ডায়ালাইসিস কখন করবেন

news paper

সকালের সময় ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮-১১-২০২২ দুপুর ৪:৩৬

472Views

ডায়ালাইসিস শুনলেই মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করে। তাই সহজে কেউ ডায়ালাইসিস করতে চায় না। অথচ কিডনির অসুখ সারানোর জন্য ডায়ালাইসিস এর গুরুত্ব অনেক। ডায়ালাইসিস কখন করবেন আর কি উপকার পাবেন এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইয়র্ক হাসপতাল এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা. ডা. এনামুল হক টিটু। 
  
ডায়ালাইসিস এর দরকার হয় কিডনির সমস্যা দেখা দিলে। কিডনির সমস্যা দুই ধরণের হয়। এক, আ্যকিউট কিডনি ফেইলর। দুই, ক্রনিক কিডনি ফেইলর।

হঠাৎ করে কোন একটি ওষুধের কারণে বা কোন এলার্জিক রিয়্যাকশনের কারণে অথবা কোন একটি ইনফেকশনের কারণে যদি কিডনি শাট ডাউন হয়ে যায়, সেটি হচ্ছে আ্যকিউট কিডনি ফেইলর।
কিছু কিছু ক্রনিক ডিজিজ যেমন ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন ও আ্যকিউট থেকেও বিশেষ কিছু  কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।

ডায়ালাইসিস কখন করবেন: 
যদি কোন কিডনি রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় বা তার শরীরে পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় বা শ্বাস কষ্ট হয় বা কাশি হয় বা ইউরিন আউটপুট বন্ধ হয়ে যায় বা ব্লাডে ইউরিয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় বা ক্রিয়েটিনিন অনেক বেড়ে যায়, এই সকল রোগীর ক্ষেত্রে আমরা ডায়ালাইসিস করে থাকি। 

ডায়ালাইসিস করার পূর্বে তাদের শরীরে আমাদের বিভিন্ন রকম একসেস থাকতে হবে। প্রথমত উরুর উপরের দিকে একটা ক্যাথেটার ঢোকানো হয়। যা দিয়ে এক মাসের কাছাকাছি ডায়ালাইসিস দেয়া যায়। তারপর আমরা রোগীকে উপদেশ দেই হাতের মধ্যে একটি ফিস্টুলা করে নেয়ার জন্য। কারণ একটি ফিস্টুলা ম্যাচিউর হতে সময় নেয় এক থেকে দেড় মাস, কখনো তার থেকে বেশি। 

এর জন্য রোগীর আগ্রহ বা ইচ্ছা অনেক জরুরী। সে যদি হাতে সঠিকভাবে ব্যায়াম করে, তাহলে ফিস্টুলা তাড়াতাড়ি ম্যাচিউর হবে এবং ডায়ালাইসিস করার উপযোগি হবে। 

এই পর্যন্ত আমরা যে প্রসেসগুলো বললাম সেগুলো হিমো ডায়ালাইসিস বা নর্মাল মেশিন দিয়ে যে ডায়ালাইসিস করা হয়, সেটি। এছাড়াও দুই ধরণের ডায়ালাইসিস করা হয়। একটি হচ্ছে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, অন্যটি এপিটি ডায়ালাইসিস। 
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস চাইলে বাসায় বসেই করা যায়। প্রতিবার দুই ঘন্টা করে দিনে তিনবার করতে হবে। এর জন্য তাকে প্রতিবার খাবারের পূর্বে পেটের মধ্যে দুই লিটার পানি প্রবেশ করাতে হবে এবং এই পানি থাকবে দুই থেকে তিন ঘন্টা। তারপর সে পানি বের করে দিবে। আর এভাবেই পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস করা যায়।

এপিডি অপেক্ষাকৃত একটু সহজ। সেটাও বাসায় করা যায়। এর জন্য একটি এপিডি মেশিন কিনতে হবে। যা রাতে ঘুমানোর আগে পেটের মধ্যে সংযুক্ত করে নিতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় পানি সয়ংক্রিয়ভাবে পেটের ভিতরে যাবে এবং কিছুক্ষণ থেকে আবার তা ইউরিন আকারে বের হয়ে আসবে।

হেমোডায়ালাইসিস আমাদের দেশে এবং বহির্বিশ্বে বহুল প্রচলিত একটি প্রক্রিয়া। হেমোডায়ালাইসিস রোগীদের প্রথমত নিউট্রেশন মেইন্টেন করে রাখতে হবে, তাদের উপদেশ দিতে হবে যাতে করে তাদের রক্ত শুণ্যতা না হয়ে যায়। তাদের সুগার, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যদি আমরা একজন মানুষের পুষ্টি, নিউট্রেশন, ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করে ডায়ালাইসিস করতে পারি এবং তার কি পরিমাণ ডায়ালাইসিস লাগবে সেটা যদি আমরা নির্ণয় করতে পারি, তাহলে একজন ডায়ালাইসিস রোগী অনেকদিন সুস্থ থাকতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে যে সমস্যা হয় সেটা হচ্ছে কষ্ট। এখন সরকারীভাবে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে। এক সময় শুধুমাত্র বড় বড় মেগা সিটিগুলোতেই ডায়ালাইসিস করা যেত। এখন ব্যক্তি এবং সরকারি উদ্যেগে বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা উপজেলায় ডায়ালাইসিস ইউনিট ওপেন করা হচ্ছে।

ডায়ালাইসিসের খরচ:
ডায়ালাইসিসের ব্যয় সম্পর্কে যদি বলি, সরকারী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে তেমন ব্যয় হয় না। আর বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। ঢাকায় অনেক হাসপাতাল আছে, যেখানে ডায়ালইসিস এর ব্যয় অনেক কম যেমন: গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল। 

মনে রাখবেন কেবলমাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শেই ডায়ালাইসিস নিতে হবে।


আরও পড়ুন