পিছু হটছেন বিদেশিরা

news paper

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৪-৫-২০২৩ দুপুর ৩:৫৩

38Views

*   দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন
*    অভ্যন্তরীণ বিষয় বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানি কূটনীতিক
*   বোধোদয় হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ৮ মাসের মতো বাকি। এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজনীতিক দলগুলো। অনেক দল প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যেও নির্বাচনের সুর। বাদ যাচ্ছে না আরেকটি বড় দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। তাদের নেতারাও নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিংয়ের পাশাপাশি ছুটছেন এলাকায়। মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকে এবার ঈদ করেছেন এলাকায়। অনেকে আবার মতবিনিময়ও করছেন। চাইছেন দোয়া। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে পিছু হটছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। অতীতের সব নির্বাচনে তারা নাক গলিয়েছেন। এবার তাদের মুখেও ভিন্ন সুর। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর ঢাকায় জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না। তাদের বোধোদয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।  

জানা গেছে, নির্বাচন এলেই বিদেশি কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ বেড়ে যায়। বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে আলোচনা শুরু করে দেয়। কখনো তাদের নেতারা কূটনীতিকদের বাসায়; আবার কখনো নিজেদের বাসায় ডিনার কিংবা লাঞ্চ পার্টি আয়োজন করে। দিন শেষে কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে ছবক দেন। তারা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের তাগিদ দেন। অতীতে অনেক নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে তারা মত দিয়েছেন। নির্বাচন এগিয়ে এলেই তারা জ্ঞান দেওয়া শুরু করেন। অনেক সময় তারা সংকট সমাধানের নামে এ দেশে ছুটে আসেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, অভ্যন্তরীণ, ঘরোয়া নির্বাচন হওয়ায় এর বাইরে আমার আর কিছু বলার নেই। বাংলাদেশে অন্য একটি দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পরে এটিকে অন্যায্য ও অন্যায় নির্বাচন বলে দাবি করতে পারে- এমন পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে মোকাবিলা করবে তা জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্যাটেল বলেন, যেহেতু এটি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই যুক্তরাষ্ট্র চায় যে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হোক। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি বিস্তৃতভাবে বলব যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ গত বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছে এবং আমরা এই সম্পর্ককে আরও গভীর করার অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি বলেন, ঢাকা ও ওয়াশিংটনের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে তাদের ব্যাপক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা রয়েছে - তা জলবায়ু পরিবর্তন হোক, অর্থনীতি হোক, মানবিক সংকট মোকাবিলা এবং অন্যান্য বিষয়ও হোক। এদিকে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকের বিষয়ে জাপান দূতাবাসে বুধবার সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ উল্লেখ করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করবেন বলে জানিয়েছেন। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ২০১৮ সালের নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে ইতো নাওকি বলেছিলেন, ‘আমি শুনেছি, (গত নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সরকারি সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হওয়ার পর এক সাংবাদিক এ বিষয়ে জাপানের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ব্রিফিংয়ের সময় একজন সাংবাদিক গত বছরের নভেম্বরে পূর্ববর্তী জাপানি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের বিষয় উল্লেখ করার পর ইওয়ামা কিমিনোরি এ কথা বলেন। 

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন কারো মুখাপেক্ষি না। দেশ এগিয়ে গেছে বহু দূর। আরও এগিয়ে যাবে। বিদেশিরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এ কারণে তারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে আর নাক গলাতে চান না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক ভালো। যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক মানুষ খুন হন। পুলিশের হাতে অনেক মানুষ নিহত হয়। মার্কিন নির্বাচনেও সহিংসতা হয়। অথচ কোনো কিছু হলেই তারা এ দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ট্যাবলেট বিক্রি শুরু করে দেন। 


আরও পড়ুন