ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনছে আম চাষীরা

news paper

নুরুল আলম

প্রকাশিত: ২৫-৫-২০২৩ বিকাল ৫:৩

67Views

 গত বছর তুলনায় এ বছর আমের ফলন ভালো হয়েছে। তাই খুশি সবুজ পাহাড়ের আম বাগানীরা। প্রতি বছর বাড়ছে বাগান। যুবকরা বাগান করছেন বেশি। আম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। জেলায় প্রায় ৪ হাজারের মত আম বাগান আছে অনা বৃষ্টির কারণে আমের আকার ছোট হয়েছে বলে জানান বাগানীরা। খাগড়াছড়ি সদরের রোওয়াসায়াপাড়া এলাকার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা য়ায়, বাগানীরা পরিপক্ক আম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

শ্রমিকরা গাছে উঠে আম সংগ্রহ করছেন। আবার কেউ বাচায় করে ঝুকিতে আম রাখছেন। ঝুঁড়ি ভর্তি হলে পিকাআপ, চাঁদের গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে রাখছেন। পরে এখান থেকে সারাদেশে আম পাঠাচ্ছেন। এবাবে বাগান মালিকরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত পার করছেন।

রোওয়াসায়াপাড়া এলাকার আম বাগান মালিক উমংচিং মারমা বলেন, আমার পনের একরে তিন বাগানে ৬০ থেকে ৭০ টন আম পাওয়া পাব তাতে পনের থেকে বিশ লক্ষ টাকা আয় হবে বলে আশা করি। বাগান মালিক উমংচিং মারমা বলেন, বাগানে বেশি ভাগ আম্রপালি, বারি-৪, বাঙ্গুয়েসহ তার পাশাপাশি কিছু বিদেশী জাত আছে। গোপালভোগ, ফজলি বিক্রি শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ ও সার কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করে।

পানখাইয়াপাড়া এলাকার আম বাগান মালিক মংশিপ্রু মারমা বলেন, গত বছর চাইতে এ বছর ফলন প্রচুর। নিজস্ব তিন বাগানে ত্রিশ একক আছে। নিজস্ব বাগান ছাড়া চুক্তিতে বাগানের ফলন বিক্রি করে দেড় কোটি টাকা পাব বলে আশা করি। বাগান মালিক উমংচিং মারমা বলেন, এ বছর ভালো আবহাওয়ার কারণে ফলন যতেষ্ট ভালো বলা যায়। তবে অনা বৃষ্টির কারণে আমের আকার ছোট হয়েছে আম্রপালিসহ সকাল জাত। তাছাড়া ফলন ভালো। বাগান মালিক বাবুষি চৌধুরী বলেন, গত বছর তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। ২৫ একক টিলার মধ্যে আম বাগানে আম্রপালি, রাঙ্গুয়ে, বারি-৪ সহ বিভিন্ন প্রজাতের সব মিলিয়ে ৮টি বাগান আছে। আট বাগানে এ বছর দেড়শ টন ফলন পাওয়া বলে আশা করি তাতে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আয় হবে।

মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুষি চৌধুরী বলেন, গত বছর চাইতে এ বছর সমিতির ৮২ সদস্য সবার বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় আমের আকার ছোট এসেছে। বাবুষি চৌধুরী বলেন, আম বিক্রি শুরু হলে তিনটা প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ঢোল দেওয়ার কারণে আম কিনতে বেপারিরা খাগড়াছড়িতে আসে না। তাছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসে টাকা নেই বেশি। কিছু দিন আগে চট্টগ্রামে এক কাটুন আম পাঠালাম এসএ পরিবহনে, কেজি প্রতি ২০টাকা নিল।

খাগড়াছড়ি ফলজ বাগান মালিক সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, জেলায় প্রায় ৪ হাজারের মত আম বাগান আছে। গত বছর তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। বাজারজাত নিয়ে চিন্তায় আছি। খাগড়াছড়ির ঢোল কেন্দ্রগুলো ডাকাতি করে বেশি। পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনেও করে না। তার কারণে বাহিরের ব্যবসায়িরা ঢোলকেন্দ্রের ডাকাতির কারণে খাগড়াছড়িতে আম কিনতে আগ্রহ কমিয়ে পেলেছে। প্রশাসনের আন্তরিকতা স্ব-ইচ্ছে লাগবে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আম উৎপাদনের উল্লেখ্যযোগ জেলা। এই জেলার মাটির পুষ্টি উপাদান জলবায়ু আম উৎপাদনের উপযোগি। বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন হয়। যেমন খাগড়াছড়ির বিখাত সুমিষ্ট আম্রপালি আম, বারি-৪ ব্যানানাসহ অন্যান্য জাতের আম। 

খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারি কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, বর্তমানে আম চাষিরা আধুনিক চাষাবাদ প্রদ্ধতি ব্যবহার করছে। যার ফলে ভালো ফলন পাচ্ছে। আমরা বাগানে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়। নতুন নতুন জাত উৎপাদন করে থাকি এবং চাষিদের সরকারি নির্ধারিত মূলে চারা বিতরণ করে থাকি। তিনি বলেন, বাগানিরা বছরে যে লাভটা পায় ওই লাভ দিয়ে সারা বছর চলতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে অনেক পাহাড় পর্বত রয়ে গেছে এইগুলো অনেক ফল বাগানের আওতায় আসতেছে। প্রতি বছর আবাদ বাড়ছে।

পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আম্রপালি আমের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তার কারণ হল এই এলাকার আবহাওয়া এই বছল আম উৎপাদনের জন্য অনুকুল ছিল এবং কৃষকরা সময়মত সঠিক পরিচর্যা করেছে। কৃষি বিভাগের পরার্মশ অনুযায়ে কাজ করেছে যার কারণে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, আম্রপালি আমটা উদ্ভাবন করা হয়েছে এটি নিয়মিত ফল প্রদান করে। প্রতি বছর ফল দেয়। পোকা-মাকড় দমনের প্রদ্ধতিতে কৃষকরা এখন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। আম্রপালি আম জাতটা খাগড়াছড়ি জেলাতে আবহাওয়া অনুকুল হওয়ায় এ অঞ্চলে এটার ফলন ভালো দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এই আম জেলার চাহিদা মিটানোর পরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় বাজারগুলোতে সরবারহ করছেন এবং ইদানিং এখানে রফতানি যোগ আম চাষ করা হচ্ছে। এই আমগুলো যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ইউরোপ দেশের বিভিন্ন রপতানি হচ্ছে। এই আম চাষ করে চাষিদের আর্থিক সচল আনতে সক্ষম হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের জেলা, উপজেলা এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আম চাষিদের আম পরিচর্যাসহ সকল বিষয়ে সাবিক সহযোগিতা করছেন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এখানে তিন হাজার সাতশ তিরানব্বই হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। ফলন হেক্টর প্রতি দশ থেকে বার মন পাওয়া যায়। মৌসুমে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা করে বিক্রি হলে আমরা দেখেছি এই বছর কৃষকরা ২২শ কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। 


আরও পড়ুন