একজন সফল ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট উদ্যোক্তা উসামা হক
প্রকাশিত: ২৩-৬-২০২২ দুপুর ১:১১
বর্তমানে পেইন্টিং জগতে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি এক অন্য রকম মাত্রা যুক্ত করেছে। রঙিন তুলির ছোঁয়ায় বিভিন্ন ফন্টের শৈল্পিক লিখুনীকেই বলা হয় ক্যালিগ্রাফি। বাংলাদেশি তরুন উদ্যোক্তা যিনি ক্যালিগ্রাফি করে দেশ- বিদেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে সুনাম অর্জন করে চলেছেন তিনি হলেন -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি বিভাগে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন উসামা হক।
শখ আর কৌতূহলের বসে শুরু করেছিলেন ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি। কিন্তু অল্প সময়ে ক্যালিগ্রাফিতে সবার নজর কেড়েছেন তিনি। একাধিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডারে তার ক্যালিগ্রাফি, দেশের বাইরে প্রতিযোগিতায় ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছা, পাশাপাশি দেশ- বিদেশের প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। নন্দিত এই ক্যালিগ্রাফার এর নাম উসামা হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
দোহায় অনুষ্ঠিত ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড শীর্ষক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছিলেন উদ্যোক্তা উসামা হক। এছাড়াও আমেরিকার নিউ ইয়র্কের মসজিদে -মসজিদে যাইগা করে নিয়েছে তাঁর ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং। ২০১৯ সালে, বাংলাদেশ চারুশিল্পী আয়োজিত প্রথম জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরুস্কার অর্জন করেছেন তিনি। একই বছর মইনিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত দশম জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হয়েছেন। ২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের ক্যালেন্ডারটি সাজানো হয় উসামার ক্যালিগ্রাফি
মাত্র ৭ বছর বয়স থেকে মাদ্রাসায় পড়া শুরু করেন উসামা হক। মাদ্রাসায় পড়া অবস্থাতেই শখের বশে ক্যালিগ্রাফি শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করার পাশাপাশি ঢাকা আলিয়া থেকে ফাযিল এবং কামিল পড়াশুনা শেষ করেন ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই সিদ্বান্ত নেন ক্যালিগ্রাফিকে পেশাদারিত্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সেই থেকেই বিভিন্ন কর্মশালায় যুক্ত হয়ে নিজের দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলেন।
উদ্যোক্তা উসামা আরবি বিভাগে পড়াশুনা করলেও ক্যালিগ্রাফির বিষয়বস্তু শুধু মাত্র আরবিতে সীমাবদ্ধ রাখেননি। আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিতেও কাজ করেন তিনি। উদ্যোক্তা উসামা ক্যালিগ্রাফি করছেন দীর্ঘ ১৫ বছর। বর্তমানে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং এর পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফি শেখাচ্ছেন। জলরং এবং এক্রেলিক রং মূলত এই দুই মাধ্যমে তিনি পেইন্ট করেন এবং ক্যালিগ্রাফির যতগুলো ধরন আছে সবগুলো নিয়েই তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
অনলাইন প্লাটফর্ম উসামা’স ক্যালিগ্রাফি এর মাধ্যমেই মূলত তাঁর কাজগুলো সেল করেন ,পাশাপাশি নতুন - নতুন ক্যালিগ্রাফি উদ্যোক্তা ও তৈরি করে চলেছেন বাংলাদেশি তরুন এই উদ্যোক্তা । দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই তাঁর কাজ পৌঁছে গেছে, এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে
সৌদি, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা,কানাডা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছে গেছে উদ্যোক্তা উসামা হকের ক্যালিগ্রাফি।
উদ্যোক্তা উসামা হক বলেন, “ছোট থাকতে আমাদের অনেককিছু ভালোলাগে কিন্তু বড় হওয়া পর্যন্ত বা বড় হওয়ার পর সেটা আর টিকে থাকেনা, কিন্তু ক্যালিগ্রাফির প্রতি ছোট থাকতে আমার ভালোলাগা কাজ করতো বড় হওয়ার পরেও সেই ভালোলাগা বরং আরো বেড়েছে, আমি মনে করি যেই কাজ আমাদের করতে ভালোলাগে এবং যেটাতে আমি দক্ষ সেটাই প্রফেশনালি নেওয়া উচিত এবং সেই ভাবনা থেকেই ক্যালিগ্রাফিকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি”।
“গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক বিড়ম্বনার স্বীকার হতেই হয়। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শেখার কোনো ইন্সটিটিউশন নেই, যার দরুন সবাই ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকেই শিখছে, বিশেষ করে জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্ররা আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রতি আগ্রহ থাকলেও ইন্সটিটিউশন স্বল্পতার কারণে ক্যালিগ্রাফি শিখতে পারছেনা, “ সবাই যেনো সহজভাবে ক্যালিগ্রাফি শিখতে পারে সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে বহিঃবিশ্বের কাছে ক্যালিগ্রাফি দিয়ে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই” – এমনটাই বলছিলেন উদ্যোক্তা উসামা হক।
নবীন তরুন উদ্যোক্তা উসামাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বাংলাদশের ক্যালিগ্রাফি শিল্প।