পশ্চিমাঞ্চল রেল

যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ

news paper

শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান

প্রকাশিত: ৯-৩-২০২২ দুপুর ২:৫২

6026Views

‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’ প্রবাদ বাক্যটি পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী পদটির জন্যই প্রযোজ্য। এই পদে যিনি আসেন তিনিই জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে। মাত্রাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে আবার ঊর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজও করেন তারা। পরে তারাই আবার পান আরো গুরুত্বপূর্ণ পদ। 
 
বিভিন্ন সময়ে এই দপ্তরটিকে ঘিরে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি বা অনিয়ম বন্ধ হয়নি। বরং পদ্ধতি বদল করে দুর্দান্ত গতিতে চলছে দুর্নীতি। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তার দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছে দুদক। এ অবস্থার মধ্যে তার পদোন্নতিও হয়েছে, তিনি এখন রেলের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি। এরপর আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতি সংবাদ তো সবার জানা। এরপর সেই পদে আসেন প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী। এবার তার বিরুদ্ধেও উঠেছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ।  
 
জানা যায়, তার ব্যালাস্ট (পাথর) সরবরাহে অনিয়মের কমিশন গ্রহণসহ নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এখন মনিরুল ইসলাম ফিরোজী ইজিবির নামে করছেন ভাওতাবাজি। কারসাজি করে পছন্দের ঠিকাদারকে দেয়া হচ্ছে কমিশনভিত্তিক কাজ। যোগদান করে একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। কোটি টাকার ফাইল পাসের নামে এই টাকা দিয়েই তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। সাবেক ডিজি শামসুজ্জামানের আত্মীয় পরিচয়ে আফসার বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার রেল অঙ্গনে বাগিয়ে নিয়েছেন অনেক কাজ৷ সেই কাজেও হয়েছে দুর্নীতি। এরপরও সেই দুর্নীতিবাজকে পাথর সরবরাহের কাজ দিয়েছেন বর্তমান প্রকৌশলী। এই সংবাদও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রকাশ হয়েছে। তবে সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রীর ভাতিজা পরিচয়ে আরো দুজন ঠিকাদারকে একের পর এক কাজ দিচ্ছেন তিনি।
 
এদিকে, পাকশির দুই ঠিকাদার সিন্ডিকেটে জিম্মি প্রকৌশলী, এমন কথাও উঠেছে। কমিশনে গুটিকয়েক ঠিকাদার ঘুরে-ফিরে কাজ করছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত নিম্ন দরদাতা ঠিকাদাররা। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ও মানসম্পন্ন কাজ।
 
ওপেন টেন্ডার নামে গোপন ফাইল তৈরি, প্রকাশিত টেন্ডার চালাকির সাথে পারচেজ করাসহ ইজিপি ও আরএফকিউতে শুধুমাত্র কমিশন বাণিজ্য হচ্ছে কোটি কোটি টাকার। প্রতিটি কাজে প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজীর পক্ষে কাজ করেন টিএসও আরিফুল ইসলাম। তিনি মূলত সকল কাগজপত্র এমনকি প্রধান প্রকৌশলীর কর্মকাণ্ডের নথিপত্রও সংগ্রহ করে রাখেন। কোন ঠিকাদার কত পার্সেন্ট কমিশনে কাজ পাবেন তাও ঠিক করে দেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি দপ্তরটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।  
 
এদিকে প্রতিটি কাজে প্রধান প্রকৌশলী নেন ১০% কমিশন, বাকি ৫% কমিশন যায় টিএসও, এও, পিএ-সহ অন্যদের পকেটে।অভিযোগ আছে, প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী সপ্তাহে একদিন অফিস করেন। তিনি কারো ফোন রিসিভ করেন না।
 
এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর দুদিন প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজীর অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি বলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 
 
জানতে চাইলে টিএসও আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। স্যারের আদেশেই আমি সব কাজ করি। আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। আপনারা স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন