জমিদার বাড়ি নিয়ে দু গ্রুপের দ্বন্দ্ব-আতংকে দিন কাটছে দখলে থাকা পরিবারের!
প্রকাশিত: ১৯-৫-২০২৩ দুপুর ৩:১৪
ভারত উপমহাদেশের মুঘল আমল থেকে ব্রিটিশদের শাসন আমল পর্যন্ত জমিদার প্রথা চালু ছিল। এই জমিদারদের বাড়ি মানুষ জমিদার বাড়ি হিসাবে জানতেন। কালের বিবর্তনে বাংলার মাটি থেকে জমিদার ও জমিদারি প্রথা উঠে গেছে,কিন্তু মুছে যায়নি তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনো অনেক সৃতি।তেমনি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোর নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আটঘড়িয়া জমিদার বাড়ী অবস্থা খুব নাজুক হলেও দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব বিরাজমান।জানাযায়, উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নে আটঘড়িয়া গ্রামের জমিদারি সূত্রে বসবাস করতেন জমিদার উৎসব নারায়ণ চক্রবর্তী।পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হন তার দুই পুত্র জমিদার হিমেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী এবং ধীরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী। বাবার মৃত্যুর পর ছেলেরা জমিদার বাড়ী কিছু দিন দেখভাল করার পরে মূল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান তাদের কাজের মেয়ে কুলছুম বিবি। জমিদারের দুই পুত্র কাজের মেয়ে কুলছুম বিবিকে ইব্রাহিম হোসেনের এর সাথে বিয়ে দিয়ে ১৫ জানুয়ারী ১৯৬৯ সালে যার দাগ নম্বর ৩৩,৩৪ আর এস ১১৬,খতিয়ান ৪৬৪ থেকে জমিদার হিমেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী এবং ধীরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী পনে সাত বিঘা জমি কবালা দেওয়ার কিছু দিন পরে মারা যান।
পরবর্তীতে জমিদারের ওয়ারিশীয়নরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়।এর পরে কুলছুম বিবি জমিদার বাড়ীতে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও তিনি স্থানীয় আটঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামেও ৬০ শতক জমি দান করেন।জমিদারের পাঁচ বিঘা জমির উপর ভুমিহীন প্রায় ৩০টি পরিবার বসবাস করায় তাদেরকে জমিদারের এই জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ করায় ব্যস্ত স্থানীয় ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা। ভুমিহীনরা জমিদার বাড়ী ছেড়ে চলে না যাওয়ায় তাদের উপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের চাষকৃত পুকুরের মাছ মেরে নিয়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।এতে বাঁধা দিলে তাদের উপর চলে নানারকম নির্যাতন। এর পরে জমির মালিক বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ আদালতে মামলা করার পরেও তাদের উপর নির্যাতন থেমে নেই!এ বিষয়ে জমিদাদের কবলা সূত্রে জমিদার বাড়ির বর্তমান মালিক কুলছুম বিবি জানান,জমিদার বাড়িতে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের আগে আমি কাজ করতাম।আর কাজের মেয়ে হওয়ায় আমাকে জমিদাররা আমার সাথে ইব্রাহীম হোসেন এর সাথে বিয়ে দেয়। বিবাহ সূত্রে আমার স্বামী জমিদার বাড়িতে সে সময় জমিদারদের দেখাসোনাসহ আমার সাথে কাজ করতেন। জমিদাররা এক সময় আমার বিবাহের পরে এই জমিদার বাড়ির জায়গা আমার নামে কবলা করে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সন্তান আর স্থানীয় ভূমিহীন প্রায় ৩০ টি পরিবার নিয়ে আমরা বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য নানা রকম অত্যাচারসহ হয়রানি করে আসছে একটি মহল। আমরা এই মর্মে আদালতে মামলা করার পরেও আমাদের এখনো প্রভাবশালীরা নানা ভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছে।এ বিষয়ে কুলছুম বিবির বড় ছেলে বাদশা হোসেন জানান,জমিদারদের কবলা সূত্রে আমারা ছোট বেলা থেকেই এই বাড়িতে বসবাস করে আসছি।স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদের উচ্ছেদ করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাশিল করার জন্য আমাদের নানা ভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করেই চলেছে। জমিদারদের জমিতে মোট ৯৫ শতাংশ পুকুরে আমি খাবারসহ ৩ লক্ষ টাকার মাছ চাষ করেছিলাম।কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে আমাদের সব মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে টাকা আৎসাত করেন।আমাদের একটা টাকাও দেয়নি তারা।এখন আমরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রতিনিয়ত আতংকে দিন কাটাচ্ছি। এ বিষয়ে ধানগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর ওবায়দুল ইসলাম মাছুম বলেন,ঐতিহ্যবাহী এই জমিদারবাড়ি নিয়ে বর্তমানে মামলা চলমান আছে।আদালতের রায় অনুযায়ী জমিদার বাড়িটি একটি পক্ষ ভোগদখল করবে।জমিদার বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন,এবিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।মামলায় যে পক্ষ রায় পাবে তারাই জমিদার বাড়িটিতে বসবাস করবেন।