"ভাই" সম্বোধন করায় সাংবাদিককে ইউএনও-
আপনার বাবার কয় নাম্বার ছেলে আমি?
প্রকাশিত: ২৭-১০-২০২২ রাত ১০:৪
সংবাদ সংগ্রহের প্রয়োজনে কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিনকে ফোন করেন মহেশখালীতে কর্মরত দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার প্রতিনিধি আকিব বিন জাকের। ফোনে ইউনওকে 'ভাইয়া' সম্বোধন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও জিজ্ঞেস করলেন "আমি আপনার কোন দিনের ভাই হলাম, আপনার বাপের কয় নাম্বার ছেলে আমি"। এর পরে ফোনটি কেটে দেন তিনি।
একজন সরকারী কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহেশখালীতে কর্মরত সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এমনকি বিব্রত স্বয়ং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।সাংবাদিক আকিব বলেন, একটি নিউজের বক্তব্য নিতে ইউএনওকে ফোন করি। তখন তিনি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করেছেন।
অডিও'র বিষয়টি স্বীকার করে ইউএনও বলছেন, এটি আট মাস আগের একটি অডিও। এখন ভাইরাল করে ইউএনও এর মুন্ডু কাটার রহস্য কি বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, যাকে আমি চিনিনা জানিনা এমন একটা ছেলের কাছ থেকে হঠাৎ করে ভাইয়া সম্বোধন শোনায় আমি স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নটা করেছি। এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে।সম্প্রতি বিসিকের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিক এবং ইউএনও। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সামনে সাংবাদিকদের পেশা নিয়ে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করে বিবাদে জড়ান তারা।
সাংবাদিক নেতা ইকবাল বাহার বলেন, ২২অক্টোবর লবন চাষিদের নিয়ে বিসিকের একটি সভা ছিল। লবন চাষিরা তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য অনেক সাংবাদিকদের ফোন করেন। কিন্তু দাওয়াত না পেয়ে কেউ সেখানে যান নি। তবে সভা শেষে বিসিক পরিচালকের বক্তব্য নেয়ার জন্য সাংবাদিকরা দাঁড়ালে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখান ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াছিন। তিনি বিসিক কর্মকর্তাকে নিযে দ্রুত চলে যান। পরে অফিসে ফিরে এসে ইউএনও একজন সাংসদের সামনে বলেন, "সাংবাদিক মিনস কি তারা জানে? তাদের কেন ডাকতে হবে ? তারা ইচ্ছা করলে যেখানে সেখানে যেতে পারে। তাদের ডাকতে চিঠি দিতে হবে! চেয়ার দিতে হবে? অনারিয়াম দিতে হবে? তাদের খবর দিতে হবে নতুন জামাইর মত! তার এমন মন্তব্যে সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পরের দিন সাংবাদিক সমাজের নেতারা প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে। পরে স্থানীয় সাংসদ এবং জেলা প্রশাসক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বললে আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখি। প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা না হলে সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে যাবে বলেও জানান এই সাংবাদিক নেতা।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, সাংবাদিকদের সাথে যা হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আট মাস আগের একটি অডিও ভাইরাল করে ইউএনও এর মুন্ডু কাটার রহস্য কি বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, যেই ছেলেকে আমি চিনিনা জানিনা এমন একটা ছেলের কাছ থেকে হঠাৎ করে ভাইয়া সম্বোধন শোনায় আমি স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নটা করেছি। গত ২২ অক্টোবরের যে ঘটনাটা সেই প্রোগ্রামের আয়োজক ছিল বিসিক। সেখানে আমি নিজেও ছিলাম অতিথি। বিষয়টি সাংবাদিক ভাইদের জানানোর পরেও এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারপরেও আমার বক্তব্যের জন্য সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭অক্টোবর) সাংবাদিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশের নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়টি উভয়ের মাঝে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।