আদালতের নিদের্শ অমান্য করে বার বার জায়গা দখলের চেষ্টা

news paper

নুরুল আলম

প্রকাশিত: ১৯-৫-২০২৩ বিকাল ৬:২৪

102Views

বিচারের বানী নীরবে কাঁদে। বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। বার বার হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে হামলাকারী ও দখলদারদের নিকট থেকে। দুই যুগেও সমাধান হয়নি জমি বিরোধ। দফায় দফায় মামলা-হামলা করে নিঃস করে দিচ্ছে অসহায় মানুষদের। বিচারের দারপ্রান্তে গিয়ে যেন কোন লাভ হচ্ছে না। হামলা ও দখলকারীদের খুটির জোর এতটাই যে তারা বিচারের ফয়সালাকে তোয়াক্কা না করেই বার বার হামলা ও জায়গা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমনি এক ঘটনা ঘটেছে মানিকছড়ির তিনট্যহরী এলাকার মৃত সিদ্দিক আহাম্মদের পরিবারের উপর।

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়িতে চলছে অবৈধ জায়গা দখল, ভূমি জালিয়তী ও নানান অপকর্ম। এক শ্রেণির অসাধু দুস্কৃতিকারীদের মদদে এসব কাজ করে বেড়াচ্ছে দখলকারী মহলটি। একের পর এক হামলা মামলা দিয়ে অসহায়দের হয়রানি করেই যাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার বলে দাবি করেন সচেতন মহল।

উল্লেখ্য, মানিকছড়ির তিনট্যহরী এলাকার প্রতারক চক্র একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভূমি দখলের চেষ্টাসহ নানান অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যা প্রকৃত জমির মালিক মৃত সিদ্দিক আহম্মদের ছেলে ও তার পরিবার পরিজনদের র্দীঘধরে বিভিন্ন মামলা হামলা ও অবৈধ ভাবে জায়গা দখলের চেষ্টা করে হয়রানি করছে। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, সীমানা পরিচিহ্ন মামলা নং-৫২/২০০৩ এর ২০/০২/২০০৬ ও ২৪/৯৪ মামলার রায় এর প্রতিবেদনের আদেশের সংযুক্ত জারি মামলা নং ৫৪/২০০৩ এর ২৯/২/২০০৬ ও ৩১/০১/২০০৭ এর সহাকারী কমিশনার (ভূমি) সিভিল জর্জ আদালতের তদন্তের আদেশ অমান্য করে বার বার অবৈধভাবে গাছ বাঁশ কেটে নেওয়াসহ হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। সিদ্দিক আহাম্মদের রেকর্ডীয় জায়গা হচ্ছে, ১৬৮নং খতিয়ানের ৩.৯৫ একর ৪৮নং হোল্ডিং এর ৫.০০ একর এবং ৫০৫নং হোল্ডিং মূলে ৩.৫০ একর মোট ১২.৪৫ একর জমি রেকর্ডভূক্ত আছে। 

উক্ত রেকর্ডভূক্ত ভূমি ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আদালতের ২২/১৯৭২ মামলা হাই কোর্টের ১৯৮২ সালের রায়ের মোতাবেক অতিরিক্ত ২.৯২ একর জমি আবেদনকারী প্রাপ্ত হয়েছে। মোট জায়গার পরিমান ১৫.৪ একর। 

অপরদিকে চাইহ্লাপ্রু দেওয়ানের ছেলে অংগ্য দেওয়ানের সাথে সিদ্দিক আহাম্মদের ছেলেদের ৫২/২০০৩ সীমানা পরিচিহ্ন মামলার ১১নং বিবাদী ছিলেন। তিনি আদালতে হাজির হয়ে ৪ একর জায়গায় তার বাবার নামে রেকর্ড ভূক্ত আছে বলে দাবি করলে, তার জায়গার মামলা নিস্পত্তির পর সরকারি আমিন-কামিনগো ধারা বুজিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে তা অমান্য করে একটি মহলসহ তার ওলি ওয়ারিশরা অবৈধ দখলের পায়তারা করছে। যাহা হাই কোর্টের চলমান মামলা নং সিভিল রিভিশন ২৪৩১/২০১৩ মামলার কার্য তালিকায় চলমান রয়েছে।  

সম্প্রতি, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার তিনট্যহরী ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকায় মৃত সিদ্দিক আহম্মেদের ছেলেদের এবং আব্দুল হকের ক্রয়কৃত রেকর্ডীয় জায়গা একটি চক্র জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে হামলা ও মারধর করেছে। অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টায় জমির মালিক বাধাঁ দেওয়ায় সন্ত্রাসী কায়দায় হামলাকারী চক্রের সদস্যরা যৌথভাবে তাদের মারধর করে। এ সময় ৫ জন আহত হয়। 

এ সময় ঘটনার মূূল হোতা শাহীন ( পিচ্ছি শাহীন প্রকাশ আবুল) সহ আব্দুল আলী, মো: রুবেল হোসেন, কালাম, মায়াধনীসহ মহিলা ও দুষ্কৃতকারী ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ এ দখল কাজে অংশ নেয়। জমি দখল করতে আসা সঙ্ঘবদ্ধ দলটি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় এর আগেও আরো একাধিক ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনট্যহরীতে রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে বেশ কিছু লোকজন অপকর্মের সাথে জরিয়ে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বরং তাদের অত্যাচার ও হয়রানির বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তার উপর নির্যাতন হুমকি হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। ইচ্ছেমত অন্যের জায়গায় দখলের জন্য কৌশল অবলম্বন করে আসছে চক্রটি। আহত ব্যক্তিরা মানিকছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই নিয়ে আদালতে সি আর মামলা হয়েছে যার মামলা নং- ২৪৪/২০২২খ্রি। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি তদন্তে রয়েছে। 

২ জুন ২০২২ (বৃহস্পতিবার) এ ব্যাপারে জমির মালিক নুরুল আলম সাংবাদিক বিকাল সাড়ে ৪টায় তার পরিবারের সদস্যদের থেকে জানতে পারেন। তিনি ৯৯৯-এ কল করলেও পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যেতে ব্যর্থ হয়ে প্রায় ১ ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌছায়। মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনর্চাজ নিদের্শ দেন সাব-ইন্সপেক্টর আশিকুর রহমানকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জমি দখলের চেষ্টায় হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে হামলাকারী দলের মূলহোতা শাহীন ও তার সাথে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাস্তা থেকে পুলিশ আটক করে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেখানে মালামাল বহনকারী অটোরিক্সা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে পুলিশ শাহিন ও অন্যদেরকে জিজ্ঞাসা করলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তারা। 

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে শাহিন বলেন, জায়গাটি ঘেরা-বেড়া দেওয়ার জন্য লোকজন নিয়ে আসি। এক পর্যায়ে আব্দুল হক ও তার বাবা বাধাঁ দিলে আমাদের মধ্যে মারামারি সংঘঠিত হয়। এ বিষয়ে ৪নং তিনট্যহরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাটি ফোন কলের মাধ্যমে জানান আব্দুল হক। জানতাম না জমি দখলকারীরা লোকজন নিয়ে জমি দখল করতে এসে জমি ঘেরা-বেড়া এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। 

এই বিষয়ে মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আনচারুল করিম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্যায় ভাবে জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


আরও পড়ুন