বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে সিগারেটের বিজ্ঞাপন!
প্রকাশিত: ২০-৭-২০২২ দুপুর ১:২৮
দেশে ২০০৫ সালে আইন করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ বিধি লঙ্ঘন করে চট্টগ্রামে কোনো না কোনো কৌশলে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে সিগারেটের প্রচারে চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রকাশ্যে বিক্রি। চট্টগ্রামের আবুল খায়ের গ্রুপসহ নানা তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ।
লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ডের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর ও জেলার অলিগলিতে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অদৃশ্য কারণে এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছেনা এমন অভিযোগ সচেতন মহলের।তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে দ্রুত এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ বিশিষ্টজনের।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশের এলাকায় যত্রতত্র ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করছে তামাক কোম্পানির কর্মীরা। বিক্রি বাড়াতে হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকা, এমনকি স্কুল-কলেজের পাশেও বসছে এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান। ফলে তামাক জাতীয় পণ্য হাতের নাগালে থাকায় ধূমপানে আগ্রহী হয়ে পড়ছে অপ্রাপ্তবয়স্করাও।
এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি (বিএটিসি)। এছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ, নেভী অপশন,নেভী শেখ স্মুক, লাকি স্ট্রাইক, ব্লেক, মেরিস সিগারেট, রেলি, রয়েল, ডারবি সিগারেটের নাম ও দামসহ ব্যানারে উল্লেখ করা হচ্ছে। এমনকি এখানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য (সিগারেট) বিক্রয় করা হয় বলেও প্রচার চালাচ্ছে। শুধু তাই নয় চকলেট, বিস্কুট ও মিনারেল ওয়াটারের মুল্যের সাথেও সিগারেটের মুল্যের তুলনা করে ধূমপানে আকৃষ্ট করছে জনসাধারণকে। আইন ফাঁকি দিতে সঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে চকলেট ও নানা পণ্য।
চট্টগ্রাম শহরের প্রায় প্রতিটি মুদি দোকানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট। প্রকাশ্যে দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব সিগারেটের প্যাকেট। আবার ক্রেতাদের নজরে আনার জন্য ডামি প্যাকেট শো-কেসে রাখা হয়েছে দোকানের বাইরে উন্মুক্ত ও সহজে চোখে পড়ে এমন স্থানে। কোথাও কোথাও। ঝুলছে লোভনীয় অফারের বিজ্ঞাপনের লিফলেটও যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫ এর (ছ) ধারা বিরোধী।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, চাকরির শর্ত অনুযায়ী কোম্পানির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই আমরা এ কাজ করছি। কালা মিয়া বাজার এলাকার সাহেদ নামে এক চা-সিগারেট বিক্রেতা বলেন, ‘সিগারেট কোম্পানির মালিক একদিন আইস্যা দোকান গুছায়া দিয়া গ্যাছে। এই যে বাক্সটা দেখতেছেন এইডা বাইরে থেকে দেইখা বুঝবেন না যে এইডা আসলে একটা ছোট আলমারি। বাইরের দিকে সিগারেটের প্যাকেট লাগানো, ভেতরের দিকে ড্রয়ার আছে অনেকগুলা। না দিলে কই রাখতাম মালসামান, কন?’। সাহেদের পাশেই চা-সিগারেটের দোকান আবদুল মাবুদের। তাঁর দোকানে জাভা ব্ল্যাক সিগারেটের পোস্টার।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে বলছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রতি ১০ জনে ৪ জন দোকানপাটে সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন যেকোনো জায়গায় সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়। সিগারেটের প্রসার বন্ধ করতে আইনে সব ধরনের প্রচারকৌশল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা মানা হচ্ছেনা আর মানাতেও যেন কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকার নেতা নাছির উদ্দীন মহসিন সকালের সময়কে বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে এর কোনো নমুনা বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে দেয়া যাবে না এবং (ছ) ধারায় তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। আইনে ৬ এর (ক) (১) ধারায় আছে অনধিক ১৮ বৎসরের নিচে কোনো ব্যক্তির কাছে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না।
তিনি আরও জানান, একই আইনে ৫ এর ৪ ধারায় উল্লেখ রয়েছে কেউ এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে সর্বোচ্চ তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইন সহায়তা কেন্দ্র চট্টগ্রামের নেতা শফিউল আলম চৌধুরী বাবু সকালের সময়কে বলেন, চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও স্থায়ী দোকানে প্যাকেট ও লিফলেট প্রদর্শন করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করলেও রহস্যজনক কারনে তা বন্ধে ভূমিকা রাখছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো।
এব্যপারে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন ধুমপান একদিকে যেমন সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকী তেমনি পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। একজন অধূমপায়ীর আশেপাশে কেউ ধূমপান করলে উভয়ই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এই ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগটা কঠিন হওয়া উচিত। অবাধে তামাকজাত পণ্যের বিপননে একদিন নষ্ট হয়ে যাবে আপনার আমার সকলের সন্তানের (স্বপ্ন) ভবিষ্যত। তাই কাল বিলম্ব না করে এক্ষনি এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ।