এল এ শাখায় ঘুষ বাণিজ্য, ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

news paper

সেলিম চৌধুরী , চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৬-১১-২০২২ দুপুর ১২:১০

46Views

জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অধিনে এলএ শাখায় কর্মরত  কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মিলেমিশে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা অবৈধ পন্থায় তুলে নিয়ে আত্মসাৎ চেষ্টার সংবাদ প্রাপ্তীর পর এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে  প্রতিকার চাইতে গিয়ে, উল্টো ভুক্তভোগী সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও লাঞ্ছিত করাসহ  মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে, খোদ প্রকল্পের সাথে জড়িত ও প্রকল্পের বহিঃর্ভূত জেলা প্রশাসনে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তাসহ জনের নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী মো. হেমায়েত হোসেন (৪৮)। সে হালিশহর থানার সবুজবাগ এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের পুত্র।

মামলার আসামীরা হলেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এহসান মুরাদ (৪২), সার্ভেয়ার মো. আব্দুল মোমেন (৪০), মো. ইমাম হোসেন গাজী (৪২), মোক্তার হোসেন (৪১), আবু কায়সার সোহেল (৩৮) ও অফিস সহকারি বেলায়েত হোসেন বুলু। বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো. এরফানুল হক এনাম বলেন  ঘঁনার বিষয় বিবেচনা কওে মামলাটি আমলে নিয়েছে আদালত। একই সাথে যেহেতু সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা তাই সহকারি পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।
 
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হেমায়েত হোসেনের অভিযোগ, গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর তিনি ও মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা কিছু ভূমির অনুকূলে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আবেদন করেন। এর আগে তারা অধিগ্রহণকৃত ভূমির মৌরশী সূত্রে প্রাপ্ত জমির  প্রকৃত মালিক ১০ জন ওয়ারিশগন তথা মো. শাহাব উদ্দিন গং হইতে উক্ত ভূক্তোভোগী মোঃ হেমায়েত হোসেন ও মো. ফখরুল ইসলাম সরকারি সকল নিয়ম মেনে, সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিস চট্টগ্রামের মাধ্যমে সরকারি ফি সহ যাবতীয় খরচাদি পরিশোধক্রমে দলিল নং-১০৭০১, দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজাধীন  খতিয়ানের বি,এস -১১০৪, ২০৮৬, ২০৮৭, ২০৮৮, ২০৮৯, ২১৫৩, ২১৫৪, ২০৮৫ দাগ সমুহ অনুকূলে বিগত -৩০/০৭/২০১৫ তারিখে  রেজিস্টার্ড চুক্তিবদ্ধ হন। এরই মধ্যে জানা যায় যে, অধিগ্রহণকৃত সিংহভাগ  ভূমির মালিকানার মূল ওয়ারিশ তথা চুক্তিনামা পত্রের ২য় পক্ষদের না জানিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে বিভিন্ন অপ-কৌশলে,  অবৈধ পন্থায়, তথ্য গোপন করে, অনৈতিক উপায়ে বি,এস জরিপ সহ সৃজিত নামজারী খতিয়ানের মাধ্যমে, জমির ভুয়া মালিক বনে যাওয়া কামাল উদ্দিনগং সহ  কয়েকজনকে, প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য গোপন করে, প্রকৃত মালিক না হয়েও পেলিকন প্রোপার্টিজের কাছে, উল্লেখিত বিভিন্ন দাগের মৌরশী সম্পত্তি সমূহ নিয়ম বহির্ভূতভাবে, প্রকৃত মালিকদের আড়ালে রেখে প্রতারনার মাধ্যমে ভূল বি,এস এর অনুকূলে নামজারী খতিয়ান সৃজন করে প্রকৃত মালিক না হওয়া সত্ত্বেও উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় করেন। পরবর্তীতে ভূক্তভোগীর সাথে চুক্তিপত্রের ২য় (দ্বিতীয়) পক্ষ মো. শাহাব উদ্দিন গং উক্ত সম্পত্তি হতে ভবিষ্যতে চিরস্থায়ী ভাবে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে, ভূক্তভোগী মোহাম্মদ হেমায়েত হোসেনে ও মো. ফখরুল ইসলাম দ্বয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে বি,এস সংশোধনী চেয়ে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ আদালতের দারস্থ হয়ে ২ টি পৃথক দেওয়ানী মোকাদ্দমা দায়ের করেন। যাহার একটি মামলাতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার আলোকে চট্টগ্রাম আদালতে আদেশের জন্য মূলতবি আছে। উক্ত মামলায় ভুক্তভোগীরা পক্ষভূক্ত হওয়ার আবেদন আদালতে পরবর্তী আদেশের জন্য মুলতবি আছে। এরই ধারাবাহিকতায় এল এ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এহসান মুরাদ ও সংশ্লিষ্ট  অধিগ্রহন প্রকল্পের বহির্ভূত সার্ভেয়ার, ভূমি অধিগ্রহনের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন হতে বিভিন্ন কলা-কৌশলে কমিশন বানিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, দূর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত  সম্পদের পাহাড় বানিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠা সার্ভেয়ার মো. আব্দুল মোমিন। তাহার কমিশন বানিজ্যের অন্যতম এজেন্ট মো. নোমান (পতেঙ্গা) সহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ০৪(চার) জন সার্ভেয়ার ও সহকারী বেলায়েত হোসেন বুলুসহ  সকলে মিলেমিশে ক্ষতিপূরণের উক্ত টাকা পাওয়া থেকে ভুক্তভোগীদের বঞ্চিত করে, তাহাদের ঘনিষ্ঠ অপর একটি পক্ষকে পাইয়ে দেয়ার পায়তারা সহ নানামূখী চেষ্টা দীর্ঘদিন যাবত অব্যাহত রেখে আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারি কোষাগারে রক্ষিত টাকা পাওয়া থেকে ভুক্তভোগীকে বঞ্চিত করার চেষ্টা অংশ হিসেবে, একটি সুবিধাভোগী পক্ষ হতে মোটা অঙ্কের কমিশন বানিজ্যের অংশ হিসেবে, অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহন সহ লেনদেন সাপেক্ষে উক্ত ক্ষতিপূরণের টাক তোলার চেষ্টা চালান।  এজন্য দালাল নোমান ও সার্ভেয়ার মো. আব্দুল মোমিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে, এমন সংবাদ প্রাপ্তীর পর উক্ত ভুক্তভোগী ও তার আপন সহোদর ভাই মো. শাহিন আলম সহ গত ৩ নভেম্বর ক্ষতিপূরণের টাকার অন্যতম দাবীদার মর্মে উক্ত টাকা যাহাতে এককভাবে কোন একটি আবেদনকারী পক্ষকে বুঝিয়ে না দিয়ে,  বিচারাধীন মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তি কিংবা আপোষ না করা পর্যন্ত সরকারি কোষাগার হইতে অর্থ ছাড় না দিয়ে জমা রাখার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার বরাবরে একটি আবেদন করে। যেহেতু তিনি ও ক্ষতিপূরনের অপর আবেদনকারী মো. ফখরুল ইসলাম ২০২১ সালে অনলাইনেও পৃথক দুটি আবেদন করেন। কিন্তুু আশ্চর্য্যজনক বিষয় হচ্ছে কোন এক অদৃশ্য কারনে ভুক্তভোগীর অভিযোগটি তাঁরা অনেক গড়িমসির পর দাপ্তরিকভাবে এক নারী কর্মচারী  গ্রহণ করলেও সেটি আবার এল.এ মামলার ফাইলে উপস্থাপন না করে, প্রায় ৮/১০ দিন যাবত উক্ত নারী কর্মচারীর রিসিভ ডেস্কের টেবিলে ফেলে রাখেন।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, ইতোপূর্বে আমাদের অনলাইনে করা আবেদন ও দাখিলকৃত আপত্তিসহ অভিযোগটি দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও নিয়ম অনুযায়ী আমাদের নোটিশ কিংবা শুনানীর কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। এ সংক্রান্তে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আমাদের অভিযোগটি এল.এ শাখার, এল.এ মামলার ফাইলে পর্যন্ত ঢুকে নাই।

নিয়মানুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের মামলায়, উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে একটি নির্ধারিত দিন তারিখে একাধিক আবেদন কিংবা অভিযোগের বিষয়ে কাগজপত্রের সত্যতা যাচাইপূর্বক শুনানি করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। সর্বশেষ নিরুপায় হয়ে গত-১০ নভেম্বর এল.এ অফিসে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে,ঐ নারী কর্মচারীকে আমাদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারের টেবিলে নথির ফাইলে না  ঢুকানোর কারন জানতে চাইলে, সংশ্লিষ্ট রিসিভ ডেস্ক হতে তাহা গ্রহন করে, নথিতে শামিলের জন্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার মো. ইমাম হোসেন গাজী, মো. মোক্তার হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আবু কাউসার সোহেল গনদের কেউ কোন এক রহস্যজনক কারনে ভুক্তভোগীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে আবেদনটি নথির শামিলে নিতে ইচ্ছুক নয় মর্মে সাফ জানিয়ে দেন।   পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বারবার অনুরোধের এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এহসান মুরাদের অনুমতি ছাড়া উক্ত অভিযোগ নথিতে নেয়া কোন অবস্থাতে সম্ভব নয় মর্মে জানান। তখন উক্ত ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে, সেই কর্মকর্তার জন্য দীর্ঘপ্রায় দুই ঘন্টা অপেক্ষার পর সেই কর্মকর্তা তাহার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। তখন উক্ত নারী কর্মচারী সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মচারীগন উক্ত কর্মকর্তার রুমে গিয়ে সামগ্রিক বিষয়ে জানানোর পর অনুমান ১৫ মিনিট তাহারা নিজেদের মধ্যে মিটিং শেষে উক্ত কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে, সার্ভেয়ার মো. ইমাম গাজী ও মো. আব্দুল মোমেনকে দিয়ে ভুক্তভোগীকে তার রুমে ডেকে পাঠান। তিনি ধমকের স্বরে এখানে এই সময় আশার কারন জিজ্ঞেস করেলে, ভুক্তভোগী ঐ কর্মকর্তাকে অনলাইনে আবেদন করাসহ অভিযোগের বিষয়টি উত্থাপন করতেই তিনি ভূক্তভোগীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে,  সার্ভেয়ার মো. আব্দুল মোমিন ও ইমাম হোসেন গাজী অফিস কক্ষ হতে বের হতে বাঁধা প্রদান করেন। অফিস কক্ষে জোর পূর্বক আটকে রেখে একের পর এক ছবি তুলতে থাকেন। ছবি তোলা শেষ হওয়ার এক পর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ডের কপি চায়। মিথ্যা অভিযোগ আনোয়নে করে, জিডি এবং মামলা দায়ের করে পুলিশে দিবে মর্মে ভয়ভীতি দেখান ও চরম দুর্বব্যবহার করেন। পরে তারাই আবার ভুক্তভোগীকে উক্ত কর্মকর্তার অফিস থেকে চরম ভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত করে রুমের ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ সময় আমরা তাকে বারবার  বোঝানোর চেষ্টা করলেও ওই কর্মকর্তা আমাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা শুনতে রাজি হননি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রনালয় সহ কার কাছে, কোন কোন দপ্তরে যাবি যা। দেখি আমার বিচার কে করতে আসে! এসময় ঐ কর্মকর্তা উপস্থিত  কর্মচারীদের এসব বিষয় নিয়ে কোন চিন্তা করতে নিষেধ করে, এগুলো তিনি দেখবে হুঙ্কার দেন এহসান মুরাদ।


আরও পড়ুন