ঝুঁকিপূর্ণ নাজিরহাট পুরাতন হালদা ব্রীজ
প্রকাশিত: ৩-৮-২০২২ দুপুর ৪:৫৬
একটি ব্রিজের দীর্ঘদিনের দাবী,এ ব্রিজ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কতইনা প্রতিশ্রুতি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগগণের মধ্যে এ ব্রিজ নিয়ে চলছে কাদা ছোঁড়াছুড়িও। বলছিলাম,ব্রিটিশ আমলে হালদা নদীর উপর নির্মিত ফটিকছড়ি-হাটহাজারী সীমান্ত নাজিরহাট বাজারসংলগ্ন পুরাতন ব্রিজের কথা। জানা যায়, বৃটিশ সরকার ১৯১৯ মতান্তরে ১৯৩০ সালে এ সেতু নির্মাণ করে। ব্রিজটি সাড়ে তিন শ ফুট দীর্ঘ ও ১২ ফুট চওড়া।
ব্রিজটি দিয়ে এক সময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের সব যানবাহনই চলাচল করত। তবে এর পৌনে এক কিলোমিটার দূরে ১৯৮৯ সালে নতুন হালদা সেতু তৈরি হওয়ায় মহাসড়কের ভারী যানবাহন বাস,কোস্টার,ট্রাক পুরোনো সেতু দিয়ে চলাচল না করলেও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করত। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী ডিনামাইড দিয়ে ব্রিজটির একাংশ ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে সেতুটি মেরামত করে পূন: যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করে।ব্রিজটি ১৯৯৪ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এরপর ২০০৫ সালে ব্রিজটি পুনঃমেরামতের কাজ হলেও ২০০৮ সালে পূনরায় সওজ কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় ব্রিজের কাছে। বিগত কয়েক বছর আগে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ব্রিজটি দেবে গেলে নাজিরহাট পৌরসভার পক্ষে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলে জনসাধারনের দাবীর প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র মানুষ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমান ব্রিজটির একাংশ ও মধ্য অংশ নিম্মে দেবে গেছে। লোহার পাতের বেষ্টনি ভেঙে পড়ায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজটি। যে কোনো সময় ব্রিজটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেেআশঙ্কা করছেন এলাকার জনসাধারণ। তারপরও বাধ্য হয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসার ছাত্র-ছাত্রী, হাসপাতাল-ক্লিনেকর রোগী, নাজিরহাট রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী এবং নাজিরহাট বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ হাজার হাজার জনসাধারণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উত্তরাঞ্চলীয় ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র নাজিরহাট বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজটি পুন:সংস্কার কিংবা এর পাশে নতুন করে আরেকটি ব্রিজ দ্রুত নিমার্ণ করার র্দীঘদিন ধরে জোর দাবী জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।
বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে আসে যায়। পরিমাপ এবং মাটি পরীক্ষাও করা হয়েছে বেশ কয়কাবার। আরেকটি নতুন ব্রিজ হওয়ার কথা ও শোনা যায়। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীর মাঝে। এদিকে, ব্রিজটি নির্মাণে স্থানীয় রাজণৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণের প্রতিশ্রুতি এবং কাদা ছোড়াছুড়িও চলছে।
নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী তারিন আকতার তুলি বলেন, ব্রিজটি পার হওয়ার সময় খুব ভয় লাগে।
নাজিরহাট আদর্শ ব্যবসায়ী সমাতির সভাপতি মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ব্রিজিটি দিয়ে যানবাহন আসা যাওয়া করতে না পারায় আমাদের বাজারের ব্যবাসা বানিজ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে। আমি ব্রিজটি সংস্কার বা আরেকটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
নাজিরহাট পৌরসভা মেয়র এসএম সিরাজ উদ দৌলা ব্রিজটির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
ব্রিজিটি সওজের থাকলেও বর্তমান সওজর আওতাধীন নেই বলে জানান চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকোশলী পিন্টু চাকমা।
নাজিরহাট পৌরসভা প্রকোশলী রাজিব বড়ুয়া জানান, ব্রিজটি আগে সওজের থাকলেও এখন এলজিইডির আওতাধীন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকোশলী তন্ময় নাথ বলেন, ব্রিজটি যেহেতু হালদা নদীর উপর, সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কয়েকটি অধিদপ্তের ছাড়পত্র প্রয়োজন। আমাদের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্রিজটির স্থান পরিদর্শন করে গেছেন এবং ব্রিজটির ডিজাইনের কাজ চলছে। ছাড়পত্র পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে।