শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হলেন সাভার সরকারি কলেজের সাইদ হাসান

news paper

আহ‌মেদ জীবন, সাভার

প্রকাশিত: ২৩-৬-২০২২ দুপুর ১১:৩৯

4Views

ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু সে সুযোগ না হলেও একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান ড. একেএম সাইদ হাসান। এতে করে অন্তত আংশিক স্বপ্ন পূরণ হয় তার। আর এই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আজ তিনি স্বপ্নের স্বর্ণশিখরে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কলেজ পর্যায়ে দেশের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। 
 
ড. একেএম সাইদ হাসান সাভার সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও  বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি নওগাঁ জেলার বাদলগাছি থানার কাশহাইল গ্রামের চিকিৎসক পিতা মৃত ডা. মো. মজহার-উল হক ও মিসেস শাহানারা হক দম্পতির ঘরে ১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। 
 
বুধবার (২২ জুন) বিকেলে দেশসেরা এই শিক্ষকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি দেশসেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে দৈনিক সকালের সময়কে তার অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। এ কারণে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ হয়নি। পরে ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ সাভার সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। আজ আমি দেশসেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছি। ভাবতেই অন্যরকম এক ভাললাগা কাজ করছে। আমি আজ ভাবতেই পারছি না যে, আমি দেশসেরা শ্রেণি শিক্ষক।
 
তিনি বলেন, শিক্ষকতা করতে হলে অবশ্যই দরদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হবে। ভেতর থেকে দরদ দিয়ে পড়াতে হবে। কমার্শিয়ালি কোনোভাবেই পাঠদান করা যাবে না। আমার শিক্ষার্থীরা আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবে। শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠদান করে যাচ্ছি। আমার যে দায়িত্ব সেটা আমি পালন করার চেষ্টা করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব পালন করছি। তা না করলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। 
 
তিনি আরো বলেন, চিন্তা করতে হবে সৃষ্টিকর্তা টিচার বানিয়েছেন, টিচার হিসেবে আমার কতটুকু দায়িত্ব। আমি প্রজেক্টর ব্যবহার করে পাঠদান করেছি, যা খুব কম শিক্ষকই করছেন। আমার প্রায় ২৬টি পাবলিকেশন্স, যার মধ্যে একটি বই রয়েছে। বইটি জার্মানি থেকে পাবলিস্ট করা। 
 
শিক্ষাজীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষা জীবনে ওরকম কষ্ট করে পার করি নি। বাবা সরকারি ডাক্তার ছিলেন। সে কারণে তিনি ছেলেকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু হয়নি। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে সুবিধা হয়, তা বুঝে উঠতে পারেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভালো লেগেছিল তাই সেখানে ভর্তি হয়েছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সুন্দর, সেই সুন্দরের মায়ায় পড়েছিলাম। 
 
অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি কখনোই ভাবিনি' যে আমি দেশ সেরা হব, রেজাল্ট ফলাফল দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটা কল্পনাও করিনি। কাগজপত্র ফাইল সব গাড়িতে রেখে এসেছিলাম। আমার কিছু পেপারস জমা দেইনি ভেবেছিলাম আর মনে হয় হবো না। যে কারণে এগুলো লাগবে না, তাই গাড়িতে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু একজন টিচারের অনুরোধে ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। যখন আমাকে সেরা ঘোষণা করা হলো তখনও আমি ক্ষণিকের জন্য বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি। 
 
ড. একেএম সাইদ হাসান বলেন, আমি গতকাল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২ এর জাতীয় পর্যায়ের সেরা শ্রেণী শিক্ষকের পুরষ্কার নিয়েছি। এটা সত্যিই একটা স্মরণীয় দিন। এই দিন সমস্ত শিক্ষকদের আসুক এটা কামনা করি। 
 
দেশের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সব সময়ই পাঠদান করতে হবে দরদ দিয়ে। কিছু শিক্ষিত ও উন্নত মানের শিক্ষক কিন্তু অনেক জানেন। কিন্তু কৌশলগত কারনে ঠিকমত পাঠ দান করতে পারেন না। অনেক শিক্ষক আবার কমার্শিয়ালি পাঠ দান করেন। এই মানুষিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষকতা পেশা কমার্শিয়ালি নেওয়া যাবে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠ দান করতে হবে। তাহলেই একজন শিক্ষক প্রকৃত শিক্ষক হবেন। হবেন দেশ সেরাও। 
 
সাভার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইমরুল হাসান বলেন, আমাদের কলেজের একজন শিক্ষক দেশ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। এটা শুধু আমাদের কলেজের সুনাম বয়ে আনে নি, বরং সারা সাভারের সুনাম তিনি কুড়িয়েছেন। আমরা আমাদের কলেজে এমন একজন শিক্ষক পেয়ে সত্যিই গর্বিত। 
 
প্রসঙ্গত, সেরা শিক্ষক নির্বাচনে প্রথমে কলেজ থেকে একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি যাচাই বাছাই করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করে উপজেলায় পাঠায়। সেখানে বিভিন্ন কলেজ থেকে আসা শিক্ষকদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ায় বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দেশের ৮টি বিভাগ থেকে ৮ জন এবং ঢাকা মহানগরকে একটি বিভাগ ধরে ১ জনসহ ৯ জনের মধ্যে প্রতিযোগীতা হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয় যাচাই বাছাই করে ড. একেএম সাইদ হাসানকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত করা হয়। 

আরও পড়ুন