অবশেষে বাতিল হলো পুনরায় ইজারা দেওয়া বালু মহাল

news paper

সৈয়দ আককাস উদদীন, সাতকানিয়া

প্রকাশিত: ২৩-৩-২০২৩ দুপুর ৪:৫০

14Views

জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে অবশেষে সাতকানিয়া উপজেলা ডলু নদী বালুমহাল-৪, ১৪৩০ বাংলা সনের ইজারা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।  জেলা প্রশাসক কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) থেকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি  আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বালুমহাল ইজারার সংশোধিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইজারা বাতিলের এ আদেশ দেওয়া হয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য ইজারা দেওয়া বালুমহালসহ বিভিন্ন বিষয়াদি অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানানো হয়। অন্যদিকে, ইজারা বাতিলের খবর শুনে এলাকায় অতীতের ভুক্তভোগীরা মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেন। 
 
চলতি বছরের ১০ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে  চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) থেকে ১৪৩০ বাংলা সনের জেলার উপজেলাসমূহের বালুমহাল ইজারার দরপত্র আহ্বান করেন।এ দরপত্রে সাতকানিয়ার ডলু নদী বালুমহাল-৪ও রয়েছে। পত্রিকায় বিগত বছর বাতিল হওয়া ইজারা পুনরায় দরপত্রের আহ্বান করার বিষয়টি দেখে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইজারা বাতিলের জন্য আবেদন করলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ডলু নদী বালুমহাল-৪ বাতিল করে বৃহস্পতিবার সকালে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
 
বালুমহাল-৪ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মিজানুর রহমান ও মো.রাসেল বলেন, এ ইজারা বাতিল হওয়ায় এলাকায় মানুষ স্ব উদ্যেগে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।ডি সি সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এলাকার আতংকিত মানুষকে সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষার জন্য। 
এ ব্যাপারে স্থানীয় নলুয়া ইউপি মো.লেয়াকত আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া বলেন, ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল করে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের এলাকাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করেছেন। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ডি সি সাহেবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 
 
উল্লেখ্য, নলুয়া ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লেয়াকত আলী ডলু নদীর ৪ নং বালি মহাল ইজারা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদনে সুপরিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ইতোপূর্বে ডলু নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের শত শত বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলনের ফলে বন্যার পানির তোড়ে নদীর পাড় ভেঙে ফসলী ও কৃষি জমি নষ্ট হয়ে নিঃস্ব হবে অনেক পরিবার। বর্তমান সরকার ডলু নদীর ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ ধ্বংস ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প অকেজো হওয়ার আশংকা রয়েছে। বালু মহাল দখল-বেদখল, উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক দ্রব্যের বিস্তার ও খুন-খারাবি সৃষ্টির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে। অতীতে এমন ঘটনার অনেক নজির রয়েছে। 
অপরদিকে, নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়াও জেলা প্রশাসকের নিকট 
চেয়ারম্যানের মতো প্রায় একই অভিযোগ দায়ের করে বালু মহাল-৪ এর ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করে এলাকার জনগনকে উল্লিখিত সমস্যাসমূহ থেকে পরিত্রাণে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন। 
চেয়ারম্যান মো.লেয়াকত আলী বলেন, বালুমহালটি বন্ধ থাকায় এলাকায় নেশাগ্রস্ত ও বাজে ছেলেদের আনাগোনা অনেকটা কমে গেছে। ট্রাক চলাচলে ভেঙ্গে যাওয়া সড়কও মেরামত করে চলাচল উপযোগী হয়েছে। পুনরায় ইজারা চালু হলে অতীতের ন্যায় সব ধরনের অপরাধ শুরু হবে।তাই ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধে ডিসির নিকট আবেদন করেছি।
 
এ ব্যাপারে আহমদ মিয়া বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালু মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয়দের সাথে আলাপ ও তাদের বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং বালু  মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকের  বসত ভিটে ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বালুমহাল দখল-বেদখল নিয়ে অনেক সময় ঘটে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। এতে অনেকেই গোলাগুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং বালুমহালের ইজারা বাতিল করে। ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালুমহাল দুটির ইজারা স্থাগিত করে। কিন্তু হঠাৎ এ বছর জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালুমহাল-৪ ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালুমহালের সঙ্গে। তবে ৩ নং বালু মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি। তাদের অভিযোগ, ৪ নং বালুমহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। তাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার কেউ  সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এর ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। 
 
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু নদীর বালুমহাল-৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে, এমন আশংকা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না প্রশাসন।

আরও পড়ুন