চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড : যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

news paper

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৮-৭-২০২২ রাত ১১:১০

154Views

 বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর অনেকটা নীরবেই চলে গেল। এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা-সমালোচনা নেই। এদিকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামি। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজনকে সম্প্রতি ফেসবুকেও সক্রিয় দেখা গেছে। যদিও পুলিশের খাতায় ‌‘পলাতক’ রয়েছেন দণ্ডপ্রাপ্তরা।
 
এদিকে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার না করায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিশ্বজিতের পরিবার। বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাসের অভিযোগ, রায় ঘোষণার পর তারা পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, আসামিরা কেউ দেশে নেই। অথচ তার জানামতে অনেক আসামি দেশেই রয়েছেন। কয়েকজন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকেন।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এসব আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন উত্তম কুমার দাস।
 
গত ৯ ডিসেম্বর ২০১২ সালে  পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে থাকতেন তিনি।
দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তখন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।
 
নিম্ন আদালতের আদেশে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন।
 
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- এ এইচ এম কিবরিয়া, খন্দকার ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোশাররফ হোসেন ও কামরুল হাসান। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।
 
পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অন্য দুজনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেন, তারা খালাস পেয়ে ছিলেন।
 
 
বাকি ১১ আসামির সবাই পলাতক। এরা হলেন- খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন।তখন তাদের ব্যাপারে রায়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। আসামিদের সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাবেক ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।
 
গত ১৫ জুলাই শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামী আলাউদ্দিন(৩২) কে তার শ্বশুর বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা বন্দর এলাকায় থেকে গ্রেফতার করে বগুড়া পুলিশ। 
 
র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব-৩ এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিবাদ,শীর্ষ সন্ত্রাসী,যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী,ছিনতাইকারী,মানবপাচারকারী,প্রতারক চক্রসহ চাঞ্চল্যকর সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগনের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
 
তেমনি এক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব ৩ জানতে পারে চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ কামরুল হাসান রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য র‍্যাব ৩ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
 
এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি অভিযানিক চৌকস দল গত ১৭ জুলাই ২০২২ তারিখ রাতে রাজধানীর চামেলীবাগ, পল্টন এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ কামরুল হাসান (৩৫) ব্রাহ্মনবাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।যা র‍্যাব-৩ এর একটি উল্লেখ্য যোগ্য অর্জন।
 
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী কামরুল হাসান  জানায় যে,ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে তারা ধাওয়া করে এলোপাতাড়ী আঘাত করতে থাকে। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারপর সে জানতে পারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিৎ এর মৃত্যু হয়েছে এবং উক্ত ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়েছে।এরপর থেকে সে আত্ন গোপনে চলে যায় কামরুল হাসান।
 
কামরুল ১৯৯৪ সালে তার পিতার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। তার পিতার মৃত্যুর পর তারা গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তারা তিন বোন এক ভাই ।বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোন পেশা নেই ।উক্ত আসামীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্রাহ্মনবাড়িয়া,নবীনগর, থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ,অধিনায়ক, র‍্যাব-৩।

আরও পড়ুন