গুচ্ছের পদ্ধতির গোলকধাঁধায় সেশনজটে নোবিপ্রবি

news paper

ফাহাদ হোসেন, নোবিপ্রবি

প্রকাশিত: ২৫-১-২০২৩ দুপুর ৩:৪৬

1Views

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া ২০২০-২১ সেশন থেকে শুরু হয় । শুরুতে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ২০২১-২২ সেশনে আরো ২ টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায়। ভোগান্তি ও সময় অপচয় রোধে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু  হলেও এই পদ্ধতি এখন শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশার কারণ। সেশনজটহীন ক্যাম্পাসগুলোও এখন তীব্র একাডেমিক সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছে।

গুচ্ছ পূর্ববর্তী সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশেই আয়োজিত হতো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভর্তি প্রক্রিয়া। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বছরের প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরু করতো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রথম সেশনের ক্লাস শুরু হতে সময় নেয় অতিরিক্ত চার মাস। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষার ৬ মাস পরও ক্লাস শুরু করতে পারে নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে ৮ম মেধাতালিকা প্রকাশের পরও ২০০ এর অধিক আসন খালি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য এখন পর্যন্ত ৮ম মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আসন বেশি ফাঁকা থাকায় গণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও আসন পূরণ হচ্ছে না। সর্বশেষ মেরিট লিস্ট ডাকার পরও খালি থাকে ১৯৪টি আসন। এ ছাড়াও এখন পর্যন্ত কোটায় ভর্তির শূন্য আসন আছে ১০ টি। পরবর্তীতে আরো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। শূন্য আসনের বিপরীতে আবারও শিক্ষার্থীদের ডাকা হবে।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভোগান্তি নিয়ে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থী মোঃ নূর উন নবী সিয়াম বলেন,  জিএসটি পদ্ধতিতে কিভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে তা পূর্ব পরিকল্পিত না থাকায় দীর্ঘ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। এতে আমরা ক্লাস শুরুর আগেই সেশনজটে পড়ে গেছি।কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া হবার কথা থাকলেও সবক্ষেত্রে তা না করায়  অনেক টাকা খরচ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এমন উদাসীনতা সত্যিই হতাশাজনক। "

গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি কার্যক্রমকে   স্বস্তির নামে প্রহসন বলে অভিহিত করেন নোবিপ্রবির উন্মে হানি নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন,  " গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার  যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটির একমাত্র কারন ছিল শিক্ষার্থীবান্ধব ভর্তি পরিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো শিক্ষার্থী হয়রানি, প্রহসন,  নাটকীয়তা,  কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতার আরেক নামে এসে দাড়িয়েছে গুচ্ছ নামক এই তথাকথিত পদ্ধতি।
প্রথমে একটা সার্কুলার দিয়ে শুরু হলো পরিক্ষা,  পরবর্তীতে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদা সার্কুলার প্রকাশ করলো। যেখানে শিক্ষার্থী হয়রানি হ্রাস, অর্থসুলভ করার উদ্দেশ্য গুচ্ছ পদ্ধতি শুরু হলো সেখানে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ঘরে বসেই গুনতে হলো হাজার হাজার টাকা। তাও অধিকাংশ  অভিভাবকদের সন্তানেরা তাদের কাঙ্খিত বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোয়াঁ পায়নি।

যেখানে গুচ্ছ বহির্ভূত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া আমাদের সেশনের শিক্ষার্থীরা তাদেের একাডেমিক জীবনের অর্ধবর্ষ শেষ করে ফেলেছে সেখানে আমাদের ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা।

ভর্তি প্রক্রিয়ার এমন জটিলতার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিকে দায় দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টরা। নোবিপ্রবির গুচ্ছ টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রাহমান খান বলেন, স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানো এবং গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার মাঝে অনেক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। জিএসটি যেভাবে নিয়ম করে দেয় আমাদের সেইভাবেই কার্যক্রম চালাতে হয়। যার ফলে বর্তমানে অনেক জটিলতা তৈরী হয়েছে।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে একমত পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। তিনি বলেন, গুচ্ছতে ভর্তি প্রক্রিয়া হওয়ায় তীব্র ভোগান্তিতে আছে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তি কমানোর জন্য চালু হওয়া পদ্ধতি এখন আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার অর্ধবছর পার হলেও আমরা এখনো ২০২১-২২ সেশনের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারি নি।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, আপাতত গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়া পসিবল না। আমাদের রাষ্ট্রপতির অনেকদিনের আকাঙ্খা হচ্ছে এই গুচ্ছ পদ্ধতি। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেশনজটের প্রশ্নে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, জটিলতা তৈরী হয়েছে মূলত শিক্ষার্থীদের কারণেই। তারা অনেক জায়গায় মাইগ্রেশন অন করে রাখে। আবার আদালতে রিটও করেছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কারণেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হতে এতো দেরি হচ্ছে।

সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয় স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিতে পারছে না স্বাধীন সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন,  আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হয় এবং পাশাপাশি আইন মেনে চলতে হয়। আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ২০২১-২২ সেশনের ক্লাস শুরু করবো বলে আশাবাদী।

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে স্বায়ত্তশাসনের কথাই বললেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রশাসন বিভাগের সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা আইন আছে৷ সবাই নিজেদের মত করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এটা নির্ভর করবে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর। ইউজিসি থেকে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে জিএসটির অধীনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। চাইলেই যে কেউ এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে হয়ে যেতে পারবে।


আরও পড়ুন