প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গরু-মহিষের গাড়ি

news paper

মজিবর রহমান, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৮-১-২০২২ দুপুর ১১:১০

183Views

আজকাল ‍আর গরুর গাড়ি দেখা যায় না বললেই চলে, অপরূপ বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যের ঐতিহ্য ‍এই গাড়ি। ফুলছড়ি উপজেলায় এক সময় গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাহন ছিল গরু বা মহিষের গাড়ি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা। সময়ের ব্যবধানে এখন এই গরুর গাড়ি স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামে এখনো দেখা মেলে গরু আর মহিষের গাড়ি। এসব গরুর গাড়ি যারা চালান তাদের বলা হয় গাড়িয়াল। 
 
এখনো গ্রামবাংলার জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের প্রিয় বাহন দুই চাকার গরুর গাড়ি থাকলেও আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়া আর ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে হার মেনে বিলুপ্তপ্রায় এ পেশাটি। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। আবার অনেক শহরে শিশু গরুর গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে এটা কী?
 
যুগ যুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল বপন ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল গরুর গাড়ি। গরু গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা মহিষের টানা এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে।
 
কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক মানে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযান চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীরগতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমান যুগে মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, সিএনজি, অটোরিকসা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো- এতে কোনো জ্বালানি লাগে না, ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না।
 
রিকসা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরুর গাড়িও একটি পরিবেশবান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। শব্দ দূষণ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এসব কিছুই এই যানে ব্যবহার হয় না। এই গরুর গাড়ি ধীরগতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও নেই। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
 
হয়তো গতি তার বেশি  ছিল না কিন্তু পল্লী গ্রামের কর্দমাক্ত পথ যাওয়ার সময় রাস্তা ও চাকার ঘর্ষণের আওয়াজ আর গাড়িয়ালের গলার গান এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করত। বিভিন্ন কবি, লেখকের কবিতা-গল্প-উপন্যাসের মধ্যেও আমরা গরুর গাড়ির কথা পাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাট কবিতা বা শরৎচন্দ্রের দেবদাসে তার পার্বতীকে দেখার জন্য শেষবারের মতো এই গরুর গাড়িতেই আসছিল। গাড়ির মধ্যে তার মৃত্যু পড়ে মন ভার‍াক্রান্ত হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকের গল্পতেও দেখতে পাই। আর কাল তো থেমে থাকে না। তাই অন্যকে জায়গা দেয়ার জন্য এই গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজ সেসবই ইতিহাস।

আরও পড়ুন