উপকূলে তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনের বীজ বপন করছে ফরহাদের আইটি স্কুল

news paper

সম্রাট, কয়রা

প্রকাশিত: ২৪-১১-২০২২ দুপুর ৪:৩১

58Views

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের খুলনা জেলা সদর হতে ১শ কিঃমিঃ সর্ব দক্ষিণে চার পাশে নদ নদী আর সুন্দরবন নিয়ে  লবনাক্ত পলিমাটিতে একটি জনপদ, যেটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত সহ্য করে সংগ্রাম লড়াই করে জীবিকা জীবিকা নির্বাহ করে এই উপকূলের মানুষ। বলছিলাম আইলায়-সিডর,আম্ফানে  বিধস্ত এক অবহেলিত জনপদ 'কয়রা' উপজেলার কথা। বিশ্ব যখন বিজ্ঞানময়, মানুষ যখন ছুটছে গ্রহ থেকে উপগ্রহে, বাংলাদেশে যখন ডিজিটাল সেবায় জনগনকে উপকৃত করছে তখন তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাপক পিছিয়ে পড়া এই জনপদে বেকারত্বের অভিশাপ,প্রযুক্তির অপব্যবহারে যুবদের গ্রাস করে ফেলার উপক্রম ঠিক তেমন একটি পরিবেশে সরকারের পাশাপাশি  উপকূলের যুবদের নিয়ে ভাল কিছু করতে এগিয়ে আসে আল আমিন ফরহাদ নামে একটি তরুন। আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে আসা কিশোর আল আমিন ফরহাদ এসএসসি পরীক্ষা পরবর্তী অবসর সময়ে ফলপ্রার্থী ৯ জন বন্ধুদের নিয়ে ২০০৮ সালে গড়ে তোলে মানব কল্যাণ ইউনিট নামের স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনটি। সুনাম ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার সর্বস্তরে। নেশা চেপে বসে তরুন যুবদের প্রযুক্তির বিশ্বের সাথে পরিচয় ঘটানোর। তাদের ভিতর উন্নত ক্যারিযার গঠনের বীজ বপন করে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানব কল্যাণ ইউনিট এর পরিচালনায় গড়ে তোলা হয় 'কয়রা আইটি স্কুল ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র'। কয়রার মানুষদের তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আলামিনের হাতে গড়া এ আইটি স্কুলটি। ২০১০ সালে ছোট পরিসরে নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। ব্যতিক্রমী এই আইটি স্কুলটি উপজেলা সদরে অবস্থিত। প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে অফিস এ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেজ, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করা হয়। তরুনদের উপচে পড়া ভীড় এবং প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ‘শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ ৩ লক্ষ টাকা নিজ হাতে প্রদান করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজিব ওয়াজেদ। এলাকার বেকারত্ব দূরীকরন, সামাজিক কাজে সতস্ফুর্ত অংশ গ্রহন, নৈতিকতা ও আচার আচারণ প্রশিক্ষণে ব্যপক প্রভাব ফেলতে থাকে ফরহাদদের স্কুল, তাই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সহযোগিতা ও উৎসাহের কমতি থাকে না। পূর্বের শেখ রাসের প্রতিবন্ধী ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যপক সফলতা লক্ষ্য করে ২০২১ সালে মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক স্কুলটিকে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব (২য় পর্যায়) এর আওতাধীন করে নেন। বর্তমানে স্কুলটিতে ৩০ টি কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্লাস ব্যবস্থায় ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ২৩০ জন শিশু, ১৮ জন প্রতিবন্ধী, ৪৭০ জন তরুণ-তরুণী,  ১০৩ জন বেকার এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। এছাড়া ফরহাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনায় বর্তমানে শিশুদের জন্য মজার কম্পিউটার ক্লাস, নীতি নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক ক্লাশ (১-৫ পর্যন্ত), তরুণদের জন্য বিশেষ ৭টি প্রোগ্রাম, প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য সকল বয়সীদের জন্য তাদের সুবিধা ও চাহিদামত প্রশিক্ষণ, বেকারদের জন্য ‘স্মার্ট ক্যারিয়ার’ কর্মশালা, বিভিন্ন স্কুল কলেজে মোটিভেশন ভিত্তিক 'নিজেকে গড়ি' ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে। এছাড়া আগামী প্রজন্মের মাঝে সুষ্ঠ নেতৃত্বের বিকাশ সাধনের মধ্যদিয়ে কয়রাকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এই সংগঠনটি ২০১৭ সালে "জয় বাংলা ইযুথ এ্যাওয়ার্ড" পেয়ে টপ-৩০ এ নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। এর পূর্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক একাধিক বার শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে পুরস্কার ও সম্মাননা স্বারক গ্রহন করেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, যুবদের দক্ষ প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয়ে যে প্রশিক্ষণ আইটি স্কুল প্রদান করছে তা নিঃসন্দেহ বেকারমুক্তসহ প্রশংসার দাবীদার। সরকারি পৃষ্ঠপোষক ও বিত্তশালীরা যদি এগিয়ে এসে এই সংগঠনের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে কয়রার বেকার যুব সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তথ্য প্রজুক্তির বিপ্লব ঘটবে। সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্ঠা প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আল আমিন ফরহাদ বলেন,  আমাদের প্রচেষ্টা একটি শিশুকে ছোটবেলা থেকে দশম শ্রেনীর মধ্যে ১০টি প্রোগ্রাম প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মে সংযুক্ত করা এবং তাকে নীতি নৈতিকতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন স্মার্ট তরুণ তৈরী করা। এছাড়া ভবিষ্যতে একটি অত্যাধুনিক আইটি ফার্ম করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে বেকারদের বিভিন্ন আইটি সেক্টরে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে। এখন পরিধী বেড়ে এজন্য  সরকারী বেসরকারী প্রযুক্তি সেক্টরের পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি" কয়রা  কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয় অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আ.ব.ম আব্দুল মালেক বলেন, সংগঠনটি আলআমিন যেভাবে নিরলসভাবে সামাজিক ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছে তাতে আমরা গর্বিত। সে সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। অবহেলিত এ উপকূল জনপদের মধ্যে তার সেবার মান অনেক উন্নত। আমাদের সহ অনন্য প্রতিষ্টানের ছাত্রছাত্রীদের যেভাবে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলছে তাতে আমি মনে করি আমাদের সুদিন ফিরতে খুব বেশি দেরি হবেনা" কয়রা রিপোটার্স ইউটিটির সহ সভাপতি জনাব ফারুক আজম বলেন "ছোট ভাই আলআমিনের কাজ গুলো আমাকে উৎসাহিত করে, ওর প্রতিটি শুভ কাজে আমার সহযোগিতা ছিলো আছে এবং থাকবে"

 


আরও পড়ুন