তোপের মুখে জবির ছাত্রীহল খোলা রাখার ঘোষণা
প্রকাশিত: ২৩-৯-২০২২ দুপুর ২:৫১
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পূজার ছুটিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রীহল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীহল খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এতথ্য জানানো হয়।
এর আগে গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রভোস্ট স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুর্গাপূজার ছুটি উপলক্ষে ১ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত হল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। ছাত্রীদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে স্ট্যাটাস ও মন্তব্যের মাধ্যমে ক্ষোভ জানাতে থাকে। অনেক শিক্ষার্থী টিউশন ও ছুটির পরই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ছুটি কাটাতে বাড়ি যেতে না চাওয়ায় বেকায়দার পড়ার অভিযোগ জানাতে থাকে।স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট ও মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানান, এই ছুটিতে অনেক ছাত্রীই বাড়ি যেতে ইচ্ছুক নয়। অনেকের টিউশন ও ছুটির পরপরই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় তারা হলে অবস্থান করেই পড়াশোনা করতে চায়। এই সময়ে হল বন্ধ হয়ে গেলে তারা বেকায়দায় পড়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো রূপ আলোচনা না করেই হল বন্ধের এই নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেন তারা।
এদিকে হল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতেও বানানে একাধিক ভুল পরিলক্ষিত হয়। লক্ষ্মীপূজা কে 'লক্ষীপুর্জা' এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীহলের নামে বান ভুল করে মুজিব এর জায়গায় 'মুবিজ' লেখায় শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা কঠোর সমালোচনা করেন। অনেকেই বঙ্গমাতার নাম অবমাননারও অভিযোগ তুলেন। এমন ভুলে ভরা বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম কিভাবে স্বাক্ষর করলেন তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ট্রোলও করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক চঞ্চল কুমার বোস ফেসবুকে এক মন্তব্যে লিখেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছুটিতে বন্ধ থাকে বলে কখনো শুনিনি। ঢাবিতে ৬ বছরের বেশি মুহসীন হলে ছিলাম, এক মুহূর্তের জন্যও কোনো হল বন্ধ থাকার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। বরং ছুটিতে হলে থেকেই আমরা বেশি পড়াশুনো করেছি, লাইব্রেরি ওয়ার্ক করেছি। অনেক ছেলেমেয়ে টিউশনি, চাকরি, পত্রিকা অফিসে কাজ করতো। এরকম অদ্ভুত কথা তো শুনিনি। এদিকে দেখছি "মুজিব" আবার "মুবিজ" হয়ে গেছে। এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শিক্ষার্থী লিখেন, 'পূজার সময় হল বন্ধ রাখার ঘোষণা কি কারণে দেওয়া হলো তা জানা নেই। কোনো বিবেকবান মানুষ এমন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনা। অনেকের টিউশন আছে, ছুটির পরই পরীক্ষা। তারা বাড়ি যেতে চায়না। হল বন্ধ হয়ে গেলে তারা থাকবে কোথায়?'আরেক শিক্ষার্থী মন্তব্যের ঘরে লেখেন, 'অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজার ছুটিতে হল বন্ধ থাকে বলে শুনিনি। বরং হলে পূজার আয়োজন করা হয়। এমন নেক্কারজনক ঘটনার স্বাক্ষী হলাম আমরা।'আরেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, 'অনেকের কাছেই বাড়ি যাওয়ার খরচ নেই। হল বন্ধ হয়ে গেলে তারা কিভাবে বাড়িতে যাবে? হল।কর্তৃপক্ষ কি সেই খরচ দিবে?'এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে হল খোলা রাখার ঘোষণা দেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম।এবিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, 'বন্ধের শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পর কিছু বিভাগে ছাত্রীদের পরীক্ষা আছে। তাদের কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।