সাভারে ৩ সাংবাদিককের ‘অণ্ডকোষ’ ছিঁড়ে হত্যার হুমকি

news paper

আহ‌মেদ জীবন, সাভার

প্রকাশিত: ২৫-৫-২০২২ দুপুর ১২:৩৪

47Views

‘কিছু জিনিস তো আমি মস্তাানি কইরাই করি, কি কইবা? হুনো, হুনো (শুনো) তুমরা রেকর্ড কইরা নিয়া যাও। জাহিদ, নাদিম আর মইত্যা চুরারে আমার পোলাপান যেইহানে (যেখানে) পাইব প্লাস দিয়া টাইন্যা ‘বিচি’ (অন্ডকোষ) ছিঁড়া হালায়া দিব। এইডাই আমার প্রক্রিয়া। ওরা কোন সময় কোথায় যায়, কহন কী করে টাইম টু টাইম আমার লোক খবর দেয়। আমি ডিক্লার।’ মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সাভার প্রেসক্লাব বেদখল ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা সভায় সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুুরুল আলম রাজীব তিন সাংবাদিকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন। সম্প্রতি এ ঘটনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

তিন সাংবাদিক হলেন- বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান, বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন ও দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক সাভারের মতিউর রহমান ভান্ডারী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রেসক্লাবের এক নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক মাস আগে সাভার মডেল কলেজ ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী সাভার প্রেসক্লাবে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। পরে তারা ঘণ্টাব্যাপী তাগুব চালিয়ে নির্বাহী কার্যালয়ে ‘ওয়াসিল উদ্দিন পাঠাগার’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রেসক্লাব দখল করে নেয়। প্রয়াত ‘ওয়াসিল উদ্দিন’ সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের বাবা। এ বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে রাজীবের সঙ্গে আলোচনা করেও কোনো ফল পাননি প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা। 

মঙ্গলবার দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে রাজীব বলেন, আমার মনে হয় সমস্যা সমাধানে আমার খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে জাহিদ, নাদিম আর মইত্যা (মতিউর রহমান) চোরারে বহিস্কার করতে হবে। এই তিনজনকে বাদ দিয়া তুমরা আমার কাছে আসো। এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, গঠণতন্ত্র অনুযায়ী বিনা কারণে আমরা তাদের বহিষ্কার করতে পারি না। জবাবে রাজীব বলেন, আমারে যদি প্রক্রিয়া বোঝাও তো প্রক্রিয়া দিয়া করোগা নির্বাচন। এসব প্রক্রিয়া মিথুনরাও বোঝে, আমিও টুকটাক বুঝি। 

তিনি বলেন, ‘এইড্যা কিয়ের লাইগ্যা আমি কইবার যামু? তোমাগো একটু বুঝাই। আমি কইছি, ইলেকশনের দরকার নাই। গোবিন্দ আচার্য্য, জিয়াউর রহমান ও রওশন আমার পরিবাদের সদস্য। কাজেই এই তিনজনকে সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করে দেই। আমার মনে হয় ইলেকশনের আর প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে আমি যদি সবাইকে ডেকে বলে দেই তাতে কেউ সাউন্ড করার সাহস পাবে না। এসব ভেবে আমার বাবার নামে সাভার প্রেসক্লাবে যে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল কয়েকদিন আগে, আমি সেই সাইবোর্ড নামিয়ে দিয়েছি। আমি এটা না নামাইলে পৃথিবীর কোনো শালা নামানোর সাহস পাইত না।’

চেয়ারম্যানের এসব কথোপোকথনের অডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।  এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান বলেন, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্য আমি কখনই আশা করিনি। মন্তব্যের অডিও ফেসবুক দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় আমার দৃষ্টিতেও এসেছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন- বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের আচরণ আর ভাষা শুনে আমি আশ্চর্য হই। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সংবাদকর্মীদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির পর থেকে আমি আমার পরিবাদের সদস্যদের নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাংবাদিক বলেন, রাজনৈতিক নেতারা জমি দখল করে। এমন অসংখ্য সংবাদের প্রতিবেদন আমরা করেছি কিন্তু প্রেসক্লাব দখল করে আ’লীগ নেতার বাবার নামে পাঠাগার করার ঘটনা দেশে বিরল। 

উল্লেখ্য, দুই বছর আগে করোনাকালীন ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশ হয়। এরপর সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব যুগান্তরের ওই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেন। এবার প্রকাশ্যে প্লাস দিয়ে ‘অণ্ডকোষ’ ছিঁড়ে ফেলে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।


আরও পড়ুন