হার না মানার গল্প
দীর্ঘ বিরতির পর আবারো অভিনয়ে আদিত্য আলম
প্রকাশিত: ১৪-৫-২০২২ রাত ১০:৯
দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি আবার অভিনয়ে ফিরেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা, নাট্যকার ও পরিচালক আদিত্য আলম।
তবে আদিত্য আলমের এই বিরতি ইচ্ছাকৃত নয়। বিখ্যাত এই অভিনেতার জীবন নাটক কিংবা সিনেমার গল্পকে হার মানাবে। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর তার ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য রিক্সায় নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা সিটি কলেজের সামনে মূল সড়কে উঠার সাথে সাথে একটি বাস তাদের বহনকারী রিক্সাটিকে সজোরো ধাক্কা দেয়। মেয়ে গুরুতর আঘাত না পেলেও আদিত্য আলম রিক্সা থেকে ছিটকে পড়ে কলেজের দেয়ালে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যান।
উপস্থিত লোকজন গুরুতর আহত আদিত্য আলমকে প্রথমে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। বাড়িতে সংবাদ দেবার পর তার স্ত্রী হাসপাতালে ছুটে এসে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানতে পারেন ইতিমধ্যে আদিত্য আলম ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। পপুলার হাসপাতালে তিনি কোমায় চলে যান।
অতপর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকার পর পরবর্তীতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রায় ১৬ মাস পর টানা চিকিৎসার পর তার সংজ্ঞা ফেরে। কিন্তু পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন কাউকেই তিনি চিনতে পারছিলেন না তিনি। চিকিৎসক এবং স্ত্রী-সন্তানদের অক্লান্ত সেবা- সু-চিকিৎসা করার পর সকলের দোয়ায় আদিত্য আলম সুস্থ্য হন এবং স্মৃতিশক্তি ফিরে পান।
সুস্থ হয়ে প্রথমে প্রখ্যাত নির্মাতা নজরুল কোরেশী নির্দেশিত কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি সরকারি বিজ্ঞাপনচিত্রে, ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেন। ঈদের খন্ড নাটকসহ বেশকিছু নাটক ও শর্টফিল্মে ইতিমধ্যে কাজ করেছেন তিনি। সরকার মিল্টন পরিচালিত একটি খন্ড নাটকে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন পরিচালক তার সাথে কাজের ব্যাপারে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
সত্তুরের দশক থেকে আদিত্য আলম নিজ জেলা নীলফামারীতে শিশু নাট্যশিল্পী হিসেবে বড়দের সাথে অভিনয় শুরু করেন। পরে নিজেই একটি নাটকের দল গঠন করেন। সেখানে সব নাটকে তিনি অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকায় এসে প্রথমে দৃষ্টিপাত, কুশীলব ও পরে আরণ্যক নাট্যদলে যুক্ত হয়ে মঞ্চ নাটকে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন।
১৯৮৯ সালে খ্যাতিমান পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের সিনেমা নদীর নাম মধুমতি দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু হয়। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ও নাট্যনির্মাতা প্রয়াত আমজাদ হোসেন পরিচালিত অধিকাংশ সিনেমা ও নাটকে একটানা অভিনয় করেন তিনি। পরবর্তীতে দেশের অনেক খ্যাতিমান পরিচালকের বিকল্পধারার চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন আদিত্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- প্রয়াত আজিজুর রহমান, বেলাল আহমেদ, হাফিজ উদ্দিন, মতিন রহমান, আবু সাইয়ীদ, নার্গিস আক্তার ও ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড এর অধিকাংশ নাটক ও সিনেমাতে আদিত্য আলম অভিনয় করেছেন। তৎকালীন বাংলাদেশ টেলিভিশনের দর্শকপ্রিয় বেশ কিছু নাটক পরবর্তীতে বিভিন্ন প্যাকেজ নাটক-টেলিফিল্ম এবং চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে সুনামের সাথে অভিনয় করেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। ওপাড় বাংলার পরিচালক বিশ্বেন্দু নাথের "মাই ফাদার'স সু" নামে একটি সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন প্রধান চরিত্রে।
বর্তমানে তার বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদপ্তর আয়োজিত জাতীয় বৃক্ষ রোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২ এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ পেয়েছেন। যা আগামী ০৫ই জুন থেকে শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলবে। এখানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মেলা উপলক্ষ্যে বিশেষ টক শো’র অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করার দায়িত্ব তাকে অর্পণ করা হয়েছে।