অনলাইন গেম, ফেসবুক আসক্তি ও ছাত্র সমাজ

news paper

পরিমল চন্দ্র বণিক

প্রকাশিত: ২৬-৭-২০২২ রাত ৯:৩৪

22Views

স্কুল-কলেজে মোবাইলসহ অন্যান্য ডিভাইজ কঠোরভাবে নিয়ত্রণ করতে হবে। কোন শিক্ষার্থীর নিকট মোবাইল পাওয়া গেলে মোবাইল নিয়ে নেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনলাইন গেম ও ফেসবুকের আসক্তি কমাতে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাবেশ করতে হবে। কর্মশালায় অনলাইন গেম, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্রের আয়োজন করতে হবে। লাইব্রেরীতে বসে বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী, ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বয়স্কাউট, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের সন্তানকে অবশ্যই বেশী করে সময় দিতে হবে। সন্তান কোথায় কি করছে, কোথায় যাচ্ছে,কার সাথে চলছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।

সপ্তাহে অন্তত একদিন তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। নিজে যদি গেম, ফেসবুকে আসক্ত থাকেন তাহলে তা দ্রুত পরিহার করতে হবে।

নিরাপত্তামূলক অনেক সফটওয়্যার আছে সেগুলো ব্যবহার করুন,যাতে আপনার বাসার সংযোগ থেকে কোনো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা না যায়। সর্বোপরি সরকারকে বন্ধ করতে হবে অনলাইন গেম, বন্ধ করতে হবে অশ্লীল ছবি।

রাতের অন্ধকারে আলোকিত পৃথিবী দেখা, ঘুম ঘুম চোখে রঙিন দুনিয়ায় প্রবেশ ইত্যাদি ছাত্র সমাজ ক্রমেই ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন গেইম বা ইন্টারনেট আসক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যা মাদকের পরিবর্তিত সংস্করণ হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন গেইম বা ইন্টারনেটে অকারনে অতিমাত্রায় আসক্তি।

সন্তানকে শান্ত রাখতে মুঠোফোনসহ নানা যন্ত্রপাতি তাদের হাতে তুলে দেন ব্যস্থ বাবা-মায়েরা। এ থেকে সন্তানের মধ্যে প্রযুক্তি উপভোগ করার অভ্যাস জন্মায় শৈশব হতেই। নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে সন্তানকে সব সময় ঘরে বন্দি রাখতে চান। সে ক্ষেত্রে তাদের হাতে মুঠোফোন-ল্যাপটপ তুলে দিয়ে আপতত স্বস্তি অনুভব করেন ।

কোভিড-১৯ মহামারির কারনে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিস্ঠান বন্ধ থাকায়, অনলাইন ক্লাশের অযুহাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে উঠেছে মোবাইল ফোন, অনেক অভিভাবক তার সামর্থের বাইরে বাধ্য হয়েছে মোবাইল ফোনটি কিনে দিতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলার পর হারহামেশাই মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

অনেক শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন আনায় নিষেধ করায় তাকে নাজেহাল হতে হয়ছে শিক্ষার্থী দ্বারা। ক্লাসে সর্বক্ষণ অনমোযোগি থাকে, ক্লাসে পড়া করে না, একা একা থাকে,বন্ধু বান্ধবদের সাথে মেলামেশা করে না, ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়।

মনোবিজ্ঞানী ও গভেষকরা বলেছেন যে, একান্ত ব্যাক্তগত আবেগ-অনুভূতি যারা শেয়ার করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সমবেদনা দিয়ে থাকেন এ ব্যাপারে উভয়ই অতিমাত্রায় ফেসবুক বা যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত। সপ্তাহে ১৮ ঘন্টা বা তার বেশী যারা গেইম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে থাকেন তাদেরকে আসক্ত বলা যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সকল শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ফাকি দেয়, ঘন ঘন বাথরুমের নাম করে বাথরুমে গিয়ে ফেসবুকে ঢুকে বা গেম খেলে, এমন কি ক্লাশে বসেই ব্যাগের মধ্যে রাখা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ফেসবুকসহ অনলাইন গেম খেলে এরাই অতিমাত্রায় আসক্ত। অনলাইন গেম, ফেসবুক, ইন্টানেটের প্রতি আসক্তি আজকের যুগের একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা ও অভিশাপ।

অন্যান্য নেশার মতোই এটি একটি সর্বনাশা নেশা, যা শিক্ষার্থীর নিজ জীবনকে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে ভয়ংকরভাবে প্রভাবিত করেছে। ভাল শিক্ষার্থীর পরিবর্তে সৃস্টি হচ্ছে মেধাশূন্য শিক্ষার্থী। যারা আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে,সমাজকে নেতৃত্ব দেবে। সে যায়গায় তারা নেতৃত্ব দিতে পারবে না, কারণ তারা সামাজিকভাবে অসুস্থ।

এতে শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা যায় ঘাড় ও কোমরব্যথা, মাথাব্যাথা এবং চোখে অস্বাভাবিক চাপজনিত সমস্যা। মানসিক প্রতিক্রিয়ায় মধ্যে রয়েছে- অনিদ্রা,অতিরিক্ত টেনসন বোধ, বিষণ্নতা, যৌন সমস্যা, অপরাধপ্রবণতা, মনোযোগ কমে যাওয়া। এছাড়া আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা খিটখিটে মেজাজের হয়, মিথ্যা কথা বলে এবং সবার সংগে অহেতুক তর্কে লিপ্ত হয়। স্কুলের রেজাল্ট দিন দিন খারাপ হতে থাকে।

শিক্ষার্থীকে আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক করে। শিক্ষার্থীর বুদ্ধির বিকাশে বাধা দিয়ে সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয়, শিক্ষার্থীর শারীরিক খেলাধূলার সময় কেড়ে নেয়। এতে শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, শিক্ষার্থীরা শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেয়।

একদল অসদচক্র অর্থ বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে পর্নো ছবি ও ভিডিও বানিয়ে তাদের অজান্তে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করছে , এমন কী দেখা যায় অল্প বয়সেই প্রেমের ফাঁদে পড়ে নিজের সম্ভাবনাময় জীবনকে নষ্ট করে, বাবা-মা আত্মীয় স্বজনকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে অথবা বেছে নেয় অত্মহণনের মত পথ।

স্কুল-কলেজে মোবাইলসহ অন্যান্য ডিভাইজ কঠোরভাবে নিয়ত্রণ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাবেশ করতে হবে যাতে করে কোন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন না আনতে পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন শিক্ষার্থীর নিকট মোবাইল পাওয়া গেলে মোবাইল নিয়ে নেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ফেসবুকের আসক্তি কমাতে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা-প্রচার শরু করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এর কুপ্রভাব হতে রক্ষা করা যেতে পারে। কর্মশালায় অনলাইন গেম, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা, পাঠচক্র করা যেতে পারে। লাইব্রেরীতে বসে বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী, ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের বয়স্কাউট, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাবা-মায়ের কাছে শিক্ষার্থীরা বেশী সময় থাকে তাই অনলাইন গেম, ফেসবুকের আসক্তি কমাতে অভিভাবকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সন্তানকে অবশ্যই বেশী করে সময় দিতে হবে।

সন্তান কোথায় কি করছে, কোথায় যাচ্ছে,কার সাথে চলছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। খোলমেলা আলোচনা করে সকল সমস্যা দুরীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

নিজে যদি গেম, ফেসবুকে আসক্ত থাকেন তাহলে তা দ্রুত পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে শিশু যাতে আপনার সামনে মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করে,সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিরাপত্তামূলক অনেক সফটওয়্যার আছে সেগুলো ব্যবহার করুন,যাতে আপনার বাসার সংযোগ থেকে কোনো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা না যায়। সর্বোপরি সরকারকে বন্ধ করতে হবে অনলাইন গেম, বন্ধ করতে হবে অশ্লীল ছবি।

পরিমল চন্দ্র বনিক (প্রভাষক,রসায়ন)
শহীদ সরদার সাজাহান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ,টেকেরহাট,রাজৈর,মাদারীপুর।


আরও পড়ুন