কোমর ব্যাথার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রকাশিত: ৩-৬-২০২৩ দুপুর ১:৩৪
ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ
সহযোগী অধ্যাপক ও আইসইিউ প্রধান।
ব্যাথা ও আইসিইউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ।
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।
অধিকাংশ মানুষই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে কোমরে ব্যাথা অনুভব করেন কিংবা কোমর ব্যাথায় ভোগেন। স্বল্পমেয়াদি ব্যাথা এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা এক মাসের অধিক সময় থাকে। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৯০ শতাংশ রোগীই ভালো হয়ে যায়। কোমর ব্যাথার কারণ, লক্ষণ ওপ্রতিকার সর্ম্পকে দৈনিক সকালের সময়ের প্রতিবেদক নিশাদ শাহরিয়ার সাথে কথা বলেছেন শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলজেরে সহযোগী অধ্যাপক ও আইসিইউ প্রধান ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ।
কোমর ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারণ কর্মস্থলে সঠিকভাবে বসে কাজ না করা। আরেকটি কারণ বসার চেয়ারের কাঠামোগত ত্রুটি। দীর্ঘ সময় টানা বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত এবং পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয়। এ কারণে দেহে পেশির ভারসাম্যহীনতা (মাসকুলার ইমব্যালেন্স) তৈরি হয়। তখন মেরুদণ্ডের মাঝখানে থাকা ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। এই চাপ থেকে ধীরে ধীরে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া একটানা বসে কাজ করার কারণেও অনেকের ঘাড় ও পিঠে ব্যাথা হতে পারে।
এ বিষয়ে ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, যাঁরা ডেস্কে বসে কাজ করেন, অফিস-আদালত কিংবা ব্যাংকে-হাসপাতালে বসার কাজ করেন দীর্ঘ সময়, তাঁরা সাধারণত চেয়ারে বসে ঝুঁকে কাজ করেন। এ জন্য পেটের মাংসপেশি ও পায়ের সম্মুখভাগের মাংসপেশি সংকুচিত থাকে। এভাবে সংকুচিত থাকতে থাকতে এসব জায়গার মাংসপেশি একসময় শক্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, পিঠ ও কোমরের পেছনের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। এই ভারসাম্যহীনতার জন্য কোমরের ডিস্কের স্থানচ্যুতি ঘটে যাকে বলা হয় প্রলাপস লামবার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। সঠিকভাবে বসার নিয়ম না জানায় পিঠের হাড়ের বক্রতা দেখা দেয় একে বলা হয় কাইফোসিস। এ রকম দৈহিক অস্বাভাবিকতা থাকার জন্য বছরের পর বছর যাঁরা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথায় ভোগেন।
কোমর ব্যাথার কারন সর্ম্পকে ডা. আকাশ বলেন : ক্যান্সার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস কিংবা দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে কোমর ব্যাথাকে অবহেলা করা যাবে না। ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, শরীরের ওজন হ্রাস, অরুচি, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে এবং ব্যাথাটা কোমর ছাড়িয়ে পায়ের দিকে বিশেষ করে এক পায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ছড়ালে অথবা এক পায়ে তীব্র ব্যাথা বা অবশ ভাব হলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। প্রস্রাব বা পায়খানার সমস্যা, মলদ্বারের আশপাশে বোধহীনতা, মেরুদণ্ডে বক্রতা, পায়ের দুর্বলতা বা পায়ের মাংসপেশির শুষ্কতা ইত্যাদি উপসর্গকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
কোমর ব্যাথা হলে শারীরকি সমস্যা এবং পরীক্ষা নরিীক্ষার গুরত্ব
কোমর ব্যাথা হলে শারীরকি সমস্যা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা গুরত্ব তুলে ধরে শহীদ মনসুর আলী মডেকিলে কলজেরে সহযোগী অধ্যাপক ও আইসইিউ প্রধান ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলনে, শুরুতে কোমরে অল্প ব্যাথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যাথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় রোগী হাঁটতেই পারে না। ব্যাথা কখনও কখনও কোমর থেকে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। পায়ে ঝিনঝিন ধরে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের শক্তি কমে যায়। মাংসপেশি মাঝে মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়। রোগ নির্ণয়রে লক্ষ্যে কোমরের কিছু পরীক্ষা রয়েছে। ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা। নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কী না, তা নির্ণয় করা, কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করা, রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো জরুরী। যমেন- ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, শরীরে বাত আছে কি না এসব পরীক্ষা করতে হয়। ক্রনিক ব্যাক পইেনরে ক্ষেত্রে এইচএলএবি-২৭ পরীক্ষা করানো জরুরী।
কোমর ব্যাথার প্রতকিারে প্রাথমকিভাবে করণীয় সর্ম্পকে আইসইিউ প্রধান ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, সব সময় শক্ত সমান বিছানায় ঘুমাতে হবে। ফোমের বিছানায় ঘুমানো যাবে না এবং ফোমের নরম সোফায়ও অনেকক্ষণ বসা যাবে না। ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করা যাবে না। ঘাড়ে ভারী কিছু তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।মোটা ব্যক্তির শরীরের ওজন কমানো জরুরী। একই জায়গায় বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকা যাবে না। ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। ঘুম থেকে ওঠার সময় যে কোনো একদিকে কাত হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনরে পাশাপাশি রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, লাম্বার ট্রাকশনসহ বিভিন্ন ধরনরে ব্যায়াম করাতে হবে। ব্যথা হালকা হলে অবহেলা না করে ওষুধ এবং পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। কোমরে গরম ভাপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্ট বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যাথা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন-চার সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থকেে চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে।