আওয়ামী প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই বিএনপি-শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
প্রকাশিত: ৩০-১১-২০২২ বিকাল ৫:১৮
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী নীল দল থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সভাপতি পদে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক পদে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তবে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধেই বিএনপি-শিবিরের মতো ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সংশ্লিষ্টতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ফলে আওয়ামীপন্থী নীল দলের ব্যানারে তারা প্রার্থী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও তাদের কারো বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি, কারো বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগও রযেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সভাপতি পদে দাঁড়ানো অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহেরের পরিবার বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও তিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন থাকা অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে 'চার চোরা' সম্বোধন, কর্মচারীদের হুমকি দেওয়া, রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে স্বাক্ষর করা, নিজ গ্রুপের শিক্ষকদের অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নানা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কর্মচারী-কর্মকর্তারা আন্দোলন করার কিছুদিন পর রেজিস্ট্রার পদ থেকেও তাকে সরে যেতে হয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচে সোলার প্যানেল বসানোর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেও তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপি রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ ও বুড়িচং আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে খুব হার্ড লাইনের রাজনীতির সাথে জড়িত না। তবে, তাদের পরিবারটা আওয়ামী লীগের না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কী করেছেন আমরা জানি না। তবে, লোকালি তাদের পরিবার আওয়ামী লীগের না।
আওয়ামী লীগের না তবে কোন দলের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো করেনি কোনো সময়। বিএনপি বা অন্য পার্টি হতে পারে। শুনেছি বিএনপিতে বিলং করেছে। তিনি হয়তো সমর্থন করে তবে কোনো পদ পদবী নেই।
বিএনপির রাজনীতির সাথে পরিবারের ও নিজের সংযুক্তি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন বলেন, আমি কখনো কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। আমার ভাইয়ের ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। সেটা ভিন্ন কথা। তার আর আমার আলাদা আইডেন্টিটি।
ভর্তি পরীক্ষার দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলে, সেসময় যে নিউজগুলো হয়েছিল সেগুলো ভ্যালিড ছিল না। কারন এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ আসে নাই প্রশাসনের কাছে। কোনো লিখিত অভিযোগ আসলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যেত।
সোলার প্যানেল দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তো জাস্ট একজন মেম্বার ছিলাম। ঢাবির যিনি এটাতে আহবায়ক ছিল তাকে জিজ্ঞেস করতে পারো। আমি এ দায় নিব না। অথচ তখন তিনিই ছিলেন কুবি থেকে এ কমিটির প্রভাবশালী একজন শিক্ষক। একাধিক কমিটিতে থেকে তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামীপন্থী নীল দল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়ানো সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। তার ব্যাপারেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন তিনি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এছাড়া তার শ্যালক
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাযহার বলেন, যখন আমাদের ছাত্রলীগের নেতা ঠিকভাবে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে পারতো না শিবিরের হামলার কারনে, তিনি সেসময় জামায়াত-শিবির ঘেঁষা আলাওল হলে থাকতেন এবং সে সময়কার শিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে তার উঠা বসা ছিল।
তিনি আরো বলেন, আমি শুনতে পেরেছি সে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগ করেছে বলে পরিচয় দেয়। আমার তার কাছে প্রশ্ন সে কার অধীনে, কোথায় ছাত্রলীগ করেছে? ছাত্রলীগ করা ছোট ভাইরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আবেদন করলেই তাদেরকে শিবির ট্যাগ দেয়ার অভিযোগও পেয়েছি তার বিরুদ্ধে অনেকবার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক উৎপল অধিকারী বলেন, সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তৎকালীন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত যে হলগুলো ছিল সেই হলগুলোর মধ্যে একটি ছিল আলাওল হল সে ঐ হলে থাকতো।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'আমি ছাত্র জীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে সংযুক্ত ছিলাম।' প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বলতে কী বুঝাতে চাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি ৭১ এর চেতনা যারা বিশ্বাস করে, মুজিববাদ যারা বিশ্বাস করে এমন সংগঠনে ছিলাম বলে উত্তর দিলেও কোন নির্দিষ্ট সংগঠনের নাম উচ্চারণ করেননি।
অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে। ২০১৭ সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে শিক্ষকদের একদিনের বেতন বন্যার্তদের দেয়ার জন্য তহবিল গঠন করা হয়। সেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী পদে নিজ শ্যালক শায়খুল হোসাইন ভুঁইয়াকে নিয়োগ দেয়ার সময় অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। এবং অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া সেই শ্যালক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করলেও শুধু তার কারনেই এখনো কোন বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি মিথ্যা কথা। এই টাকা এখনো হিসাব দপ্তর রয়ে গেছে, কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি। দুই পক্ষের ঝামেলা লাগার কারণে তা এখনো কোনো পক্ষই পায়নি।
শ্যালকের নিয়োগে অর্থ লেনদেন ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করেও বিচার না হওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা এই অভিযোগগুলো করেছে তারা স্বার্থান্বেষী মহল। তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এখন নানা জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করার চেষ্টা করছে।