বন্ধের ঘোষণা দিলেই সমিতির পোয়াবারো
চাঁদাবাজির বদৌলতে চট্টগ্রামে বেপরোয়া ব্যাটারী রিক্সা
প্রকাশিত: ১৩-৬-২০২৩ দুপুর ১২:৩৫
চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যাটারি রিক্সা চলাচল করছে নগরীর অলিগলিতে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে চলতে বাধা দিচ্ছে ট্রাফিক ও থানা পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পুলিশের এ ধরনের বাধা যৌক্তিক হলেও অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ঠিকই চলছে। যাত্রী সাধারণের প্রশ্ন ৭/৮ বছর আগে এ রিক্সা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিলেও এখনও চলছে। শিশু এবং নারীরাও চালাচ্ছে এখন ঝুঁকি নেয়ে জীবিকার টানে। ফলে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। তবে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে হিসেবের খাতায় এ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুলিশ অর্থ আদায়ে নেমেছে ব্যাটারি রিক্সাকে হাতিয়ার বানিয়ে।
প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশকে টাকা দিয়ে যদি এ যান রাস্তায় নামতে পরে তাহলে শঙ্কামুক্ত কেন হতে পারছে না চালক ও মালিক সমিতি। অভিযোগ উঠেছে, হাইকোর্টে ব্যাটারি রিক্সা মালিক-শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকে এ যান চলাচলের অনুমতি চেয়ে রিট আবেদন করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি আট বছরেও। এর বিপরীতে প্রতিটি রিক্সার মালিকের কাছ থেকে ২০১৫ সালে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছিল অনুমোদের দোহাই দিয়ে। চট্টগ্রামের প্রায় ৬০ হাজার ব্যাটারি রিক্সার বিপরীতে সমিতি অবৈধভাবে আদায় করছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু এ বিপুল অঙ্কের অর্থ কোথায় বা কিভাবে ব্যয় হয়েছে এ নিয়ে রিক্সা শ্রমিক ও মালিকদের এখনও দ্বন্ধ চলছে। কিন্তু সমিতির একশ্রেণীর অসাধুরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ যানকে ঠেকিয়ে রেখেছে। ফলে বার বার আদালতের অনুমতি নিতে চাঁদাবাজি চলেছে এ রিক্সার বিপরীতে।
রিক্সা চালকদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, এখন এ রিক্সা রাস্তায় নামতে হলে ঘাটে ঘাটে পয়সা দিতে হয়। ফলে আয়ের অর্ধেক টাকাই চলে যাচ্ছে পুলিশ ও সমিতির পেটে। এক সময় এ রিক্সা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখন অনেক নারী, শিশু এমনকি প্রতিবন্ধীও এ রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। দুই প্যাডেলের রিক্সা চালানো অনেক কঠিন চট্টগ্রাম শহরে। কারণ চট্টগ্রাম শহর পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। শরীরের শক্তি না থাকলে প্যাডেল রিক্সা চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কিন্তু যন্ত্রচালিত হওয়ায় চালককে ততটা শক্তি ব্যয় করতে হয় না। এমনকি যাত্রীও কম খরচে দ্রুত গন্তব্যে পৌছাতে পারেন। এ যানটি বন্ধ করতে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরাও নানা কৌশল বের করে পুলিশকে ম্যানেজ করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ৬০ হাজার ব্যাটারি চালিত রিক্সা রয়েছে। এই ৬০ হাজার রিক্সার পেছনে জীবিকা নির্বাহ করছে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। যাত্রীর দোহাই দিয়ে এ যান একবার চালু হয়, আরেকবার বন্ধ হয়। এ ফাঁকে ফায়দা লুটছে রিক্সা মালিক সমিতির নামে থাকা ব্যক্তিরা। তারাও চায় দফায় দফায় বন্ধ হলে দফায় দফায় অর্থ আদায়ের সুযোগ আসবে। ৭/৮ দফায় এ রিক্সা বন্ধ হয়েছে। ২০১৫ সালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী সিএমপিএ যানটি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সিআরবিস্থ একটি রেস্ট হাউসে তৎকালীন চট্টগ্রামের এমপি মঈনউদ্দিন খান বাদল ব্যাটারি রিক্সা চালক-মালিক সমিতির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ব্যাটারি রিক্সা চললে অসুবিধা কোথায়। ব্যাটারি রিক্সা চার্জে যে বিদ্যুত ব্যয় হচ্ছে তারচেয়ে বেশি বিদ্যুত ব্যয় হচ্ছে বিত্তশালীদের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে।
এ ব্যাপারে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক ডিসি সকালের সময়কে বলেন, ব্যাটারি রিক্সা নগরীর আনাচে কানাচে চলছে। তবে মূল সড়কে উঠতে পারছে না পুলিশী অভিযানের ভয়ে। তবে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে এ যান বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। তবে এভাবে এ যান চলতে দেয়া যাবে না।