আকস্মিক চেকপোস্ট বসিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করতে নানা কৌশল হাতে নিয়েছে র্যাব সেভেন। সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে র্যাব সেভেনের এমন উদ্যোগ অপরাধীদের আতঙ্কিত করে তুলছে।
র্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, নিয়িমিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে অস্ত্রধারী সস্ত্রাসীদের টার্গেট করছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজ, ধর্ষক ও দুর্ধষ ডাকাতদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব সদস্যরা রোবাষ্ট পেট্রোলিং কার্যক্রম চালু করেছে। যাহাতে সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যায়। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চৌকস টিম গঠনের মধ্য নিয়ে অপারাধ হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে র্যাব সেভেন। এছাড়াও গত এক মাস যাবৎ র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর এর নির্দেশনা মোতাবেক র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাষ্ট পেট্রোলিং এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অপরাধগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চৌকস টিম গঠন করেছে।
কিশোর গ্যাং: কিশোর গ্যাং সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। অল্প বয়সী কিশোরেরাই এই সব গ্যাং বা গ্রুপের সদস্য বনে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের নামে এরা সংঘবন্ধ হচ্ছে। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে ও আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এই সব গ্রুপের সদস্যরা ঝগড়া, মারামারি দিয়ে শুরু করে অপরাধের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সন্ত্রাস, মাদক, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে। ইদানিং কিশোর গ্যাং অপরাধের সংখ্যা আশঙ্খাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মাঝেও চরম। তাদের যে কোন কাজ সমাজের মানুষের জন্য যেন কোন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর গোয়েন্দা নজরধারী অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ৫০টি’র অধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গত ছয় মাসে ৮-১০টি কিশোর গ্যাংয়ের মোট ৩৩ জন সদস্যকে আইনের আওতায় এনেছে র্যাব-৭।
তুচ্ছ ঘটনায় হত্যা: সম্প্রতি অতি সামান্য ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি, মারামারি এমনকি হত্যার ঘটনা ঘটছে যা অত্যান্ত দুঃখজনক। এগুলোর পিছনে রয়েছে আধিপত্য বিস্তার। এসব ব্যাপারে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। অতিসম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ডাবল মার্ডার, পতেঙ্গায় পান বিক্রেতাকে হত্যা, আনোয়ারা থানায় কলা পাতা নিয়ে ঝগড়া করে হত্যা, রাঙ্গুনিয়া থানায় এনজিও কর্মী কল্পনা চাকমাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, আনোয়ারা থানায় পাওনাদারকে আটকে রেখে হত্যা এবং এসব নৃশংস ঘটনায় মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে র্যাব সেভেন।
মাদক সংশ্লিষ্টতা: র্যাব-৭ বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ফলে মাদকের বৃহৎ চালান আটক করছে। খুচরা মাদক কারবারী শহরের নির্জন ও পরিত্যক্ত স্থান বা এলাকায় মাদক কেনা-বেচা করছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গি বাজার, বাকলিয়া, অলংকার, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ শহরের ভিতরে এবং বাহিরে অনেক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা করছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গত ছয় মাসে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার পিস ইয়াবা, ২ হাজার ২ শত কেজি গাঁজাসহ বিপুল পরিমান দেশি এবং বিদেশি মদ উদ্ধার করছে।
ছিনতাই: চট্টগ্রাম শহর দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক শহর। এ শহরে মানুষজন অনেক রাত পর্যন্ত ব্যবসা-বানিজ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে চলাচল করে। রাত ১১০০ টার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ব বেশি চলে। ছিনতাইকালে ভিকটিম সামান্য বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা ভিকটিমকে ধারালো অস্ত্রদ্বারা গুরুত্বর আঘাত এবং অনেক ক্ষেত্রে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। র্যাব-৭ গত ছয় মাসে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা হতে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারীকে হাতে নাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
ইভটিজিং: সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এবং রাস্তা-ঘাট, শপিং মলে বিভিন্ন বয়সী নারীদের উত্ত্যক্ত বা ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটছে। এটা একটি সামাজিক ব্যাধি। নারীদের প্রতি অশালীন উক্তি করা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রভৃতি ইভটিজিংয়ের অন্তর্ভূক্ত। এটা নারীদের নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। যা সমাজে শান্তি বিনষ্ট করে সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এসকল ইভটিজিং এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও ইভটিজিং প্রতিরোধে রোবাষ্ট পেট্রোলিং পরিচালনা করছে।
ডাকাতি: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং বাঁশখালী সড়কে ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মহাসড়কে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রোবাষ্ট পেট্রোলিং করায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মিনিবাসে ডাকাতির ঘটনা রোধ সম্ভব হয়েছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা হতে গত ছয় মাসে ৬৬ জন ডাকাতকে ৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করে আইনের আওতায় নিয়েছে র্যাব সেভেন।
চাঁদাবাজি: চাঁদাবাজিতে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে, চাঁদাবাজরা সরাসরি চাঁদা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের নির্দিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে উচ্চ মূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে বাধ্য করছে। সেটাও র্যাব নজরদারীতে নিয়ে আসছি এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
গুজব রটানো: ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে, কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু স্বার্থন্বেষী মহল অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াটভাবে তথ্য উপস্থাপন করে গুজব সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই গুজব দেশে নৈরাজ্য ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে। আমরা রোবাষ্ট পেট্রোলিং এর মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের তথ্য নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে র্যাব সেভেনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আবছার সকালের সময়কে বলেন, অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করতে আমরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছি। অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম’কে তথ্য দিয়ে অত্র অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরবাসীর কাছে অনুরোধ। কিছুতেই ছাড় নেই অপরাধীদের।