মানিকগঞ্জের বিখ্যাত হাজারীগুড় প্রস্ততে ব্যস্ত গাছীরা
প্রকাশিত: ২৫-১১-২০২২ দুপুর ২:৫
শীতের আগমনী বার্তা আর শিশির ভেজা ঘাস ও কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীত আসছে। আগমনী বার্তা পেয়ে খেজুর গাছ প্রস্তুতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গাছিরা। হাতে দা, বাটাল,হাড়ি পরিস্কার,চুলা তৈরী সহ কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ ঝুড়া, চাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন গাছিরা। কয়েকদিন পরেই গাছে বাঁধানো হবে হাঁড়ি। এরপর চলবে রস সংগ্রহের কাজ। সেই রস থেকেই পাটালি,ঝোলা,লাল,সাদা গুড় তৈরি হবে।
রস একটু ঘন হলেই চলবে হাজারী গুড় তৈরীর কাজ।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার খেঁজুর গাছ ও হাজারী গুড় আমাদের দেশের এক বিশাল কৃষিভিত্তিক লোকায়ত সম্পদ। ব্রিটিশ শাসনামলে এই গুড়ের সুনাম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এখনো এই গুড়ের কদর দেশ বিদেশে রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছগুলোকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। ঝিটকা শিকদার পাড়া গ্রামের গাছি আঃ মান্নান জানান, সারা বছর কৃষি কাজ করি, শীত এলেই গাছ ঝুড়ি, পাটালি,ঝোলা,সাদা সহ বেশ কয়েক রকমের গুড় বানাই। বাজারে বেশি চাহিদা এবং দাম ভাল পাওয়া যায়।
বাবার সাথে কাজে সহযোগিতা করা পরিবারের আরেক সদস্য মান্নানের ছেলে রাশেদুল ইসলাম জানান- খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে চুলায় জাল দিয়ে গুড় তৈরী করার কাজ করে মা। আমি সহযোগিতা করি। তবে আগের তুলনায় রস কম এবং গাছ কমে যাওয়ায় তেমন সুবিধা করতে পারছি না। তাই ব্যক্তি উদ্যোগ, সরকার, সংগঠনের কাছে আহ্বান জানাই- বেশি করে খেজুর গাছ লাগিয়ে এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে যেন তারা এগিয়ে আসে।
ঝিটকা শিকদার পাড়া গ্রামের গাছি মিজান জানান, "বাড়ির গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ কাটি। ১১৫ টি গাছ রয়েছে তার, প্রতি বছরই আমরা গুড় বানাই। তবে আগের মতো এখন আর গাছ নাই। রসও তেমন হয় না। নিজস্ব গাছ কম থাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে গাছ প্রতি ৫০০ টাকা করে কিনে নিয়ে কাটি। লাল গুড়ের পাশাপাশি হাজারি গুড় বানাই। এ বছর শতাধিক গাছ প্রস্তুত করেছি। ১৫ দিন পর থেকেই রস নামতে পারে,তাই সব ঠিক থাকলে ১৫ দিন পর থেকেই হাজারীগুড় বাজারে পাওয়া যাবে।
গাছীদের অভিযোগ ‘কালের বিবর্তন এবং অবহেলায় আমাদের দেশের খেজুর গাছগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিস তাদের বিন্দুমাত্র খোজখবর এবং সহায়তা করে না। এমনকি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল গুড় তৈরী করে হাজারীগুড়ের সুনাম নষ্ট করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গফফার জানান, কালের বিবর্তনে আমাদের দেশের খেজুর গাছগুলো অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। সরকারি -বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশি বেশি খেঁজুর গাছ রোপণ করে এর চাষ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই খেজুরের গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে এবং গাছিরাও লাভবানের পাশাপাশি এই ঐতিহ্য টিকে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন ‘হরিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। এই গুড় মানিজগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ড। কিন্তু কিছু অসাধু গাছিরা বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরি করছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই ভেজাল রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।