ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ফটিকছড়ির দর্শনীয় স্থানসমূহ
প্রকাশিত: ২০-৪-২০২৩ দুপুর ৩:৫
এবার ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন ফটিকছড়ির দর্শনীয় স্থান সমূহ। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত মনোমুগ্ধকর স্থানের পাশাপাশি রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষি অনেক স্থাপনা। সবুজের বিস্তীর্ণ সমরোহে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সাজিয়েছে ফটিকছড়িকে। তার ভিতর ফটিকছড়িকে আরো সুন্দর্য করে তোলেছে চা-বাগান, রাবার বাগান, বৃক্ষ বাগান সহ চির যৌবনা খাল, নদী, ছড়া, সবুজে ঘেরা পাহাড় ও পুরানো স্থাপনা গুলোর স্থান সমুহ ।
উপমহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ
এখানে অত্যান্ত নজড়কড়া কারুর্কাযে উপমহাদেশের মহান আধ্যাত্বিকসাধক গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহম্মদুল্লাহ মাইজভণ্ডারী(কঃ), হযরত মাওলানা গোলামুর রহমান (কঃ) বিশ্ব অলি শাহেন শাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর মাজার শরীফসহ অন্যান্য আওলাদে মাইজভাণ্ডারীগনের মাজার শরীফ অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।
ফটিক ছড়িতে রয়েছে ১৭টি চা-বাগান
প্রতিটি চা-বাগানই আপন সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। চা-পাতা তুলার অপরূপ দৃর্শ্য, নজর কড়া বাংলো মনকে রাঙ্গিয়ে তুলে।বিশেষ করে উদালিয়া চা বাগান, কর্ণফুলী চা বাগান, নেপচুন চা বাগান, কৈয়াছড়া চা বাগান, রামগড় চা বাগানসহ আরো বেশ কয়েকটি বাগান রয়েছে যেখানে অনুমতি সাপেক্ষ ঘুরা যাবে।
ফটিকছড়িতে রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এশিয়ার বিখ্যাত দাঁতমারা রাবার বাগানসহ বেশ কয়েকটি রাবার বাগান । বাগান গুলির সারিবদ্দ গাছ, রাবার গাছের কসপড়া দৃর্শ্য খুব সহজে মনকে রাঙ্গিয়ে তোলে । বিশেষ করে দাঁতমারা রাবার বাগানের সেলফি রোডের অনন্য সৌন্দর্যের কথা সারা দেশ জুড়ে।
হাজারিখিল অভায়ারণ্যে রয়েছে প্রায় ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১২৩ প্রজাতির পাখি, আট প্রজাতির উভচর, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও বিলুপ্ত প্রজাতিসহ ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। হাজারিখিল অভয়ারণ্যে রয়েছে হরিণ, হনুমান, বানর, খরগোশ, সজারু, বনছাগল, বনরুই, বনশূকর, বনবিড়াল, শিয়াল, উদবিড়াল, গোরখোদক, ময়না, টিয়া, ঘুঘু, মাছরাঙা, সাদা বক, চড়–ই, ডাহুক, কাক, দোয়েল, বুলবুলি ইত্যাদির বিচরণ। এছাড়া এ অভয়ারণ্যে রয়েছে বনকুকুর, বনমুরগি, তক্ষক, গিরগিটি, মুখপোড়া হনুমান, বানর, গুইসাপ, বড় অজগর, হরিণ, মেছোবাঘ ইত্যাদি। বৃক্ষরাজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেগুন, গর্জন, গামারি, চাপালিশ, তেলসুর, জারুল, লোহাকাঠ, ছাতিয়ান, গুটগুটিয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং প্রাণীর জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বিরল প্রজাতির বৃক্ষ বৈলামও আছে এ অভয়ারণ্যে। এ বৃক্ষের উচ্চতা প্রায় ১০০ মিটার। সুউচ্চ বিরল প্রজাতির এ বৃক্ষটি হাজারিখিল ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না। রয়েছে ট্রি একটিভিটিজ ব্যবস্থা। হাজারিখিল অভয়ারণ্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এখানে প্রতিদিন পর্যকদের আগমন ঘটে।
ফটিকছড়িতে রয়েছে সরকারিও ব্যক্তিগত ভাবে গড়েতোলা বৃক্ষ বাগান যে গুলো দেখলে নিমিষে চোখ জুড়ায়। তাছাড়া রয়েছে পাহাড় পর্বত ও সবুজের ঝোপঝাড় ঘেরা বৃক্ষরাজি, নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত প্রকৃতির একান্ত সূর এখানে পাওয়া যায়। বাঙ্গালর নদী কি শোভাশালিনী/কি মধুর তার কুল কুল ধ্বনি/ দু-ধারে তাহার বিটপীর শ্রেণী/ হেরিলে জুড়ায় হিয়া/---------- কবি কায়কাবাদের রচিয়তা এ কবিতার সত্যতা ফটিকছড়িতে মিলে।
ফটিকছড়ির বুক চিরে বয়ে যাওয়া দুরন্ত নাগিনী অনন্ত কনা বিস্তারিয়া কর্ণফুলির মিলন প্রত্যশায় এশিয়ার মিটা পানির অন্যতম নদী চির যৌবনা হালদা, ধূরুং, সর্ত্তা নদীসহ অসংখ্য নদী খাল ছড়ার চরে ফুলে ফলে ভরা লাউ কুমড়া ক্ষেতে নেচে নেচে বেড়ায় ভ্রমর-ভ্রমরী গুণ গুণ সুরে গান গেয়ে। স্বর্গের সৌর্ন্দয্য এখানে পরিলক্ষিত হয়। কৃষান কৃষানীর মাটে কাজ করার দৃশ্যে,গরুর পালও রাখালের বাঁশির সুর,নৈাকা ভাসিয়ে মাঝির ভাটিয়লী গান পাখিদের খিচিমিচি ডাক সবমিলিয়ে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত,
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। কবিতাটিতে উলেখিত বাংলার প্রকৃত রূপ এখানে পাওয়া যায়।
ফটিকছড়িতে দেখার মত রয়েছে অনেক প্রাচিন স্থাপত্য যে গুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ।ভিন্ন মাত্রার এসব পুরনো স্থাপত্য ও ভিন্ন কারুকার্যের এসব স্থাপনা ও বস্তু দেখে সত্যিই মনকে জাগিয়ে তুলে অনু প্রেরণা যোগায় ইতিহাস চর্চার। জানা যায়, দৌলতপুর ওয়ায়েজ মুহাম্মদ বাড়ি জামে মসজিদ প্রায় ৩০০ বছর পূর্বের ঐ বাড়ির জমিদার বংশের লোকেরা মসজিদটি র্নিমান করেন । দৌলতপুর আব্দুল বারি চৌধুরী বাড়ি শত বৎসর পূর্বের জমিদার বাড়ি। হারুয়ালছড়ি ফকির পাড়া জামে মসজিদ দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে গড়া। বক্তপুরের আহসান উল্লাহ গোমস্তার মসজিদটি প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে নির্মান করা হয়, এ মসজিদটিতে সিমেন্টর চাহিদা পূরনের জন্য দেওয়াল এবং ছাদে হাঁস মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়। জাহানপুরের জুনির বাপের মসজিদ, এ মসজিদটি প্রায় ১৫০ বছর পূর্বের । জাহানপুরের বড়ুয়া পাড়া কেয়াং প্রায় ১৫০ বছর পূর্বের, এটি বড়ুয়াদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। একই ইউপির মুফতি মসজিদ প্রায় ৩০০ বছর পূর্বের । আজাদি বাজারের মুরালি মসজিদ প্রায় ১৫০বছর আগে সুন্দর গোটা নামে জৈনক ব্যাক্তি তৈরী করেন।
ভুজপুরের শতাধিক বছরের পুরনো কাজি বাড়ি মসজিদ তৎকালিন জমিদার কাজি সাহেব এ মসজিদ নির্মান করেছিল বলে জানা যায়। তাছাড়া জমিদার বাড়ির ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনো এখানে রয়েছে । লেলাং এলাকার আদালত খাঁ জমিদার বাড়ি একটি ঐতিহ্যবাহি বাড়ি, এ বাড়িটি এখনো ঐতিহ্য ধরে দাড়িয়ে আছে।
ফটিকছড়ি থানা গায়েবী মসজিদ প্রায় ২০০ বছরে পূর্বে জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল। জনশ্রতি রয়েছে খাস দিলে কোন কিছু মানত করে এ মসজিদে দান করিলে নিয়ত পুরন হয়। কাঞ্চন নগরের শ্রী শ্রী জগন্নাথ বিগ্রহ মন্দির প্রায় ২০০ বছর পূর্বের তৎকালিন জমিদার বাবু তিলক চাঁদ চৌধূরী এ মন্দিরটি নির্মন করেন । লেলাংএর হাদী বাদশাহ আওলিয়া(রাঃ) মাজার শরীফ প্রায় ৩০০ বছর পূর্বের । গোলমুহাম্মদ তালোকদার বাড়ী জামে মসজিদও প্রায় শত বছর পূর্বের। সুয়াবিল গুরুদাস ফকির আশ্রম ও মন্দির দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। দৌলতপুরস্থ আব্দুল বারি চৌধুরী বাড়ি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
সম্প্রতি ফটিকছড়িতে সৌর্ন্দযের নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে,মাইজভাণ্ডার এলাকায় নব নির্মিত ২৫০ মণের রান্না উপযোগী ডেক,নাজিরহাট- কাজিরহাট সড়কের হারুয়ালছড়ি হাজারিখীল অভয়ারণ্য সংযোগ সড়কে নির্মিত বিমান ভাস্কর্য,ভুজপুর ও হারুয়ারছড়িতে র্নিমিত রাবার ড্যাম,সুন্দরপুরস্থ ধুরুং নদীর বাঁধের পাড়। জোয়ার ভাটায় ভিন্ন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পাইন্দং আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন নির্মানাধীন পর্যটন স্পট। এছাড়াও আরো অনেক স্থাপনা রয়েছে।
ফটিকছড়িতে রয়েছে বিভিন্ন মানুষ জাতির বসবাস। বিশেষ করে উপজাতীয়দের বৈচিত্রময় জীবন মনকে নাড়া দেয় তার চেয়ে আরো আশ্চয্যের্র বিষয় হচ্ছে এ উপজেলায় প্রায় ৮টি ভাষাভাষির মানুষ বসবাস করে ।
ফটিকছড়ির অবস্থানও এক অপূর্ব সৌন্দর্যময় দক্ষিনে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা। পশ্চিমে মিরসরাই ও সিতাকুণ্ড, পুর্বে পার্বত্ব চট্টগ্রামে মানিকছড়ি ও লক্ষিছড়ি। উত্তরে ভারতীয় সীমান্ত ও রামগড় উপজেলা। সবকিছুমিলিয়ে সৌন্দর্যের আধার ফটিকছড়ি। তাই এবার ঈদের ছুটিতে ঘুরে যেতে পারেন ফটিকছড়ি।
যেভাবে আসা যায়ঃ-ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে ফটিকছড়িতে।ফটিকছড়ি সদর ও নাজিরহাট এসে যে কোন যানবাহনযেগে এসব স্পটে যাওয়া যায়। থাকা ও খাওয়া দাওয়াঃ-ফটিকছড়িতে এখনো ভাল মানের হোটেল মোটেল গড়ে উঠেনি।উপজেলার বড় বাজার গুলোতে কিছু আবাসিক হোটেল থাকলেও তেমন উন্নত নয়।