সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ৫-৫-২০২৩ বিকাল ৬:২

17Views

দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা, উচ্ছেদ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং আরও তিন কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়।বাঙালি ও উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জন করে। 
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে নতুন ভূখন্ড হিসেবে আবিভূত হয় যার নাম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধিরা বাংলাদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপিরবারে হত্যা করে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে পাকিস্তানের দোসর বিএনপি জামায়াত জোট ভেবেছিল যে তারা বঙ্গবন্ধু ও দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেবে।পচাত্তর পরবর্তী মুস্তাক জিয়া গং এর অগণতান্ত্রিক সামরিক সরকার এর শাসনামলে সাধারণ জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াকে সরিয়ে জেনারেল এরশাদ সেই ধারা অব্যহত রাখে। দেশের মধ্যে সৃষ্টি করে স্বৈরাচার। আর এই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন নেতৃত্বে দিয়ে শেখ হাসিনা তার পিতার যোগ্য উত্তরসরী হিসেবে আবিভূত হন।তারপর দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।  
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বাংলাদেশ দেশ পায় একজন দক্ষ ও চৌকস কান্ডারী।তিনি তার পিতার লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা  বাস্তবায়নে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ২০০১ সালে  আবার দেশের ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি অবৈধ পন্থায় ক্ষমতার মসনদে আসে। তাদের ষড়যন্ত্র ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা আকড়ে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭/০৮ একটি সামরিক সমর্থিত সরকার দেশ চালায়। এই সুযোগে দেশের রাজনীতিতে ঢুকে পরে বিভিন্ন বিদেশি অপশক্তি। আর এই অপশক্তি দেশে ও দেশের বাহিরে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করে কলঙ্কময় অবস্থার সৃষ্টি করে। তখনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নিরুঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পায় তার পথের দিশা।  
পরপর তিনবার আওয়ামী সরকার গঠন করে  দেশ ও দেশের কাঠামো লেগেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। আর এই উন্নয়নের ছোঁয়া যখন দেশের  প্রতিটি মানুষ ভোগ করছে।শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশি বিদেশি সংস্থা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করছে। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে যখন দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে।আর শেখ হাসিনার সরকারকে টানা ৪র্থ বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানে মানুষের আকন্ঠ সমর্থনের রব উঠেছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী শক্তিরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।তারা তাদের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। আবার দেশে ১/১১ এর মতো বিএনপি জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিভিন্ন বিদেশি অপশক্তির কাছে বাংলাদেশ সুনাম ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতায় সরব। তারা আগামী নির্বাচনকে ধূলিসাৎ ও দেশের সম্পদ বিনষ্ট করার পায়তারা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ সহ সকল শক্তিকে ১৯৭১ এর মতো মহান স্বাধীনতা অর্জনের মতো ঐক্যব্দ্ধ আন্দোলন করতে হবে এবং  স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রুখে দিতে হবে।
দেশে অগণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রবর্তক বিএনপির উপর জনগণ আর আস্থা রাখতে চায় না। অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির প্রতিভূ বিএনপি এ দেশে বার বার তামাশার নির্বাচন আয়োজন করেছে। সামরিক শাসন জারি রেখে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ/না ভোট, সেনা প্রধানের দায়িত্বে থেকে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছিল। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন করেছিল। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ২০০৭ সালে বিএনপি যে নির্বাচনের আয়োজন করে গণআন্দোলনের মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশে সরকার পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য একটাই, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানো। কিন্তু তারা সরকারের ক্ষতি করতে গিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতি করছে । বিএনপি-জামায়াত চায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে । শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন, অগ্রগতিতে বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা বিএনপি-জামায়াতের ভালো লাগে না। কারণ, ক্ষমতায় থাকতে তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারেনি। এ কারণে তাদের গাত্রদাহ হয়। আর এখন তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। 
বিএনপি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিএনপির আমলে লুটপাটের মাধ্যমে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিই ছিল তাদের রাজনীতির একমাত্র নীতি। দেশের জনগণ বিএনপির সেই অপশাসনের দুঃসময়ে ফিরে যেতে চায় না। বর্তমানে সকল সঙ্কট মোকাবিলা করে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন বলেই বিএনপির গাত্রদাহ হচ্ছে। 
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম কারণ হলো দেশের স্থিতিশীল রাজনীতি। সুদীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সব ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার যোগ্য ও সুকৌশলী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিএনপির নেতাদের উচিত অহেতুক মানুষকে কষ্ট দিয়ে রাজনৈতিক খেলা না খেলে আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। তারা যদি মনে করেন দেশের মানুষ সরকারকে পছন্দ করে না তাদের পছন্দ করে, তাহলে ভোটে আসুক। ভোটের মাধ্যমে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা সরকারে আসবে। আর কাদের মাধ্যমে দেশের জনগণ উপকৃত হয়, কোন সরকারের অধীন দেশের উন্নয়ন হয়—সেটা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে এমন যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসাথে চলে, তাই গত দেড় দশকে যে উন্নয়নের ধারা রচিত হয়েছে তাকে এগিয়ে নিতে হবে। গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে এমন যেকোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।


আরও পড়ুন