পাটের দামে ফুরফুরে মেজাজে বারহাট্টার কৃষকরা

news paper

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯-৯-২০২৫ দুপুর ৩:২৮

57Views

বরাবরের তুলনায় এবার এবার পাটের উৎপাদন কম হলেও বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন বারহাট্টার পাট চাষিরা। খরার কারণে জমিতে বীজ বপন ও জাগ দেওয়ার সময় চিন্তায় পড়তে হয়েছিল কৃষকদের। অবশেষে সব প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে পাট চাষে জয় হয়েছে কৃষকদের। গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে পাটের দাম বেশি পাওয়ায় হাসি ফুটেছে পাট চাষিদের মুখে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও পাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাট চাষীদের কেউ পাট ধোয়া কেউবা পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ আবার রাস্তার ধারে সারি বেধে পাটকাঠি শুকাচ্ছেন। পাট চাষাবাদের বিষয়ে কথা হলে পাটের ফলন ও দামে স্বস্তির কথাই জানিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজার, মধ্য বাজার, বাউসী বাজার, নৈহাটি বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে নতুন পাট কেনাবেচার ধুম। পাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় বাজারগুলো উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩ শত থেকে ২ হাজার ৯ শত টাকায়।

উপজেলার ডেমুরা গ্রামের কৃষক তপন সরকার, খৈকোনা গ্রামের হারেছ মিয়া, রায়পুর গ্রামের জসিম, অমর মনোরঞ্জন দাসসহ অন্যান্য এলাকার পাটচাষিদের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, পাট চাষাবাদ করে একই জমিতে তারা রোপা আমন চাষ করছেন। পাটের ভালো ফলন ও দামে খুশি তারা। এখন পাট বিক্রির টাকা দিয়ে তারা আমন চাষের খরচের যোগান দিচ্ছেন। তাছাড়া এবার পাটকাঠিরও চাহিদা ও দাম মোটামুটি ভালো। তাতেও বাড়তি লাভ হবে বলে জানান এলাকার কৃষকরা।

তারা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে ২০০ টাকার মতো বেড়েছে। এছাড়া খরার কারণে এবার পাটের ফলনও কম হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ ছিল ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এবার প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। এ বছর বিঘা প্রতি পাটের ফলন ৮ থেকে ১০ মণ হয়েছে। মন প্রতি ২ হাজার ৫ শত থেকে ২ হাজার ৯ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাট। ফলন কম ও উৎপাদন খরচ বেশি হলেও পাটের দাম ভালো হওয়ায় এবার তারা লাভের মুখ দেখছেন।

বারহাট্টা সদর হাটে পাট বিক্রি করতে আসা কয়েজন পাটচাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, পাটের চাহিদা ও পাটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করে আসছেন তারা। প্রথমে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট পচানোর জন্য খালবিলে পানি না থাকায় পাট কাটতে দেরি হয়ে গেছে। অবশেষে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত ও পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট পানি পাওয়ায় পাটগাছ থেকে উন্নতমানের আঁশ পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

উপজেলার ফকিরের বাজার ও নৈহাটি হাটে পাট কিনতে আসা পাট ব্যবসায়ী জামিরুল হক ও শামাল মিয়া বলেন, 'গত বছর কম দামে পাট বিক্রি হলেও এবার পাটের বাজার বেশ ভালো। বাজারে কৃষক ও ব্যবসায়ী দুই–ই খুশি। এবার এলাকায় পাটের ফলন খারাপ না হলে কৃষকের লাভ আরও বেশি হতো।'

উপজেলা পাট অধিদপ্তর জানিয়েছে, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিজেআরআই (রবি-১) জাতের পাটবীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। পাট চাষাবাদের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুজ্জামান আজাদ জানান, উপজেলায় এবার প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাট চাষাবাদ করেছেন। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ২’শ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পাটবীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। পাট চাষাবাদে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। 'কৃষকরা এবার পাটের ভালো ফলন পেয়েছেন। এবার আবাদ কিছুটা কম হলেও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে কৃষকেরা বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।'


আরও পড়ুন