বিএনপি আছে বিএনপি নেই

news paper

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১-৫-২০২৩ দুপুর ৩:৫৭

59Views

কয়েক দিন পরই ভোট গ্রহণ হবে দেশের বৃহৎ পাঁচ সিটি করপোরেশন- রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর ও সিলেটে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু তাদের দলের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। মূলত কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে ‘জনগণ আমাকে চায়’ দোহাই দিয়ে তারা নির্র্বাচন করছেন। এতে বিব্রত হচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। নির্দেশ অমান্যকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এতে তারা মোটেও ভয় পাচ্ছেন না। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে মূলত বিএনপি নেই। কিন্তু তাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। এতে দলটির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অনড় অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের অনেকে অংশ নিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আগে সব চেয়ে বড় নির্বাচন এই সিটি ভোট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ থেকে বাদ যাচ্ছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরাও। তাদের মধ্যেও উৎসবের আবহ রয়েছে। পাঁচ সিটিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দলীয়ভাবে প্রার্থিতা করার সুযোগ না থাকায় স্বতন্ত্র পরিচয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পক্ষে আগ্রহী দলটির নেতাকর্মীরা। 

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে ৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ সিটিতেই ভোট  হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। স্থানীয় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র পরিচয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে আগ্রহীরা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার প্রবণতা থাকলেও আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি আলাদা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এমনটি মনে করছেন প্রার্থীরা। গাজীপুর সিটির একটি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হান্নান মিয়া হান্নু বলেন, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি এখন দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছি। আমরা নির্বাচনে অংশ করি- সরাসরি মানুষের ভালোবাসা, সহানুভূতি পাওয়ার জন্য। দল না চাইলেও কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন থেকে বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সরকার থেকেও বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনও বলছে। আমরা আশা নিয়ে আছি। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আমাদের বিভিন্ন রকম হুমকি, মনোনয়নপত্র তুলে নেওয়ার’ কথা বলা হলেও আদতে এর কোনো আলামত পাচ্ছি না। এ কারণে আমরা নির্বাচনের পক্ষে। মো. হান্নান মিয়া হান্নু দাবি করেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনো দলের কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি। নির্বাচন করতে পারবে না- এমন কথা বলে তাদের সাবধানও করা হয়নি। হান্নান মিয়া হান্নুর মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আরও কয়েকজন কাউন্সিলর ফয়সাল আহামেদ সরকার, হাসান আজমল ভূঁইয়া, মো. আবুল হাসেম, মো. সফিউদ্দিন, মো. তানভীর আহম্মেদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা স্থানীয় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। 

স্থানীয় বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। এ কারণে তারা স্বতন্ত্র মার্কায় নির্বাচন করবেন। একইসঙ্গে প্রার্থী না হলে নির্বাচনি ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাসান আজমল ভূঁইয়া চারবারের কাউন্সিলর। বর্তমানে এই কাউন্সিলরও আসন্ন সিটি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আমি চারবার নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার মানুষ চায় আমি যেন প্রার্থিতা করি। না হলে যাদের হাতে ওয়ার্ড নিরাপদ নয়, তাদের কাছে চলে যাবে। সে কারণে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ও তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতেই আমি প্রার্থিতা করতে চাই। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দলের কোনো নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পাইনি। আমাদের মহানগর বিএনপির বৈঠক আছে, এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ বলেন, রাজশাহীতে সংরক্ষিতসহ কাউন্সিলর পদে বিএনপির সাত জন নেতা রয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।

বিপাকে বিএনপি: পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতায় পড়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলন চলমান থাকায় নির্বাচনের কারণে দলীয় কর্মসূচিতে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নেতারা। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত সময়ে এসে আন্দোলনের গতি শ্লথ হয়ে যাবে- এ নিয়েও চিন্তা রয়েছে দলের। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ ও সিটি কাউন্সিলর পদ গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মেয়র পদে যারা প্রার্থিতা করবেন- তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বিশেষত, মেয়র প্রার্থীরা যেহেতু পরিচিত মুখ, সে কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বড় কোনো পদে না থাকলে কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে পারে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে মেয়র প্রার্থিতা করলে বহিষ্কারের ব্যত্যয় ঘটবে না।

দলীয় সূত্র জানায়, মেয়র হোক বা কাউন্সিলর হোক- দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট করে কোনো নির্দেশনা আসলে দেওয়া হয়নি। যাদের মেয়র প্রার্থিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে, দলে তাদের জায়গা কী হবে- এ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিকল্প কী করণীয়, সে নির্দেশনাও দলের হাইকমান্ড দেননি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী একজন সাংবাদিককে বলেন, দলের অবস্থান খুব পরিষ্কার। দলের পদে থেকে কেউ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এটা জানার, বুঝার দরকার নেই। দলে থেকে নির্বাচন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন আন্দোলন করছি, কীসের নির্বাচন? যাদের সরানোর জন্য আন্দোলন, তাদের অধীনে নির্বাচন কীসের? এ বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।


আরও পড়ুন