নানা অনিয়মের অভিযোগ বিপিসির কর্মকর্তা আজাদের বিরুদ্ধে

news paper

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ৫-২-২০২৩ দুপুর ৪:৩৮

318Views

বয়স ও সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি) কর্মকর্তা পদে নিয়োগ এবং বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ ওঠেছে বিপিসির ডিজিএিম (বন্টন ও বিপণন) মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদের বিরুদ্ধে। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ ই মার্চ দৈনিক আজাদী পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড এ উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা সহ অনুর্ধ্ব ৩৩ বছর (৩১-০৩-২০০৯) বয়স চাওয়া হলেও তিনি ৩৬ বছর ৪ মাস ২১ দিনে উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় গ্লোয়ার ট্রেডিং নামে ভুয়া দোকানের অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন  তিনি। সম্প্রতি বিষয়টি অডিটে ধরা পরায় এটি নিয়ে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। বিপিসিতে ডেপুটি ম্যানেজার থেকে অফিসিয়েটিং হিসেবে ব্যবস্থাপক করলেও পরবর্তিতে জালিয়াতির মাধ্যমে ফাইল ঘায়েব করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অফিসিয়েটিং পদ হতে হয়ে যান ডিজিএম। যা সম্পূর্ন আইন বিরোধী।

শুধু তাই নয় জালিয়াতি করে নিয়োগ ও পদোন্নতি পেয়েই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে। আর অবৈধভাবে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পগুলোতে ডিলারদের বেজাল তেল বিক্রয়ে উৎসাহী করে ভূয়া রিপোর্ট প্রদান করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ বিপিসিতে রিপোর্ট প্রদান করেন বেজাল মুক্ত তেল হিসেবে। 
স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানী লিমিটেডে (এসএওসিএল) থাকাকালীন সময়ে আমদানীকৃত বিটুমিন বাজার দরের অনেক কম দামে বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন কোটি টাকা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিজস্ব লোক ফারহান ট্রেডিং এর সাথে যোগসাজশে ৬৮৬৩ ড্রাম ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন নাম মাত্র মূল্যে (২,৯৭, ৭৩৪০০ টাকা) বিক্রি করে দেয়। কিছু বিটুমিন প্রতি ড্রাম ৫৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে। অথচ ঐ সময় বাজারে বিটুমিনের দাম ছিল ড্রাম প্রতি ৭ হাজার টাকা। যার থেকে মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ হাতিয়ে নেন ১০ লক্ষ টাকা। 
এসএ ওসিএল এর সীতাকুন্ড প্রজেক্টের জন্য আমদানীকৃত স্টিল স্ট্রাকচার স্ক্রাপ হিসেবে নিজস্ব লোকের কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দেন। ঐ সময় স্টিল স্ট্রাকচার এর আমাদানী খরচ ছিল প্রতি কেজি ১২৫ টাকা। কিন্তু (রহিম) তার নিজস্ব লোক দিয়ে সব স্ট্রাকচার মাত্র ৫৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। অথচ ঐ স্টাকচারের আমদানী খরচই ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোম্পানীর ৬৯ লক্র টাকা যায় তার পকেটে। এছাড়া স্টিল স্ট্রাকচার যারা কিনেছেন তারা ১১টি গাড়ি যোগে সরবরাহ দেখিয়েছেন কিন্তু সরবরাহকৃত ১০টি গাড়ির স্টিল স্ট্রাকচারের টাকা পরিশোধ করলেও একটি গাড়ির টাকা পরিশোধ করেনি। বিষয়টি জানার পরও মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ নিরব ছিলেন। এবং এই কাজে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এসএওসিএলের আমদানীকৃত লুব (বেস অয়েল) বিপিসি নির্ধারিত মূল্যে প্রতি লিটার ১১৭ টাকা প্রতি লিটার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলকে বিক্রি করা হতো। কিন্তু মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের  কাছে ১০৯ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। যা বিপিসির নির্ধারিত মূল্যে ধরলেও আরো ২ কোটির টাকা বেশি  বিক্রি করা যেতো। কিন্তু না করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোম্পানীর টাকা গচ্ছা দেখিয়েছেন তৎকালীন বোর্ড। 
আর এসব অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে গড়ে তুলেছেন ২০ টির বেশি দোকান। এছাড়াও কালুর ঘাট, কালা মিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় স্ত্রী লুৎফা জাহানের নামে গড়ে তুলেছেন বহুতল বিশিষ্ট ভবন। সম্প্রতি এসব বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আ. হালিম নামের এক ব্যক্তি। দুদকের ঢাকা অফিস থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ডিজিএম (বন্টন ও বিপণন) মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ বলেন, আমি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। নিয়োগের বিষয়টি তখন যাচাই বাছাই করেই হয়েছে, সেখানে কোন জালিয়াতি হয়নি। পদোন্নতিও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি যখন এসএওসিএলে ছিলাম তখন আমার একক ক্ষমতা ছিলনা, সেখানে যা করা হয়েছে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হয়েছে। এসএওসিএল থেকে শাহেদ সাহেবরা কিছু টাকা সড়িয়ে নিয়েছে, আমি সেই টাকাগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলাম তাই আমাকে হেনস্তা করার জন্য একটি চক্র আমার পিছু নিয়েছে। নিজের গড়ে তোলা দোকান ও স্ত্রীর নামে থাকা বহুতল ভবনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলে আমার কোন দোকান বা বিল্ডিং নেই। সন্দেহ থাকলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন।


আরও পড়ুন