বিষাক্ত পটকা মাছ খেলে মৃত্যু নিশ্চিত
প্রকাশিত: ১০-৩-২০২৩ রাত ৯:১০
পটকা মাছ বাংলাদেশের নদীতে সচরাচর পাওয়া যায়। তবে পটকা নামে পরিচিত এই মাছ ‘বেলুন মাছ‘নামেও পরিচিত। পটকা মাছের ৪টি বৈজ্ঞানিক নাম আছে। এটাকে গাঙ্গেয় জলজ প্রাণী হিসেবেই বর্ণনা করা হয়। পটকা মাছ ইংরেজিতে ব্লো বা বেলুন মাছ হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে পটকা বা টেপা মাছ। দেখতে গোবেচারা টাইপের হলেও মাছটি অত্যন্ত বিষাক্ত। আমাদের সমুদ্রে এই মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে মাঝে মধ্যে জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
বাংলাদেশে পটকা মাছের ১৩টি প্রজাতি আছে যাদের দুটি মিঠা পানিতে এবং বাকীগুলো সমুদ্রে বাস করে। এ মাছ সম্পর্কে জেলেদের কোনো ধারণা না থাকায় তারা নিজেরা এ মাছ খায় অথবা বাজারে বিক্রি করে। বিষাক্ত এ মাছ খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা মারা যায়।
পটকা মাছ খুবই বিষাক্ত কারণ, এর মধ্যে ‘টেট্রোডোটক্সিন নামে এক প্রকার বিষ থাকে। এই বিষ কারও শরীরে ঢুকলে মৃত্যু অবধারিত। পটকা মাছের বিষ একটি শক্তিশালী বিষাক্ত পদার্থ যা মানুষের উত্তেজক সেল মেমব্রেনের সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।
মাছের বিষাক্ত পদার্থটি তার যকৃত, ডিম্বাশয়, অন্ত্র এবং চামড়ার মধ্যে খুব বেশি ঘনীভূত থাকে, তবে শরীরের পেশীসমূহ সাধারণত বিষমুক্ত থাকে। এই বিষের ফলে মানুষের জিহ্বা এবং ঠোঁটের স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না, মাথা ঘোরে, বমি হয় এবং পরবর্তীতে শরীর অসাড় হয়ে আসে। সারা শরীর ঝিনঝিন করে, হ্নদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ কমে যায় এবং মাংসপেশী অসাড় হয়ে পড়ে।ডায়াফ্রাম অসাড় হয়ে যাওয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়।
তাই কখনই পটকা বা ট্যাপা মাছ খাবেন না। বিষাক্ত এই মাছটি দেখতে দেশি পুটি মাছের মত ছোট, পিচ্চিল শরীর,পেটটা অস্বাভাবিক মোটা। দেশের উত্তরাঞ্চলে এই মাছটিকে ট্যাপা মাছ বলে। বরিশাল অঞ্চলে পটকা মাছের কিছু প্রজাতি মারাত্মক বিষাক্ত। প্রতি বছর অজ্ঞতাবশত এটি খেয়ে কিছু মানুষ অকালে মৃত্যু বরন করেন। এই মাছের বিষ সায়ানাইড বিষের চেয়েও ভয়ংকর। সুন্দরবন অঞ্চলে বড় পোটকা পাওয়া যায়। যেকোনো প্রজাতিরই হোক পটকা বা ট্যাপা মাছ কখনই খাবেন না। জাপানে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। তবে সেটা খুবই বিষাক্ত। তারা বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছটি ক্যাটারিং করে খায়।
এই মাছে এক ধরনের নিউরোটক্সিন টেট্রডটক্সিন নিসৃত হয় যা খাওয়ায় রিসপিরেটরী মাসল বা পেশী অবস হয়ে মানুষ মারা যায়। তবে ভুলবশত কেউ এই মাছ খেয়ে অসুস্থ হলে অবশ্যই তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে রোগীর ভেনটিলেটরী সাপোর্ট বা আই সি ইউ প্রয়োজন হতে পারে। তাই আসুন এই মাছের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নিজে সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করি।
ডা: নওশাদুজ্জামান খান হীরা
সহযোগী অধ্যাপক
কমিউনিটি মেডিসিন এন্ড পাবলিক হেলথ স্পেশালিষ্ট
প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুর।