মহিলা মেম্বার নাছিমার বিরুদ্ধে আশ্রয়নের ঘর বিক্রির টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ

news paper

নাঈম হোসেন (রায়পুর)

প্রকাশিত: ৩০-৯-২০২৫ দুপুর ১:৫১

45Views

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আওমী নেত্রী ও ৭ নং বামনী ইউনিয়ন (১,২,৩)ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার নাছিমা আক্তারের বিরুদ্ধে মুজিব-বর্ষের উপহার ঘর বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার বামনী বাংলাবাজার পাল বাড়ি আশ্রয়ন কেন্দ্রের ৩৭নং বামনি মৌজায় ১নং খতিয়ানভুক্ত ৪৪৫/২২দাগে মুজিববর্ষে স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ( শূন্য দশমিক শূন্য  দুই শূন্য শূন্য) একর জমিসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকা ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা উপহারের ৩৮নং বাড়িটি দু'দফায় বিক্রি করে মহিলা মেম্বার নাছিমা আক্তার ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী স্বামী পরিত্যক্তা ঐ অসহায় মহিলা কেঁদে কেঁদে গণমাধ্যমকে বলেন , " আমার স্বামী আমাকে রেখে চলে গেছে।  আমি মানুষের বাড়ি-বাড়ি কাজ করে কিছু টাকা জমা করে বছর দেড়েক পূর্বে ঘরের মালিক কুলসুমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ৩৮ নম্বর ঘরটি ক্রয় করি। ঘরে উঠার পরে মহিলা মেম্বার নাছিমা আক্তার এসে বলেন,  ওনার কোঠার ঘর,  তাই ঘরে থাকতে হলে নাছিমা মেম্বারকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।  ওনারা আওয়ামীলীগ পরিবার। টাকা না দিলে আমি ঘরে থাকতে পারবোনা, তাই বাধ্য হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে কাজ করে মেম্বারকে ২০ হাজার টাকা দেই। আপনাদেরকে জানিয়েছি বিষয়টি মেম্বারের কাছে যাওয়ার পরে আমি এখন অনেক চাপে আছি। এঘরটি থেকে যদি আমাকে বের করা হয় তাহলে আমার মাথা গোঁজার কোন  ঠাঁই থাকবে না। তাই আমি এটা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করতে চাইনা। একটা ঘরের জন্য চেয়ারম্যান,  মেম্বার সহ অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কেউ আমাকে একটা ঘর দেয়নি। সরকারি ঘর না বুঝে কিনেছি,  এখন কয়েকদিন পরপর বিভিন্ন লোকজন এসে নানারকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এখন এই একমাত্র সম্বল ঘরটা থেকেও বের হওয়ার শংকায় ভুগছি।  আমার স্বামী নেই,  কেউ নেই, কোথায় যাবো? যেন আমাকে এই ঘরটা থেকে বের হতে না হয় তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি বলে ফের কাঁদেন ভুক্তভোগী কিরন।"

ঘরটির বিক্রেতা কুলসুমা আক্তার বলেন, " মহিলা মেম্বার নাছিমা আক্তার আমাকে ঘরটি দিতে ৫০ হাজার টাকা দাবী করছিল। অনেক অনুনয় বিনয় করে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে  সরকারী ঘরটা পাই। নিজের প্রয়োজনে ফের ঘরটি কিরনের কাছে বিক্রি করি। নাছিমা মেম্বার কিরন থেকেও ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।  আমরা গরীব অসহায়,  ওনারা আওয়ামীলীগ ক্ষমতা দেখিয়ে একটা ঘর থেকে দু'দফায় দু'জন থেকে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।  আমি আমার টাকাটা ফেরত চাই। "

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুধু ঐ ঘরটি ছাড়াও ওই আশ্রয়নে ২২ ও ৯৩,  নম্বর ঘরটি সহ অসংখ্য ঘর বিক্রি করা হয়েছে। 

আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দারা বলেন, " আওয়ামিলীগ দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাদের ঘর দরকার নেই টাকার বিনিময়ে তাদেরকে অসংখ্য ঘর দিয়েছেন।  অনেক ঘরে এখন কেউ থাকে না। অনেকে মোটা অংকের টাকায় ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।  অথচ আমাদের মধ্যে এমন অনেক অসহায় পরিবার রয়েছে,  যাদের থাকার মতো কোথাও জায়গা নেই। চেয়ারম্যান,  মেম্বারসহ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটা ঘর পাওয়া যায়নি।  আমাদের দাবী যাদের ঘর দরকার নেই এমন লোক চিহ্নিত করে, তাদের ঘরগুলো অসহায় পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হোক। "

জাহানারা বেগম নামে একজন অসহায় বৃদ্ধা বলেন,  " আমার থাকার মতো কোথাও জায়গা নেই,  যে ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছি।  সে ঘরটি অন্য একজনের নামে।  ঘর পাওয়ার পর থেকে সে কখনো ঘরে আসেনি। এখন ঘর কেনাবেচা হচ্ছে শুনে, ঘরের মালিক এসে ঘর বিক্রি করার চেষ্টা করছে,  আমাকে বের হয়ে যেতে বলছে, এখন আমি কোথায় থাকবো? যাদের ঘর দরকার না,  তারা ঘর পায়!  আর আমার মতো জনম দুঃখীনীরা কোথাও গিয়ে একটা ঘর পাচ্ছি না। "

এছাড়াও ভূমি উন্নয়ন করের জন্য এক বছরে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুই বছরের জন্য ২০ টাকার রসিদ দিয়ে ১০০ শত টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করেন আশ্রয়নে বসবাসরত ভুক্তভোগীরা।"

এবিষয়ে বামনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্তব্যরত তহশিলদার সুমি আক্তার অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে  বলেন, " আমি এক বছরের জন্য ঘর প্রতি ১০ টাকার বেশি নেইনা। তবে আউটসোর্সিং এর কাওছার হয়তো ওনাদের থেকে কম্পিউটার খরচের জন্য বাড়তি টাকা নিয়েছেন কীনা তা আমি অবগত নই।  কাওসারও  এখন থেকে আর এ অফিসে  বসবে না। "

এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন দিয়ে কল রিসিভ না করায় ঘর বিক্রির টাকা আত্মসাৎকারী মহিলা মেম্বার নাছিমার বাড়িতে গিয়েও তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। "

উপরোক্ত ঘর বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান খাঁন বলেন, " বিষয়টি আমি অবগত।  রায়পুরে যতগুলো আশ্রয়ন কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে অসংখ্য ঘর বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নিতে  বিক্রি করা ঘরগুলো বাতিল করার জন্য ইতিমধ্যেই ডিসি অফিসে জানিয়েছি। ডিসি অফিস খুব শীঘ্র ব্যবস্থা নিবে। আর কোন মেম্বার ঘর বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। "


আরও পড়ুন