পুরনো রীতিতে এবারো মাগুরায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা

news paper

দিপল ঘোষ, মাগুরা

প্রকাশিত: ২৬-১০-২০২২ বিকাল ৫:২৯

239Views

প্রতি বছরের ন্যায় মাগুরা জেলায় এবারো অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় লাখ ভক্তের সমাগমে অনুষ্ঠিত হয় মাগুরার ঐতিহ্যবাহী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই পূজা। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও সর্বমোট ৯৬টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে এই ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা। এরমধ্যে শহরেই অনুষ্ঠিত হবে ১৬টি পূজা। মাগুরায় শারদীয় দুর্গাপূজা শেষের ঠিক এক মাস পরই শুরু হয় এই মহোৎসব শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজার। 
 
উক্ত পূজাকে কেন্দ্র করে মাগুরায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিটি পূজা মন্দিরেই মৃৎশিল্পীরা এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাগুলো তৈরি করার কাজ সম্পন্ন করতে। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন থিমের চিন্তাধারায় এই পূজাকে ঘিরেই পদ্মফুল, পেঁচা, হাতিসহ প্রতি সেটে দুর্গার সঙ্গে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে মাগুরা পাল সম্প্রদায়ের কারিগরদের।
 
মাগুরা শ্রী শ্রী দুর্গামন্দির গুলোতে গিয়ে দেখা যায় তাদের ব্যস্ততা। মাটি দিয়ে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই। দত্ত বাড়ির মৃৎ শিল্পী হাদান পালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা বংশ পরম্পরায় প্রতিমা গড়েন। কাঠ, বাঁশ, খড়, এঁটেল ও বেলেমাটি দিয়ে মূলত প্রতিমা বানানো হয়। একটা পুরো সেট পাঁচ-ছয়জন মিলে বানাতে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগে। একেকটি প্রতিমা গড়তে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মজুরি নেন তিনি।
 
প্রতিমা বানাতে কেমন লাগে জানতে চাইলে হাদান পাল বলেন, ভোরবেলা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত  চলে কাজ। মায়ের কাজ করতে ভালোই লাগে। আর এটা গভীর সাধনার কাজ সবাই পারে না। এটাকে সুন্দর করতে হলে মায়ের রূপ অন্তরে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। আর এই কাত্যায়নী প্রতিমা তৈরি করতে গেলে তো অনেক চিন্তা ভাবনা নিয়েই তৈরি করতে হয়।
 
এদিকে ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাহারি সব আলোকসজ্জায় সজ্জিত হচ্ছে প্রত্যেকটি পূজা মন্দির, মন্দিরে প্রবেশের রাস্তা সহ সম্পূর্ণ শহরটি। বিরামহীন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বিভিন্ন ডেকোরেটর শ্রমিকেরা। তারা পূজা মন্ডপ সহ বিভিন্ন বড় বড় গেইট তৈরিতে ব্যস্ত। 
 
আগামী ৩০ অক্টোবর রবিবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শ্রী শ্রী কাত্যায়নী পূজা। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দশমী বিসর্জনে শেষ হবে এ পূজা। তবে কয়েকটি মন্দিরে মেলা চলবে প্রায় এক মাস ব্যাপী। করনা মহামারিতে বিগত দুবছর স্বল্পপরিসরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে এবার পূর্বের ন্যায় ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে সোমবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা জানানো হয়।
 
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বিভিন্ন মন্দিরের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন