অসময়ে বন্যার পানিতে ফসলের মাঠ প্লাবিত, দুশ্চিন্তায় কৃষক

news paper

মজিবর রহমান, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২৪-৬-২০২২ দুপুর ১১:২১

7Views

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চর এলাকার কয়েকশ বিঘা কাউন ও পাটক্ষেত। ফসল কাটার আগ মুহূর্তে পানি চলে আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদ-নদীর পানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহযোগিতার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দফতরের পাঠানো হবে।

শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে ফুলছড়ি উপজেলা, উড়িয়া, গজাড়িয়া, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায়, নদীবেষ্টিত চরের কয়েকশ বিঘা পাট ও কাউন ক্ষেত পানির নিচে। নৌকায় আধাপাকা কাউন কেটে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। কেউ কেউ উঁচু জায়গায় রাখা কাউনের বোঝা ঘোড়ার গাড়িতে তুলছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার গলনারচরে ৩০ বিধা জমিতে কাউন চাষ করেন রহমান মিয়া। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। আশা ছিল কাউন বিক্রির টাকায় সংসারে সুদিন ফিরবে। কিন্তু নদীর পানি বাড়ায় ডুবতে থাকে তার কাউন ক্ষেত। বেশি মজুরিতে শ্রমিক নিয়েও আট বিঘা কাউন পানিতে তলিয়ে গেছে।

পেপুলিয়ারচরের আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, হঠাৎ নদীতে পানি বাড়ায় গত তিন-চার দিনে আমার ১১ বিঘা জমির পাট তলিয়ে গেছে। অনেক পাটচাষির একই অবস্থা। পাট কাটার আগেই পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।

ফুলছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কাউনচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, আমার সাত বিঘা জমির কাউন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক আশা করে কাউন চাষ করেছিলাম। নদীর পানি আগাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের স্বপ্ন শেষ।

উড়িয়া ইউনিয়নের চরকালাসোনা গ্রামের পাটচাষি আক্তার হোসেন বলেন, এ বছর অসময়ে নদীর পানি বাড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। মাসখানেক আগে টানা বৃষ্টিতে আমার দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত তলিয়ে যায়। পরে চলতি সপ্তাহে কাউন ও পাটক্ষেত তলিয়ে গেছে। আমরা চরের মানুষ সব সময় ক্ষতির মুখে পড়ি। কেউ আসে না খোঁজ নিতে।

ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হান্নান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় পাট ও কাউনক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আর কয়দিন পানি বাড়লে চাষিরা পাট ঘরে তুলতে পারবেন না । চাষিদের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ফুলছড়ি পয়েন্টে থাকা পানির পরিমাপক) কার্যসহকারী আজিজুর রহমান বলেন, হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে গত সাত দিনে ছয়-সাত ফুট পানি বেড়েছে। গত ১২ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ফুলছড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মানিক মিয়া বলেন, এবার ১০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে নদীতে পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের কী পরিমাণ পাটক্ষেত তলিয়ে গেছে সে তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মিন্টু মিয়া জানান, উপজেলার সব নদীর পানি বাড়ছে। ফলে চরাঞ্চলের পাট ও কাউনক্ষেত তলিয়ে গেছে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চরাঞ্চলের তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করব। আগামীতে ক্ষতিপূরণসহ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি সহযোগিতার জন্য কৃষকদের তালিকা করে দফতরে পাঠানো হবে।


আরও পড়ুন